পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীনা ভ্যাকসিন সিনোভ্যাকের ট্রায়াল বাংলাদেশে শুরু হওয়ার কথা ছিল অনেক আগেই। কিন্তু দিল্লীর লেজুড়বৃত্তি করা কিছু আমলার ‘চীনকে ঠেকিয়ে রাখার’ কৌশলের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। অথচ ব্রাজিল প্রায় ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে সিনোভ্যাকের ট্রায়াল করে জানিয়েছে চীনা ভ্যাকসিন সবচেয়ে নিরাপদ। চীন ৬০ হাজার মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে শতভাগ সফলতা পেয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পৃথিবীতে কোনো না কোনো ভ্যাকসিন আসছে। অথচ বাংলাদেশ সে ভ্যাকসিন পাবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত। প্রশ্ন হচ্ছে দিল্লিকে খুশি করতে কেন এই আত্মঘাতী প্রবণতা? ব্রাজিল সিনোভ্যাকের সফল ট্রায়াল হলে বাংলাদেশে হলো না কেন?
জানা গেছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা বিদেশি ভ্যাকসিন আবিস্কার হলে ভারত ভায়া হয়ে ক্রয়ের চিন্তাভাবনা করছে। ভারতের পররাষ্ট্রন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরে প্রস্তাব দিয়েছেন দিল্লি ভ্যাকসিন পেলেই তা বাংলাদেশকে দেয়া হবে। মোদী প্রশাসনের সেই প্রস্তাবে বূঁদ হয়ে রয়েছেন আমলারা। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনায় ভারতেরই বিপর্যয়কর অবস্থা। নিজেরাই করোনায় মোকাবিলায় সময়োপয়োগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারায় পৃথিবীর আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার তালিকায় সামনের কাতারে চলে গেছে। দেশটির অর্থনীতি কার্যত বিপর্যয়কর অবস্থার মুখে। সেই ভারতের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়াল বন্ধ রাখা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সবার আগেই চীনের ভ্যাকসিন সিনোভ্যাকের ট্রায়ালের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। সরকার ট্রায়ালের উদ্যোগও নিয়েছিল। কিন্তু ভারতপ্রেমী কিছু আমলা সে উদ্যোগ ঠেকিয়ে দেয় নানা অজুহাতে।
চীনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়াল না হওয়ার পেছনে বৈশ্বিক রাজনীতি এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. বে-নজির আহমেদ। জানতে চাইলে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এ দেশে চীনের সিনোভ্যাকের ট্রায়াল হলে ভাল হতো। সিনোভ্যাকের টিকার পরীক্ষা শুরু করতে সরকার এত সময়ক্ষেপণ করল কেন, সেটাই বিষয়। অনেক আগে থেকেই বিএমআরসি অনুমোদন দিয়েছে। এটাতে মন্ত্রণালয়ের কী অসুবিধা ছিল, জানি না।
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা তথা দিল্লীমুখি মানসিকতার কারণে যথাসময়ে চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশ শুরু করতে পারেনি। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, টাকার বিনিময়ে ভ্যাকসিনের কোনো ট্রায়ালেই অংশ নেবে না বাংলাদেশ। এ কারণে চীনা ভ্যাকসিন সিনোভ্যাকের ট্রায়াল বাংলাদেশে হচ্ছে না। তবে চীন বলেছে, শুরুতে তারা টাকা চায়নি। বাংলাদেশকে যথেষ্ট সময়ই দেয়া হয়েছিল। সময়মত সিদ্ধান্ত না নেয়ায় বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা অন্যদেশে দেয়া হয়েছে।
প্রতিদিনই বাড়ছে করোনার ভয়াবহতা। সামনে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচার একমাত্র মাধ্যম ভ্যাকসিন। বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য এখন প্রতিষেধক ভ্যাকসিন তৈরি করা। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে এক ধরণের প্রতিযোগিতা। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে বাজারে কোন না কোন ভ্যাকসিন আসছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে কে আগে ভ্যাকসিন আবিস্কার করবে। আবার কে সম্পর্ক তৈরি করে ওই দেশ থেকে আগে নিতে পারবে এ নিয়ে চলছে নানা তৎপরতা। এর আগে অন্য কোনো রোগের ক্ষেত্রে এই ধরণের প্রতিযোগিতা দেখা যায়নি। ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল সবার আগে টিকা পাওয়ার। চীন বাংলাদেশকে সে সুযোগও দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ তা গ্রহণ করতে পারেনি। বাংলাদেশ গ্রহণ না করলেও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভ্যাকসিন দৌঁড়ে এগিয়ে গেছে এক সময়ে পিছিয়ে থাকা ব্রাজিল। পাশাপাশি এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান, আরব আমিরাত। অথচ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে দেশের মানুষ সবাই ধারণা করেছিল চীনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়াল হলে ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। কিন্তু এ আশায় গুড়েবালি। কারণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভ্যাকসিন দৌঁড়ে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। যদিও ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত নেই। এ কারণে সিনোভ্যাকের বর্তমান প্রস্তাবে সায় নেই বাংলাদেশের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ ভ্যাকসিন দৌড়ে অনেক পিছিয়ে গেল। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সিনোভ্যাক কোম্পানির টিকা পরীক্ষা হলে ভালো হতো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে সিনোভ্যাক কোম্পানির যে চুক্তি হয়েছে তাতে বলা আছে, টিকার পরীক্ষা সফল হলে সিনোভ্যাক বাংলাদেশকে টিকা তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে। সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের কোম্পানি দেশেই টিকা উৎপাদন করতে পারবে। উৎপাদনে সক্ষম এমন দুটি ওষুধ কোম্পনি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। তারা বলেন, আইসিডিডিআর,বির প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশে সিনোভ্যাক কোম্পানির টিকার পরীক্ষার বড় সুবিধা হলো, অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রোজেনেকা বা যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নাসহ অন্যান্য টিকার পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষার প্রটোকল সে দেশ থেকেই পাঠায়। ওটাই ফলো করা হয়। সেখানে কিছু বলার থাকে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আইসিডিডিআর,বি নিজেরাই ডিজাইন করেছে পরীক্ষা কীভাবে করা হবে। এ কারণেই সিনোভ্যাক বাংলাদেশে টিকার পরীক্ষায় রাজি হয়। সিনোভ্যাক কোম্পানির ভ্যাকসিন এখানে ট্রায়াল হলে সবচেয়ে ভালো হতো যে আমরা সরাসরি জানতে পারতাম ভ্যাকসিনটা ঠিক কতটা কার্যকর।
যদিও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে এমন পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বাংলাদেশ এখনও ভ্যাকসিন তৈরিতে এগিয়ে থাকা কোনো সংস্থার সঙ্গে সরাসরি কোনো চুক্তি করতে পারেনি। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ঢাকার বেক্সিমকো একটি চুক্তি সই করেছে। সরকারের সামনে এই মুহূর্তে দুটো বিকল্প রয়েছে। এক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে ২০ শতাংশ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা। যা কিনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। দুই, বাকি ৮০ ভাগ ভ্যাকসিন পেতে হলে কোন না কোনো সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।
স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. খুরশীদ আলম বলেছেন, তাদের তহবিলের কোনো সঙ্কট নেই। ভ্যাকসিনের জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি বারবারই বলেছে, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন দৌঁড় থেকে পিছিয়ে পড়লে আখেরে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমলাদের এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশে সিনোভ্যাক টিকার পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। যদিও কোম্পানিটি বলছে, তাদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো হলে আগামী নভেম্বরে তারা পরীক্ষা শুরু করতে পারে। কিন্তু সেটা আদৌ হবে কি না, তা বলতে পারছে না আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশও (আইসিডিডিআর,বি)। প্রটোকল অনুযায়ী দেশে সিনোভ্যাক টিকার পরীক্ষা আইসিডিডিআর,বির করার কথা। প্রতিষ্ঠানটি টিকা পরীক্ষার সব আয়োজন প্রায় শেষ করে এনেছিল।
যদিও দেশে সিনোভ্যাকের পরীক্ষা না হলেও করোনার টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অসুবিধা হবে না বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, টিকা কেনার জন্য সরকারের টাকা আছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি টিকার জন্য টাকা দিয়েছে। বাজেটেও টাকা রাখা আছে। টাকার সমস্যা হবে না। মানুষের জন্য যত টাকাই লাগুক না কেন, সরকার ব্যয় করবে। বিশ্বে ভ্যাকসিন উৎপাদন হলেই বাংলাদেশ পাবে।
এদিকে অনেক ধনী দেশ অবশ্য বলছে, টিকা আবিস্কার করলে তারা সবাইকে দিবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে চীন, আমেরিকা, রাশিয়াসহ উন্নত দেশগুলো ভ্যাকসিন আবিস্কার করলে তাদের সবারই চেষ্টা থাকবে আগে নিজ দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া। কারণ ওই সব দেশগুলো তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আগে নিজ দেশে সবার জন্য ভ্যাকসিন দেয়ার চেষ্টা করবে। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশকে দিলেও বাংলাদেশসহ অন্যান্য নির্ভরশীল দেশগুলো সেই ভ্যাকসিন কি পরিমানে পাবে এই নিয়ে সন্দেহ দেখিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র মতে, করোনা গোটা বিশ্বের মতো দক্ষিণ এশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া তথা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভ্যাকসিন দৌঁড়ে শুরু থেকেই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জহিদ মালেক কয়েকমাস আগেই টিকা আবিস্কার হলে সেটা যাতে আগে বাংলাদেশ পায় সে বিষয়েও কথা বলে রাখেন চীনের সঙ্গে। চীনের প্রতিনিধিরাও বলে গেছেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে গত ১৯ জুলাই চীনের সিনোভ্যাকের উদ্ভাবিত টিকা ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা সংস্থা-আইসিডিডিআর-বি’র তত্ত্বাবধানে এই পরীক্ষা হওয়ার কথা। অথচ ভারত তখনও করোনা চিকিৎসা নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিল। আর করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নিয়ে দ্রুত অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতায় সব উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। আর তাই চীনের টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালও হয়ে পড়ে বিলম্বিত। এ সময়ের মধ্যেই ভারত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির টিকা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়; দেশে সিনোভ্যাকের ট্রায়াল হলে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পেত।
বাংলাদেশে কেন চীনের টিকার ট্রায়াল করা হয়নি সেটা নিয়ে সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। তাদের মতে, হাতের নাগালে থেকেও ট্রায়াল না করে বাংলাদেশকে এখন নির্ভর করতে হবে ভারত বা অন্য কোন দেশের ওপর। আর বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে থাকা ভারত ইতোমধ্যে তিনটি প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করছে। দুটি তাদের নিজেদের তৈরি এবং আরেকটি ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তেরি ভ্যাকসিনের পেটেন্ট নিয়ে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে এবং এই ভ্যাকসিনটি তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের শেষদিকে। অথচ বাংলাদেশ চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করতে না পারলেও ঠিকই আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সিনোভ্যাকের ট্রায়াল করাচ্ছে।
এদিকে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের ওপর করোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগ করেছে চীন। তাদের কারো মধ্যেই কোনো বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। গত মঙ্গলবার দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা তিয়ান বাওগো এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা দাবি করেছেন। বাওগো সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, যাদের টিকা দেয়া হয়েছে, তাদের সবাই নিরাপদ আছেন।
বর্তমানে চীনের চারটি সম্ভাব্য করোনা টিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের সম্ভাব্য দুটি করোনা টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ ধাপে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মানুষের ওপর টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া, অপর একটি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক জানিয়েছে, বেইজিংয়ে ১০ হাজার মানুষকে তাদের সম্ভাব্য টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে।
চীনের করোনা টিকা তৈরি টাস্কফোর্সের প্রধান ঝেং ঝংওয়েই জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৬১ কোটি ডোজ করোনা টিকা উৎপাদনের প্রত্যাশা করছেন তারা।
এদিকে এবার ব্রাজিলের মতো করোনা বিধ্বস্ত দেশও পাশে দাঁড়াল চীনের। চীনের তৈরি প্রতিষেধকটি মানব শরীরে প্রয়োগের জন্যে নিরাপদ বলে ঘোষণা করল সাও পাওলোর বুতানতান ইনস্টিটিউট। এই সংস্থাটি মোটেই ছোটখাটো নয়, বরং ব্রাজিলের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারগুলোর মধ্যে শীর্ষে বুতানতান। ব্রাজিলে তৃতীয় পর্যায়ের যে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে, সেখানেই নিরাপদ বলে স্বীকৃতি পেল ওই ভ্যাকসিন। ব্রাজিলের প্রায় ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ভ্যাকসিনটি এখনও পর্যন্ত নিরাপদ। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্যে আরো সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে।
ব্রাজিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত স্বেচ্ছাসেবককে ওই ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে, তাদের শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন প্রতিদিন রেকর্ড করা হচ্ছে। আর তার ভিত্তিতেই আশাজনক ফল পাওয়া যাচ্ছে। সাও পাওলো’র গভর্নর জোয়া ডোরিয়া রীতিমতো উচ্ছ্বাসের সুরে বলেছেন, করোনাভ্যাকের প্রথম দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর আমরা বুঝতি পারছি, চীনের করোনাভ্যাকই সবচেয়ে নিরাপদ ও সবচেয়ে আশা জাগানো করোনা প্রতিষেধক।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, প্রথম দফার ট্রায়ালেই এই ভ্যাকসিন মানব শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। এই সাফল্য ধরে রাখতে পারলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে চীনের করোনা প্রতিষেধক পুরোদমে ব্যবহার শুরু করবে ব্রাজিল। ইন্দোনেশিয়া, তুরস্কেও এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। ইতোমধ্যে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এই ভ্যাকসিনের ৬ কোটি ডোজ নেবে তারা।
এর আগেই সিনোভ্যাক বায়োটেকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, করোনাভ্যাক ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যেই একটি কারখানা নির্মাণ করেছেন তারা। ওই কারখানা থেকে বছরে ৩০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদন করা সম্ভব হবে। যা অন্যান্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি। চীনের ভ্যাকসিনটির দাম খুব বেশি রাখা হবে না বলেও জানানো হয়েছে। উৎপাদনকারী সংস্থার পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ভ্যাকসিনটির প্রতি দুই ডোজের দাম ১৪৬ মার্কিন ডলারেরও কম রাখা হবে। উল্লেখ্য, তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল হতে চলা বিশ্বের পরীক্ষাধীন ১০টি ভ্যাকসিনের মধ্যে রয়েছে চীনের এই ভ্যাকসিনটিও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।