Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মায়ের সেবাসহ ৩ শর্তে বাড়িতে ‘মুক্ত’ থাকতে পারবেন আসামি

হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

পচাত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধা মায়ের সেবা ও পরিবারের সঙ্গে বসবাসসহ তিন শর্তে মাদক মামলায় দন্ডিত আসামির সাজা বহাল রেখে প্রবেশন প্রদান করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবরের করা এক রিভিশন মামলার শুনানি নিয়ে গতকাল রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদের একক বেঞ্চ এ রায় দেন। আসামিকে জেলে না পাঠিয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকার প্রবেশন প্রদান করে রায় ঘোষণা করা হয়।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আসামিকে প্রবেশন দিয়ে হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায় এটি। তারা জানান, মাদক মামলায় ৫ বছর দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবর জেলে নয়, থাকবেন পরিবারের সঙ্গে। তবে মানতে হবে কয়েকটি শর্ত। দেড় বছর ধরে তিনি থাকবেন প্রবেশন অফিসারের অধীনে। যে শর্তগুলো মানতে হবে তা হলো ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মায়ের যত্ম নিতে হবে। দশম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। আইন অনুসারে নির্ধারিত বয়সের আগে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না। এসব শর্ত না মানলে তাকে জেলে যেতে হবে। আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, আইনজীবী মো. রুহুল আমীন, মো. আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.এনামুল হক মোল্লা। রায় ঘোষণার পর আইনজীবী শিশির মুহাম্মদ মনির সাংবাদিকদের বলেন, ৫ বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলার রায়ে আসামির সাজা বহাল রেখে প্রবেশন দিয়েছেন আদালত।

তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রবেশন আইনে হাইকোর্টের দেওয়া দ্বিতীয় রায়। বিশেষ আইনে এটি প্রথম রায়, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং যুগান্তকারী। হাইকোর্ট বলেছেন জেলে নয়, দন্ডিত আসামিকে পরিবারের সঙ্গে থাকার শর্তে ৫ বছরের দন্ড স্থগিত করে রায় দেয়া হয়েছে। রায়ে প্রবেশনের সুযোগ চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ করে আসামির রিভিশন খারিজ করে দিয়েছেন।

এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা অফিসার মো. আজিজুর রহমান মাসুদ। আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে তার তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা জানান, আসামি মতি মাতবরের কাছে ৪১১ এবং অপর একজন আসামির কাছ থেকে ৭০০ পিস ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত তাদের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে আবেদনের পর একই বছর তা খারিজ করে দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। পরে আসামি মতি মাতবর ২০১৭ সালের ১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন আবেদন করেন। রিভিশনের শুনানিতে আসামি পক্ষ এ মামলায় প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০ এর ধারা ৫ অনুযায়ী আদেশ দেয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করে আইনজীবীরা বলেন, যেহেতু তার এটিই প্রথম অপরাধ এবং আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই। তিনি ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ করবেন মর্মে ধারণা করার মতো তথ্য নেই। সে কারণে তিনি প্রবেশন আইনে সুযোগ পেতে পারেন।

এ আবেদনের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ১০ দিনের মধ্যে আসামির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং টিন নম্বর খুলে দিতে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি, ঢাকাকে নির্দেশ দেন। এ আদেশের আলোকে পদক্ষেপ নিয়ে ২১ অক্টোবর ঢাকা জেলার প্রবেশন অফিসার হাইকোর্টকে অবহিত করেন। পরে আদালত আসামির বিষয়ে আরো একটি (এন্টিসিডেন্ট রিপোর্ট) প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ আদেশ অনুসারে প্রবেশন কর্মকর্তা গত ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনে আসামির স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করা হয়।
উল্লেখ্য, মতি মাতবর ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতারের পর দীর্ঘ ২০ মাস কারাভোগ করেন।



 

Show all comments
  • Farjana Amin ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    খুবি ভালো সিদ্ধান্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • Alam Didar ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    জীবনে অনেক কিছু ই দেখার থাকে,আজ মানবিক বিচার ব্যবস্থা দেখে ভীষণ অভিভূত হলাম। সালাম।
    Total Reply(0) Reply
  • Nm Manirul Islam ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    অবশ্যই যুগান্তকারী রায়,,ধন্যবাদ বিচারপতি কে,,,অপরাধী কে শুধু অপরাধী হিসেবে বিচার না করে মাঝে মাঝে পারিপার্শ্বিক দিকও বিবেচনা করা উচিৎ
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Hoossain ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    খুব ভাল সিদ্বান্ত, এতে করে তিনি ভাল হয়ে মুল স্রোতের মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরী হবে। মা কে দেখবাল করতে পারবে। মামলার জট থাকবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Shafin Ahmed ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 1
    দন্ডিতকে সাজামুক্ত করার নতুন পদ্ধতি
    Total Reply(0) Reply
  • Asad Rajib ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    ভালো সিদ্ধান্ত। কারন জেলখানায় মাদক আরও সহজলভ্য। ওখানে লোকটি আরও বেশি নষ্ট হতো।
    Total Reply(0) Reply
  • ফারহান আহমেদ ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    অভিনন্দন ও শুভকামনা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ