Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বঞ্চিত স্বাস্থ্যকর্মীরা

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার গ্যাড়াকল করোনায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের বিশেষ প্রণোদনা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের (ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা) বিশেষ প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ছয় মাস আগে তিনি এই ঘোষণা দিলেও এখনো প্রণোদনার অর্থ পাননি দেশের কোন স্বাস্থ্যকর্মী। এমনকি করোনায় দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যু হয়েছে এমন বেশিরভাগ চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যদের অপেক্ষার প্রহর গুণতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ বিষয়ে একাধিক প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনা জারি হয়। এমনকি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও প্রায় ৩ মাস আগে নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। এতো কিছুর পরেও প্রণোদনার দেখা মেলেনি।
চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন, শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দেশের হাজার হাজার স্বাস্থ্য সেবা কর্মী নিজেদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যখাতের নীতি নির্ধারকগণ এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের তালিকা করতে পারছেন না। এমনকি বিষয়টি নিয়ে তারা রীতিমতো গড়িমসি করছে। এ কারণে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সম্পৃক্ত কেউই প্রণোদনার টাকা পাননি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী যারা সরাসরি কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন তাদের তালিকা আমরা পেয়েছি। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নানা শর্ত দেয়া হয়েছে, তারা নানা ধরনের কাগজ-পত্র চাচ্ছে। তবে প্রণোদনা প্রদানের কার্যক্রম থেমে নেই। দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ সংশ্লিষ্ট সবাই পাবেন।
করোনা পরিস্থিতিতে দায়িত্বপালনরত অবস্থায় মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. মুহিদুল হাসানের। গত ৪ জুন তার মৃত্যু হলেও এখনো সরকার প্রতিশ্রুত অর্থ পায়নি তার পরিবার। অথচ তার যাবতীয় কাগজপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। এমনকি নিয়মানুযায়ী অধিদফতর থেকে এসব আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী প্রফেসর ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে এমন স্থানে কাজ করতে হচ্ছে যেখানে পর্যাপ্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সরকার স্বাস্থ্যখাতে অর্থ বরাদ্ধ নিয়ে কার্পণ্য করেনি। কিন্তু সেই বরাদ্ধ সঠিকভাবে ব্যবহারে নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার টাকা দিতেও গড়িমসি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা কোন লোভে জীবন বাজি রেখে কাজ করছে না। যদিও তাই হতো তাহলে কাজ বন্ধ করে রাখত। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শৈথিল্য কিনা সেটিও বিবেচনায় আনতে হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাঠানো তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারপর মন্ত্রণালয় বলেছে- একত্রে পাঠাতে সেটিও পাঠানো হয়েছে। তবে দেশের কিছু হাসপাতাল এখনো তালিকা পাঠায়নি। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে গোটা দেশের সব তালিকা আসলে একবারে বিবেচনা করা হবে। তবে মৃত চিকিৎসকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথম যে চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে তিনিসহ বেশ কয়েকজনের পরিবার টাকা পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ এপ্রিল এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, ‘মার্চ মাস থেকে যারা করোনার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছেন, আমি তাদের পুরস্কৃত করতে চাই। সরকার তাদের উৎসাহ দিতে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করবে। এছাড়া দায়িত্ব পালনের সময় কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তাদের জন্য ৫-১০ লাখ টাকার একটি স্বাস্থ্যবীমা থাকবে। কারও মৃত্যু হলে স্বাস্থ্যবিমার পরিমাণ পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাবে। তবে মনে রাখতে হবে, এগুলো মার্চ মাসের পর থেকে যারা জীবন বাজি রেখে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কাজ করছেন, তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি চাকরিরত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রণোদনা হিসেবে (চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট) দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়।
জানা গেছে, গত ৯ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত ‘করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় সরাসরি নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের এককালীন বিশেষ সম্মানী’ শীর্ষক পরিপত্রে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকার এককালীন বিশেষ সম্মানী দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’ সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশেষ সম্মানীর আওতায় শুধুমাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এককালীন দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।’
এর আগে গত ১৭ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, করোনার চিকিৎসা দেয়া চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রণোদনা প্রদানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। সেজন্য অধিদফতর থেকে তিন দিনের ভেতরে করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যদের নাম পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
গত ২২ জুন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর থেকে অতীব জরুরি লেখা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘করোনা পরিস্থিতিতে দায়িত্বপালনরত নার্সদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত নার্সদের নাম, করোনায় আক্রান্ত ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের (নার্স) নামের তালিকা পাঠাতে হবে।’
বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)’র তথ্য মতে, এ পর্যন্ত করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে দুই হাজার ৮৫২ জন চিকিৎসক, এক হাজার ৯৬৬ জন নার্স এবং তিন হাজার ২৬৬ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ