Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অন্তরের প্রশান্তি আল্লাহর যিকিরে

মোঃ আবদুল গনী শিব্বীর | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

যিকির আরবী শব্দ। শব্দটির অর্থ হলো স্মরণ করা, সংরক্ষন, উপদেশ, নামায, বিধান, মর্যাদা। এছাড়াও শব্দগতভাবে যিকর শব্দের মানে হলো আল্লাহকে স্মরণ করা, তাকে নিয়ে আলোচনা করা, সালাত পড়া বা কুরআন তেলাওয়াত করা।
পরিভাষায় যিকির বলা হয় আল্লাহ তা’য়ালার ভয় ও ভালোবাসা হৃদয়ে সদা-সর্বদা জাগ্রত রেখে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের ঐকান্তিক কামনায় মনও মুখে একনিষ্ঠ চিত্তে কথা-বার্তায়, কাজে কর্মে, আচার আচরণে, চিন্তা চেতনায় তথা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং তাঁর বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। শায়খ হুজাইফি বলেন, জিকির ও আল্লাহর স্মরণ হলো- কল্যাণের উন্মুক্ত দ্বার, শাস্তি থেকে মুক্তির মাধ্যম, পুণ্যার্জনের মহৎ পন্থা ও অমঙ্গল থেকে রক্ষার কারণ। কেননা, জিকির ফরজ-ওয়াজিব ইবাদতকে পূর্ণতা দেয়।
পবিত্র কোরআনুল কারীমের মধ্যে যিকির শব্দটি মোট ২৬৮ বার এসেছে। এর মধ্যে ১৫৪ বার শব্দটি ফে’ল (ক্রিয়া) হিসেবে ব্যবহার হয়েছে আর ১১৪ বার ইসম (বিশেষ্য) হিসেবে। মিসরের একজন বিখ্যাত গবেষক মোস্তফা ফাহমী। তিনি বলেছেনঃ কোরআনুল কারীমের মধ্যে প্রায় ১২টা সুরার মধ্যে প্রায় ৫০টি আয়াত আছে যেখানে এই ‘যিকির’ এর পরে নবী-রাসুল, অহী, পূর্ববর্তী কিতাব, উল্লেখ আছে এবং এর দ্বারা ওই কিতাব এর মাধ্যমে উপদেশের কথা বলা হচ্ছে। সুতরাং ‘যিকির’ মানে হলো ‘এমন উপদেশ যা কিতাবের মাধ্যমে দেয়া হয়, এমন নিয়মনীতি যা কিতাবে উল্লেখ আছে।
আল্লাহর যিকির হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের রূহ আবু ওসমান নাহদী রাহ. বলেন, কুরআন মজীদের ওয়াদা অনুযায়ী যখন কোনো বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে তখন আল্লাহ তাকে স্মরণ করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো এবং শোকর গোযারি কর, না-শোকরি করো না। (বাকারাঃ ১৫২) তিনি আরোও ইরশাদ করেনঃ ‘এবং যে আমার স্মরণ থেকে/ বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অব¯’ায় উত্থিত করব’।(ত্বহাঃ ১২৪)
অন্তরের প্রশান্তি আল্লাহর যিকিরেঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। (আনফালঃ ৪৫) আল্লাহর দিকে অভিমুখী হেদায়েতপ্রাপ্ত লোক তারাই) যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু চিত্ত প্রশান্ত হয়। (রাদঃ ২৮) যারা ঈমানদার তারা এমন যে যখন তাদের সামনে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। (আনফালঃ ২), যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে। (হজ্বঃ ৩৫), আল্লাহর অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও যিকিরকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (আহযাবঃ ৩৫)
অন্তরে প্রশান্তি লাভের পদ্ধতিঃ আল্লাহপাক ইরশাদ করেনঃ ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।’ (আহজাবঃ ৪১)
তিনি আরো ইরশাদ করেনঃ স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায়। (আরাফঃ ২০৫) তিনি আরো ইরশাদ করেনঃ যারা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এবং চিন্তা-ভাবনা করে আসমান যমিন সৃষ্টির বিষয়ে। হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। (আলে ইমরানঃ ১৯৯)
তিনি আরো ইরশাদ করেনঃ যে তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে অতপর নামায আদায় করে। (আ’লাঃ ১৫)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করতেন। (সহীহ মুসলিম ১/২৮২; সুনানে আবু দাউদ, পৃষ্ঠা ৪)
যিকিরের সুফলঃ নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘শয়তান আদম সন্তানের কলবে জেঁকে বসে থাকে যখনই আল্লাহর যিকির করে ছিটকে পড়ে এবং যখনই কলবের জিকির বন্ধ থাকে সে কুমন্ত্রনা দেয়।’ (মুসান্নাফে আবি শায়বাহঃ ৩৫৯১৯)
হযত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। ... ঐ ব্যক্তি, যে একান্তে আল্লাহকে স্মরণ করেছে এবং তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে। (বুখারী, হাদীসঃ ৬৪৭৯)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা যতক্ষণ আমাকে স্মরণ করতে থাকে এবং আমার যিকিরের কারণে তার ঠোঁট নড়তে থাকে, ততক্ষণ আমি তার সাথে থাকি। (আল্লাহর রহমত তার সাথে থাকে)। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীসঃ ১০৯৬৮; ইবনে মাজাহ, হাদীসঃ ৩৭৯২)
হযরত আবু হুরায়রা রা. ও হযরত আবু সায়ীদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখেন,আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়,এবং তাদের উপর ছাকিনা নাযিল হয়, আর আল্লাহ তাআলা তার নিকটতম ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা উল্লেখ করেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ৭০০; শুআবুল ঈমান, হাদীসঃ ৫৩০)
হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর যিকিরের চেয়ে আযাব থেকে অধিক নাজাত দানকারী আর কোনো আমল নেই। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীসঃ ১৬৭৪৫)
লেখকঃ প্রভাষক, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আল্লাহর-যিকির
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ