Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সখিপুরে ফসলি জমিতে কারখানার কেমিক্যাল বর্জ্য শত শত কৃষকের পাকা ধান নষ্ট

প্রতিবাদে মানববন্ধন

সখিপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২০, ২:২৯ পিএম

টাঙ্গাইলের সখিপুরে ‘মালিহা পলিটেক্স ফাইবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড কারখানার পানি ও বর্জ্যে মরে যাচ্ছে শত শত কৃষকের ফসলি জমির পাকা ধান। ওই কারখানার দূষিত পানি ও বর্জ্যে উপজেলার ঘেঁচুয়া, গাবগাইছার চালা, পাটজাগ, বংশীনগর, বড়চালা ও ইন্নত খার চালা এ ছয়টি গ্রামের দুই শতাধিক কৃষকের কয়েক শত একর জমির ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, কারখানার দূষিত পানি ও বর্জ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। প্রতিবাদ করলে পুলিশের ভয়। দ্রুত সময়ে কারখানার দূষিত পানি ও বর্জ্য বন্ধ করা না হলে সম্প্রতি ওই কারখানা বন্ধে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।আজ মঙ্গলবার(১০নবেম্বর/২০) ক্ষতিগ্রস্থ ঘেচুয়া এলাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,যাদবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতোয়ার,টাঙ্গাইল জেলা বেলা প্রতিনিধি গৌতম চন্দ্র চন্দ,যাদবপুর ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি মো.বিল্লাল হোসেন,সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম,স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান আক্কাস প্রমুখ।

ভুক্তভোগীরা মালিহা কারখানার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন এবং রোপিত শস্যের ক্ষতিপূরন দাবি করেছেন।

সোমবার সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বছরখানেক ধরে উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ঘেঁচুয়া গ্রামে ‘মালিহা’ গ্রুপের ‘মালিহা পলিটেক্স ফাইবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড’ নামের কারখানাটিতে পুরাতন প্লাস্টিকের বোতল গলিয়ে সুতা তৈরি করা হচ্ছে। পানি ও বর্জ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করায় উৎপাদন শুরুর পর থেকেই ওই কারখানার পানি ও বর্জ্য ঘেঁচুয়া গ্রামসহ আশপাশের ছয়টি গ্রামের কয়েক শত একর তিন ফসলি জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। ওই জমিতে পর্যায়ক্রমে আমন, ইরি ও সরিষা চাষ হয়। কিন্তু গত এক বছরে ওইসব এলাকার কৃষকরা কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারছেন না। এবারের আমনের পাকা ধানও তাদের ঘরে উঠছে না। হতাশা ও দুঃচিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। আবাদি জমি ঘেঁষা আশপাশের পুকুরের মাছও মারা যাচ্ছে। বাড়িতে লালন করা হাঁস-মুরগী, ফসলি জমির পাশের পুকুরের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে ভূক্তভোগী কৃষকরা জানান।কারখানার পাশে ঘেঁচুয়া গ্রামের স্কুলছাত্রী রেশমা আক্তার বলেন, কারখানার দূষিত পানি ও বর্জ্যরে দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা দায়।ঘেঁচুয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সিদ্দিক হোসেন জানান, ঘেঁচুয়া থেকে দক্ষিণ দিকে আট-১০ কিলোমিটার দৈর্ঘের আবাদি বাইদ জমিতে প্রতিবছর আমন ও ইরি আবাদে প্রায় পাঁচ হাজার মণ ধান ও দেড় শতাধিক মণ সরিষা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।পাটজাগ এলাকার কৃষক আলী হোসেন জানান, এবার আমি এক মণ পাকা ধানও কেটে হয়তো ঘরে নিতে পারব না। দূষিত পানি বন্ধ না হলে এ মৌসুমে সরিষার আবাদও বন্ধ হয়ে যাবে।গাবগাইছাচালা গ্রামের জহিরুল ইসলাম বলেন, নদী বা খালবিহীন এলাকায় অপরিকল্পিত কারখানা এ এলাকার মানুষের জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছে। অনেক কৃষক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে বিপদে পড়েছেন।যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম আতিকুর রহমান আতোয়ার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় ওই শিল্পকারখানার বর্জ্যরে কারণে অনেক পরিবার না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে। শিগগিরই দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ করা না হলে কারখানা বন্ধে জনগণকে নিয়ে কর্মসূচি দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে মালিহা পলিটেক্স ফাইবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রচুর বৃষ্টির কারণে ড্রেনের পাইপ ছিদ্র হয়ে ফসলি জমিতে ঢুকেছিল। শিগগিরই পরিকল্পিতভাবে দূষিত পানি ও বর্জ্য সংরক্ষণের প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, শিল্পকারখানা গড়ে উঠায় আমার সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত করে কৃষকের অধিকার নষ্ট করে নয়। ফসলি জমি আগে রক্ষা করতে হবে। তারপর পরিকল্পিত ও দূষণমুক্ত পরিবেশে কারখানা গড়তে হবে। অন্যথায় ব্যক্তি স্বার্থে গড়ে তোলা অপরিকল্পিত কারখানা বন্ধ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ