Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ১৫ উপজেলায় সাড়ে তের হাজার একর জমিতে চা আবাদ করবে চা বোর্ড

শেরপুর জেলা সংবাদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৩ পিএম

শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়সহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ১৫ উপজেলায় ১৩ হাজার ৬শ ৮৫ একর জমিতে চায়ের আবাদ করা হবে। এর মধ্যে শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার ৬ হাজার একর জমিতে চা আবাদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ জন্য সরকারের কাছে ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্ধও চেয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। বিষয়টি নিয়ে খুব দ্রুতই সচিব পর্যায়ের একটি টিম এ এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে চা বোর্ডের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান।
১৭ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত শেরপুর জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়সহ নকলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় তারা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেন। ওইসময় তারা শিল্প উদ্যোক্তা আমজাদ হোসেন ফনিক্সের গড়ে তোলা গারো হিলস টি কোম্পানির পরীক্ষামূলক ক্ষুদ্র পরিসরে চা আবাদ কার্যক্রম পরিদর্শন এবং ক্ষুদ্র চা চাষীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
মতবিনিময় সভায় ক্ষুদ্র চা চাষী, চা চাষে আগ্রহী নতুন চাষী ও গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেন চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাগণ। ওইসময় চা গবেষণা ইনস্টিটিউট উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কীটতত্ত্ব) ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষিতত্ত্ব) ড. মোহাম্মদ মাসুদ রানা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (মৃত্তিকা বিজ্ঞান) নাঈম মোস্তফা আলী, সহকারী উন্নয়ন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান আকন্দ, শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিনসহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, অনেক বছর ধরেই শেরপুরসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহে চা চাষের উপযুক্ততা নিয়ে কথা বলে আসছিলেন চা বিশেষজ্ঞরা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলাসমূহে চা চাষের সম্ভাবনা সরেজমিনে জরিপ করার জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড ২০০৪ সালে সরেজমিনে পরিদর্শন, মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রদান করে। ওই জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, পাহাড়ি এ জনপদের মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া চা চাষাবাদের অত্যন্ত উপযোগী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে আবারও সম্ভাব্যতা যাচাই করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ হাজার ৬শ ৮৫ একর জমি চা চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে শেরপুরের ৩টি পাহাড়ি এলাকাসহ প্রায় ৬ হাজার একর জমিতে চা চাষের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।
এ লক্ষ্যে শেরপুর জেলায় চা উৎপাদনের জন্য আঞ্চলিক কার্যালয় গড়ে তোলার ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে করে ক্ষুদ্র চাষীদের প্রশিক্ষণসহ প্রণোদনার ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। শেরপুরে চা শিল্প গড়ে উঠলে এসব পাহাড়ি জনপদের মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। জেলায় ৬ হাজার একরের মধ্যে শ্রীবরদীতে ১১৫০ একর, ঝিনাইগাতীতে ১৮৫৫ একর ও নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে ২৫০০ একর জমিতে চা আবাদ সম্ভব। ওই উদ্যোগকে বাস্তবে রূপ দিতে ইতোমধ্যেই এগিয়ে এসেছে বেসরকারি উদ্যোক্তা আমজাদ হোসেন ফনিক্সের গারো হিলস টি কোম্পানী। তারা স্থানীয়দের চা চাষে উদ্বুদ্ধকরণসহ তাদের মাঝে চায়ের চারা বিতরণ করেছে।
সভায় আরও জানানো হয়, গারো পাহাড়ের ১৩ হাজার ৬শ ৮৫ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অন্ততঃ ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেইসাথে এ অঞ্চল থেকে বছরে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হবে, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানীও করা যাবে।
এ ব্যাপারে গারো হিলস টি’র চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ফনিক্স বলেন, গারো পাহাড়ে চা চাষের সম্ভাবনা দেখে চাষীদের উদ্ধুদ্ধ করে ক্ষুদ্র পরিসরে নিজ উদ্যোগে পরীক্ষামূলক চা চাষ শুরু করেছিলাম। বাংলাদেশ চা বোর্ড এখন সার্বিক সহায়তা, অফিস ও কারখানা স্থাপন করলে এখানে চা চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছি। সেইসাথে এখানকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ