Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাজশাহীতে ইঁদুরের জ্বালাতনে অতিষ্ঠ কৃষক

গিলে খাচ্ছে অর্ধ শতকোটি টাকার ফসল

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩০ পিএম | আপডেট : ১:৩৬ পিএম, ২৫ অক্টোবর, ২০২০

মাঠের কালো ইঁদুর, মাঠের বড় কালো ইঁদুর, গেছো ইঁদুর, খাটো লেজযুক্ত নেংটি ইঁদুর নামে কত ইঁদুর। ইঁদুরের জালাতনে অতিষ্ঠ রাজশাহীর কৃষক। কি ফসলের মাঠ কি গুদাম কি ঘরবাড়ি সর্বত্রই এদের দাপট। রাজশাহীতে বছরে অর্ধশতকোটি টাকার ফসল নষ্ট করছে এরা। ইঁদুরের কারণে সঠিকভাবে ঘরে ফসল তোলার ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষি বিভাগ ইঁদুর দমনে কৃষকদের মাধ্যমে নানারকম চেষ্টা করছে। কিন্তু পেরে উঠছেনা তাদের সাথে। সমানে দাপট দেখাচ্ছে। মুরগির খামারগুলোও রেহায় পাচ্ছেনা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইঁদুর ফসল উৎপাদন ও গুদামজাত শস্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহীতে ইঁদুর গমে ৩-১২ ভাগ, ধানের ৫-৮ ভাগ ফসল নষ্ট করে। এরা প্রত্যেক বছরে ধান ও গমসহ অন্য ফসলের ১৯ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন নষ্ট করে। যার বর্তমান বাজার মূল্য অর্ধকোটি টাকা। ইঁদুর মাঠের দানাজাতীয়, শাকসবজি, মূল জাতীয়, ফল জাতীয় ফসলের ক্ষতি করে থাকে। আবার গুদামঘরে সংরক্ষিত ফসলেরও মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে (প্রায় শতকরা ২০ ভাগ)।
প্রাণীসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে। মুরগির খাবার, ডিম ও ছোট মুরগি খেয়ে বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি করে। রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইসমাইল হক বলেন, খামারে ইঁদুর সাধারণ মুরগির খাবার নষ্ট করে। মাঝে মাঝে বাচ্চা খেয়ে ফেলে।
এছাড়া এরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সেচনালায় গর্ত করে সৃষ্ট করে ক্ষতি করে। ইঁদুরের বংশবৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি। সুষ্ঠু পরিবেশ এক জোড়া ইঁদুর থেকে বছরে প্রায় তিন হাজার ইঁদুর জন্মলাভ করতে পারে। বছরে প্রায় প্রতি মাসেই বাচ্চা দিতে পারে এবং প্রতি বারে ৬-৭টি পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে। জন্মদানের ২ দিনের মধ্যেই এরা পুনরায় গর্ভধারণে সক্ষম হয়। জন্মানোর তিন মাসের মধ্যে বাচ্চা দিতে সক্ষম হয়। আর ইঁদুরের জীবনকাল ২ থেকে ৩ বছর।
রাজশাহীতে মোট ১০ থেকে ১২ টি প্র্রজাতির ইঁদুর আছে। এরা ধান, গম, ভুট্টা, বাদাম, ফলমূল বিশেষ করে শাক-সবজি নারিকেল, পেয়ারা, সফেদা, লিচু, আম, লাউ, মিষ্টি আলু ইত্যাদি কৃষি ফসল খেয়ে ক্ষতি করে। ধান বা গমের শিষ আসার সময় ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে তেছরা করে কেটে গর্তের ভেতর নিয়ে বাসা তৈরি করে এবং খায়। এরা যা খায় তার চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি নষ্ট করে। ৪০ কেজি ফসলের মাঝে খায় ৫ কেজি আর নষ্ট করে ৩৫ কেজি।
কৃষিবিদদের ভাষ্যমতে, এই সমস্যার একমাত্র সমাধান ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা পদ্বতি। দমন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে কাজ করছে পেশাদার ইঁদুর শিকারী, কৃষি বিভাগের আইএফএমসি, আইপিএম ও ক্লাবের সদস্যরা। দমন পদ্ধতিগুলোকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। পরিবেশসম্মতভাবে দমন ও বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে দমন বা রাসায়নিক পদ্বতিতে দমন।
পেঁচা, গুইসাপ, বেজি, শিয়াল, বিড়াল ইত্যাদি প্রাণীর প্রধান খাদ্য ইঁদুর। এ প্রাণীগুলোকে সংরক্ষণ করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ ইঁদুর সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। এমন প্রাণীগুলো দিনে দিনে বিলুপ্ত হচ্ছে। এতে সকলের সম্মিলিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। এদিকে, রাজশাহীর কমবেশি সকল উপজেলায় ইঁদুর ক্ষতি করলেও তানোর, গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, দুর্গাপুরে বেশি ক্ষতি করে থাকে। কারণ এই এলাকায় ধান ও গমের আবাদ বেশি হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, ফসলের ক্ষতি ঠেকাতে ইঁদুর দমনে আমরা সারা বছর অভিযান পরিচালনা করি। গত বছর মোট ৮৭ হাজার ২৪১টি ইঁদুর মারা হয়েছে। উপজেলার সকল কৃষি অফিস ১৫ দিন পর পর আমাদের ইঁদুর মারার রিপোর্ট জমা দেয়। বছরে একবার করে আমাদের ইঁদুর নিধনের বিষয়ে কৃষকের সাথে পরামর্শ দেয়া হয়। নিধন কার্যক্রমে আমরা সার্বিকভাবে মাঠে আছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ