Inqilab Logo

রোববার ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রামে নবজাতক সন্তানের পিতৃত্বের দাবীতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গৃহবধূ

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২০, ৫:৪০ পিএম

কুড়িগ্রামে নবজাতক সন্তানের পিতৃত্বের দাবীতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় এক দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূর। বিচারের নামে প্রহসন করে গৃহবধূর স্বামী এবং ধর্ষণকারীর অর্থ জরিমানা করে ছেড়ে দেয় এলাকার মাতব্বরেরা। ভুক্তভোগী গৃহবধূ থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। ন্যায় বিচার পেতে আদালতের মামলা করেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ধর্ষণকারী।
নির্যাতিত গৃহবধূ জানান,কোলের দু'মাস বয়সী শিশু হাসিমনি। অবুঝ এই কন্যা শিশুটি মায়ের কোলে আশ্রয় পেলেও এখন তার পিতৃ পরিচয় মেলেনি। ঘটনাটি ঘটেছে উলিপুর উপজেলার পৌর এলাকার নারিকেলবাড়ি গ্রামে। নির্যাতিত গৃহবধূর সাথে একই এলাকার রিক্সাচালক আব্দুল হাই এর সাথে বিয়ে হয় প্রায় ১৪বছর আগে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্বামীর অক্ষমতার জন্য তাদের দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান হয়নি। ফলে কয়েক বছর আগে একটি কন্যা সন্তান হালিমা আক্তার হিয়া মনি(৫) কে দত্তক নেয় এই দম্পতি। দারিদ্রতার কারণে স্বামী আব্দুল হাই প্রায় সময় ঢাকায় রিক্সা চালাতে যেতেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একই এলাকার মৃত: আব্বাস আলীর পুত্র স্থানীয় প্রভাবশালী জাহিদুল ইসলাম(৪৫) নির্যাতিত নারীকে প্রায় কু-প্রস্তাব দেয়া শুরু করেন। এক পর্যায় মিথ্যা মামলা ভয় আর বিয়ের প্রলোভনসহ অর্থনৈতিক লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন জাহিদুল ইসলাম। লোক চক্ষুর আড়ালে প্রায় চার বছর চলে তাদের এই অবৈধ সম্পর্ক। গত বছর পঁচিশোর্ধ ভুক্তভোগী গৃহবধূ ৩মাসের অন্ত:সত্বা হয়ে পড়লে জাহিদুল ইসলাম কৌশলে বাচ্চাটি নষ্ট করে ফেলেন। চলতি বছর আবারও বিউটি বেগম গর্ভধারণ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়ে। গত ২১ জুলাই উলিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের আবু সাঈদ সরকারের বাড়িতে একটি সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সালিশে গৃহবধূর বর্তমান স্বামী আব্দুল হাইকে ১০হাজার টাকা এবং অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলামকে ১০হাজার টাকা জরিমানা করে। সালিশের দু'দিন পর গৃহবধূকে ১০হাজার টাকা প্রদান করেন সালিশের প্রধান আবু সাঈদ সরকার। সন্তান প্রসবের পর পুনরায় সালিশ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও আজও সেই সালিশ অনুষ্ঠিত হয়নি। এরমধ্যে গত ২১আগষ্ট একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন গৃহবধূ। এরমধ্যে বিচার পেতে গৃহবধূ উলিপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। পরে ভুক্তভোগী গৃহবধূ তার সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য গত ৩০জুলাই কুড়িগ্রাম বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। এরই প্রেক্ষিতে আদালত একটি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। উলিপুর থানা পুলিশ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে বলেও তদন্তে জানানো হয়। কুড়িগ্রাম আদালতে সন্তানের পিতৃত্বের দাবী ও সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে মামলা দায়ের করেন নির্যাতিত গৃহবধূ। শনিবার দুপুরে নির্যাতিতা পালিত সন্তানসহ নবজাতককে নিয়ে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি ঘটনার বর্ণনা ও সন্তান নিয়ে বিধবা মায়ের কাছে সমাজের কুটু কথা উপেক্ষা করে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বলে জানান।
অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এটি একটি চক্রান্ত। স্থানীয় মাতব্বরের পরামর্শে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কোর্টে মামলা করেছে সেখানেই সবকিছু হবে।
নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামী আব্দুল হাই বলেন, বিচারের নামে তার ও তার স্ত্রীর প্রতি প্রহসন করা হয়েছে। উল্টো স্ত্রীর খাওয়া এবং চিকিৎসার জন্য তাকেও জরিমানা করা হয়েছে। সমাজ ব্যবস্থার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে পারছেন না। তিনি অভিযুক্তকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
নির্যাতিত গৃহবধূর শাশুড়ি রহিমা বেওয়া বলেন,এই মেয়ের সাথে তার ছেলের সাথে সংসার করাবেন না। কেননা যে পাপ করেছে সেই পাপের খেসারত তারা দু'জনেই দেবে। আমার ছেলে কেন দ্বায়ভার নেবে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ এবং জাহিদুল ইসলামের অপকর্ম নিয়ে শত-শত মানুষের উপস্থিতিতে একটি সালিশ অনুষ্ঠিত হবার কথা স্বীকার করেন স্থানীয়রা। তারা আরো বলেন,সালিশে জাহিদুল ইসলাম কৌশলে স্বীকার করে তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা দেয়। পরে সালিশের প্রধান আবু সাঈদ সরকার গৃহবধূর সন্তান প্রসবের পরে বিষয়টি নিয়ে আবারো বসার আশ্বাস দিলেও আজও সেই সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি এখানেই ধাপাচাপা দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এই বিষয়ে সালিশের প্রধান আবু সাঈদ সরকার তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন মেয়ের অভিযোগ শোনার পরে আমি তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে পরার্মশ দিয়েছি। আমি সালিশে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছি এই বিষয়ে সালিশ করার এখতিয়ার আমার নেই। তবে তিনি জরিমানার বিষয়ে বলেন,বাদী এবং বিবাদীর জমি বন্ধক নেবার অর্থ আদায় করে দেয়া হয়েছে।
উলিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান,নির্যাতিত নারী থানায় মামলা করতে আসেনি। থানায় মামলা না নেবার অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা কোর্ট থেকে তদন্তের নির্দেশনা পেয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ