পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং ‘সেকেন্ডে ওয়েভ’ ঠেকাতে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ (মাস্ক নেই তো সেবা নেই) নীতি কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই নির্দেশনা দেয়। পরবর্তীতে মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ণে কঠোর নির্দেশনা জারী করে। কিন্তু হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন, মার্কেট ও শপিংমলের বেশিরভাগ স্থানের কোথাও ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কার্যকর হচ্ছে না। এমনকি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে না কেউ। এসব স্থানে আগতদের কেউ কেউ মাস্ক পরিধান করলেও সঠিক নিয়মে পরিধান করছেন না। যখন তখন খুলছেন, আবার থুতনির নিচে নামিয়ে রাখছেন। সরকারি অফিস-আদালতের সর্বত্র মাস্ক না পরলেও সেবা মিলছে। গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
মার্কেট, শপিংমল এবং গণপরিবহণে সামাজিক দূরত্ব মানাই হচ্ছে না। ‘যতগুলো সিট ততযাত্রী’ গণপরিবহণগুলো এই শর্তে চলাচল করলেও বাসগুলোতে ঠাসাঠাসি যাত্রী তোলা হচ্ছে। হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠার দৃশ্য প্রতিদিন চোখে পড়ছে। বাসের ড্রাইভার, হেলপার, কন্টাকটর কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না; তারা যাত্রীদের স্বাস্থ্য বিধি মানার কথাও বলছেন না। সরকারি হাসপাতালে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ চালু হলেও মাস্ক ছাড়াই সার্ভিস নিচ্ছেন রোগীরা।
সরেজমিন গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বহির্বিভাগ ভবনের পঞ্চম তলায় চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের কক্ষের বাইরে দেখা গেল রোগীদের দীর্ঘলাইন। সবাই নির্দিষ্ট দূরত্ব তো মানেইনি, বরং গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। হাসপাতালের স্টাফ ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের পরিচয়ে সিরিয়াল ভেঙে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করা নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর হৈ চৈ করছেন রোগীরা। শুধু পঞ্চম তলাতেই নয়, আন্ডারগ্রাউন্ডে ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি ও নিচতলার টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে পঞ্চম তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লোরের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের উপচেপড়া ভিড় এবং গায়ের সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একই দৃশ্য চোখে পড়লো।
ধানমন্ডির বাসিন্দা গৃহবধূ রোকাইয়া বেগম চর্ম রোগের চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীরা গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। সবাই যেভাবে মাস্ক খুলে কথাবার্তা বলছেন, তাতে হাসপাতালে রোগের চিকিৎসা নিতে এসে আবার করোনা না ধরে!’
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বার বার মুখে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কোথাও সেটা মানা হচ্ছে না। এমনকি সরকারি অফিস-আদালতের সর্বত্র মাস্ক না পরেই সেবা নিচ্ছেন রোগীরা।
পুরান ঢাকার ওয়ারী, র্যাংকিং স্ট্রিট, হাটখোলা, সায়েদাবাদ, বংশাল, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুখে মাস্ক পরিধান, কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রবণতা কমে গেছে। এক সময় ওয়ারীতে ‘লকডাউন’ করা হলেও সেখানকার টিপু সুলতান রোডের এক বাসিন্দা বলেন, সরকার আদেশ নির্দেশ দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। যার কারণে মানুষ সেগুলো মানছে না। তাছাড়া জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় মানুষ মনে করে এই সরকারের নৈতিক ক্ষমতা দুর্বল। সে জন্য মানুষ সরকারের আদেশ-নির্দেশ উপেক্ষা করছে নিজেদের ক্ষতি করেই। তবে তৌহিদুল ইসলাম নামের একজন বললেন, জীবন ও জীবিকার সন্ধানে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছে। পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। করোনায় কেউ কাজ হারিয়েছেন কাজ থাকলেও কারো বেতন কমেছে। অথচ প্রতিচি পণ্যের মূল্য লাগামহীন। পেটের দায়েই করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি উপেক্ষা করে মানুষ চলাচল করছে।
গুলিস্তানের পাশেই কাপ্তান বাজার। এ বাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, বাজারে আগত ক্রেতাদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মুখে মাস্ক নেই। বিক্রেতারা যেন ভুলেই গেছে মাস্ক পরার কথা। হাসপাতালের মতো সেখানেও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় করোনা সংক্রমণের শুরুতে ওয়াসাসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে পানির ড্রাম, বেসিন ও সাবানের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও কোথাও সেটা দেখা যাচ্ছে না। মার্কেটগুলোতে আগে প্রবেশের সময় জীবাণুনাশক টানেল দিয়ে প্রবেশ করতে হতো। সেই সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হতো; হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হতো। কিন্তু এখন সেসব কার্যক্রম চোখে পড়ে না।
জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে শুধুমাত্র নির্দেশনা, কিংবা আইন প্রয়োগ করে করা যাবে না। এ ব্যাপারে কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। করোনার উপসর্গ হলে পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। অসহায়-গরিবদের জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার সেকেন্ডে ওয়েভে বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছে। আমাদের দেশেও এখন পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ আগের তুলনায় কম থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীনতার কারণে বড় মাশুল দিতে হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।