Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের প্রকাশ্যে গণশুনানী

মাথা গোঁজার ঠাই পাবে প্রতিবন্ধী তারা শেখ

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৫৩ পিএম

একজন সন্তান রোজগার যোগ্য। কিন্তু সংসারের ঘানি টানতে রাজি নয়, তাই বউ নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছে। অন্যজন ছোট। এখনো উপার্জনের যোগ্য হয়ে উঠেনি। সেই ছোট ছেলে, ঘরের অসুস্থ বউ নিয়েই খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছিল প্রতিবন্ধ্বী তারা শেখের। হামাগুড়ি দিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাহায্য কুড়িয়ে কোন রকমে সংসার চললেও মাথা গোজার ঠাই নেই বললেই চলে প্রতিবন্ধ্বী তারার। নিজের এখন্ড জমি আছে। কিন্তু ঘর তোলার সাধ্য নেই। সাহায্যের জন্য সেদিন বাজারের এক দোকানীর কাছে গেলে সে তাকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারের ঠিকানা দেয়। আরও বলে দেয় বুধবার সকাল ১০ টায় ডিসি অফিসে গেলে তার একটা ব্যবস্থা হতে পারে।

দোকানীর থেকে ঠিকানা নিয়ে সকাল ৮ টার আগেই ডিসি অফিসে চলে আসে প্রতিবন্ধ্বী তারা শেখ। আসার আগে খেয়ে আসতে পারেনি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পেটের মধ্যে যেন মোচড় দিয়ে উঠছিল। বসে ছিল জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষের সামনে খোলা জায়গায়। অনেক চেয়ার ছিল বসার জন্য। কিন্তু পা না থাকায় সেখানে সে উঠতেই পারেনি। তাই বলে মনে তার কোন দুঃখ নেই। সারা দিনের বেশির ভাগ সময়ই হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয়। এসবই ভাবছিল সে। এরই মধ্যে ‘এই নেন বিস্কুট’বাক্যটা শুনে উপরে তাকায়। দেখে একজন তাকে বিস্কুট দিচ্ছে। তাকিয়ে দেখে শুধু তাকে নয়, অপেক্ষমান সবাইকে বিস্কুট দিচ্ছে। কে বিস্কুট দিল জানতে চায় প্রদানকারীর কাছে। প্রদানকারী বলেন, ডিসি স্যার এখানে যারা আসছে সবাইকে বিস্কুট দিতে বলেছেন। বিস্কুট হাতে নিয়ে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করে। ‘আল্লাহ ডিসিকে হায়াত বাড়িয়ে দাও।’ বিস্কিুটের প্যাকেট হাতে পেয়ে ক্ষুধা নিবারণের চেয়ে অন্য একটা আনন্দ তার চোখে মুখে ঝিলিক মারে। ‘ডিসি সাব মনে হয় ভাল মানুষ। তাইলে তো আমি ঘর পামু.........।’

বেলা ১০ টায় জেলা প্রশাসক অতুল সরকার আসলেন। একে একে সবার কথা শুনতে লাগলেন। একেক জনের একেক সমস্যা। ডিসি সাব শুনছেন। প্রত্যেককে সমাধান দিচ্ছেন। এবার তারা শেখের পালা। চোখ দিয়ে পানি বেরুলেও মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিল না। কাদছিলেন তারা শেখ। এখানে আসার আগে দোকানীর পরামর্শে একটা দরখাস্ত নিয়ে এসেছিলেন। সেটা হাত বাড়িয়ে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারে হাতে দিলেন। জেলা প্রশাসক অতুল সরকার মনোযোগ দিয়ে দরখাস্ত পড়লেন। কি যেন লিখলেন। এবার বললেন, আপনার ঘটনা যদি সত্য হয়, তাহলে আপনাকে একটি ঘর দেব। আপনার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখে দিচ্ছি।

এতুটুকুতেই খুশি প্রতিবন্ধ্বী তারা শেখ। চলে আসবেন। হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছিলেন। আবার ডাকলেন জেলা প্রশাসক। বললেন, ঐ পাশে গিয়ে বসেন। একটু অপেক্ষা করুন। বসলেন। কিছুক্ষণ পর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাকে নগদ ১ (এক) হাজার টাকা দেয়া হল।

আকাশ থেকে পড়লেন প্রতিবন্ধী তারা শেখ। ‘ক্ষুদার্থ ছিলাম, খাবার পেলাম। ঠাইহীন ছিলাম, ঠাইও পেলাম। আবার টাকাও পেলাম, তাও আবার এক হাজার! আনন্দে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে করতে হামাগুড়ি দিয়ে নিজ কাজের দিকে এগুতে লাগলেন প্রতিবন্ধী তারা শেখ............

প্রকাশ্যে গণশুনানীর আয়োজনের মাধ্যমে শুধু প্রতিবন্ধ্বী তারা শেখই নয় বদলে যাচ্ছে হাজরো মানুষের জীবন। গড়ে উঠছে সম্ভাবনা। পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের। সমাধান হচ্ছে বিভিন্ন নাগরিক সমস্যার। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত এক বছরে গণশুনানীতে প্রায় ৫ হাজার জন সেবা প্রত্যাশী জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করেন। মূলতঃ জমির একসনা বন্দোবস্ত প্রাপ্তি, আইনগত সহায়তা, আর্থিক সাহায্য, টিআর, জিআর. সরকারি ডেউটিন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তি, বিধবা ভাতা প্রাপ্তি, বাল্য বিবাহ রোধ, জমিজমা বিরোধ সংক্রান্ত, ঘর মেরামত, পড়ালেখার খরচ চালানো, শীতের পোষাক প্রাপ্তি, ধর্মীয় কার্যাদিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জেলার নাগরিকগন জেলা প্রশাসকেককে জানান। জেলা প্রশাসক সেসব সমস্যা সমাধান করে থাকেন। সাধারণত প্রতিদিনই জেলা প্রশাসক জনসাধারণের কথা শুনে থাকেন। তবে বিশেষভাবে প্রতিবুধবার দীর্ঘ সময় নিয়ে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়।

[ঘটনাটি বাস্তবতা অবলম্বনে লিখা। তাই প্রতিবন্ধ্বী তারা শেখের ঠিকানা অপ্রকাশিত রাখা হল।]

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ