Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না অনলাইনে

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। জেএসসি-জেডিসি ও এসএসসি-দাখিলের ফলাফল মূল্যায়ণ করেই এবার শিক্ষার্থীদের ফল ঘোষণা করা হবে। ফলাফল ঘোষণার পরপরই এসব শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হবেন। বিগত দিনে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও এবার করোনার কারণে দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। ডিসেম্বরে ফল ঘোষণা হলে কোন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এজন্য পদ্ধতি ঠিক করতে গত মাস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছে। এর মধ্যে একটি বৈঠকে সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নীতিগতভাবে একমত হয়েছিলেন। যদিও এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণে নানা ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের মতে, অনলাইনে পরীক্ষা নিলে, নকল বা অন্য যেকোন কারচুপি ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্য-প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. শফিউল আলম খান বলেন, বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। টেকনোলজিকে ব্যবহার করে জালিয়াতির সুযোগ আছে। সেটিকে কিভাবে সমাধান করা হবে এটা দেখার বিষয়। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটের সমস্যা, ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্কটও এই পদ্ধতির জন্য বড় সমস্যা।
এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বড় ও প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরাসরি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে বৈঠকে বসেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। তাদের সাথে ছিলেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও। সেখানে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূর তাঁর উদ্ভাবিত ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন সিস্টেম’ সফট্ওয়্যারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এটির নানা দিক পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের করার সক্ষমতা এখনো অর্জিত হয়নি। তাই অনলাইনের পরিবর্তে বিকল্প কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সভায় বিশেষজ্ঞগণ বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে বর্তমান অবস্থায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না। সফটওয়্যার দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার মতো সক্ষমতা দেশে এখনো তৈরি হয়নি। এই সফটওয়্যার দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। নেটওয়ার্ক এবং টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন সঠিক নাও হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের কোন দেশে একটি মাত্র সফটওয়্যার দিয়ে বড় পরিসরে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় না। শিক্ষার্থীদের বর্তমান অনলাইন কোর্সের পরীক্ষার মূল্যায়নে যে পদ্ধতিতে অনুসরণ করা হয় তার চেয়ে ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার অনেক বেশি ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে। তাঁদের মতে, এই সফটওয়্যার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট্ট পরিসরে পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়নে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞ কমিটি ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যারের অধিকতর উন্নয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।

এর আগে নিজের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব জানিয়ে প্রফেসর প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেছিলেন, যেকোন পরীক্ষার্থী চাইলে নিজের স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপেই পরীক্ষা দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের কোন সমস্যা হবে না। আর ইন্টানেটের বিষয়ে ড. মুনাজ আহমেদ বলেন, আমাদের সফটওয়্যারটি এমনভাবে তৈরি করা যে, পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট এবং শেষের ১৫মিনিট ইন্টারনেট থাকলেই হবে। তবে আমরা এখনো কাজ করছি কিভাবে পুরো সময় ইন্টারনেট ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারে।
পরীক্ষায় জালিয়াতি বা প্রতারণার কোন সুযোগ থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সফটওয়্যারটি ইন্সটল করার সাথে সাথেই প্রত্যেকের ফ্রন্ট ক্যামেরা অন থাকবে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় প্রতি ৪০জন শিক্ষার্থীকে অনলাইনেই নজরদারি করবেন ১জন করে পরীক্ষক।

প্রফেসর মুনাজ নূর আরও বলেন, আমাদের মানসিকতার সমস্যা রয়েছে। অনেকেই মনে করে অনলাইনে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব না। আবার কেউ কেউ ভাববে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে গেলে জালিয়াতির সুযোগ নেবে। কিন্তু যারাই এই চিন্তা করবে তাদের সকলের পরীক্ষা বাতিল হবে। কারণ প্রত্যেকের ওপর নজরদারি রাখা হবে।
তবে ইউজিসির সভায় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনার পর তিনি স্বীকার করেন যে, এটি বর্তমান অবস্থায় অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য উপযোগী নয়। ড. মুনজা বলেন, এই সফটওয়্যারটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।

সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ এবং কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এছাড়া, সভায় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান, কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মোস্তফা আকবর, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেসের ডিন প্রফেসর মোস্তফা আজাদ কামাল, এডুকেন ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক সোহেল নাদিম রহমান শুভ, এটুআই এর টেকনোলজি এক্সপার্ট মো. ফজলে মুনীম, ওরেঞ্জ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শামীম হোসেন, ডিএসআই এর টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মুশরাফুল হক অনিক এবং হেড অব প্রোডাক্ট এন্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মইনুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষায় যে সফটওয়্যারটি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে ইউজিসি গত সপ্তাহে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এছাড়া, ইউজিসি চলতি শিক্ষাবর্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষারও উদ্যোগ গ্রহণ করে। সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে ১ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের প্রতি আহ্বান জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ