Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। তদানীন্তন গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে। আব্বা শেখ লুৎফুর রহমান, মা সাহেরা খাতুন। 

২. তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামের এসই স্কুলে এবং চতুর্থ শ্রেণী থেকে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে অধ্যয়ন।
৩. বার-তের বছর বয়সে মুরুব্বীদের ইচ্ছায় তিন বছর বয়সের ফযিলাতুন নিছা ওরফে জুবুর সঙ্গে বিবাহ।
৪. ১৯৩৪ সালে সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৩৬ সালে গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হয়ে চশমা পরা শুরু।
৫. ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ জিলা স্কুলে ভর্তি।
৬. ১৯৩৮ সালে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী একে ফজলুল হক ও শ্রমমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ সফরে এলে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হন।
৭. এ সময় গোপালগঞ্জে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার কিছু ঘটনা ঘটে। এই হিন্দুদের চক্রান্তে শেখ মুজিবের জীবনে প্রথম জেল অভিজ্ঞতা।
৮. ১৯৩৯ সালে কলকাতা গিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ। এরপর মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ।
৯. ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি। থাকতেন বেকার হোস্টেলে।
১০. ১৯৪৩ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষ চলাকালে গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে রিলিফ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ।
১১. পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, মুসলিম লীগের সোহরাওয়ার্দী-হাসিম গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে।
১২. ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের দিল্লি কনফারেন্সে যোগদান এবং আজমীর শরীফ গমন।
১৩. ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ। দাঙ্গা-পীড়িত জনগণের সেবায় অংশগ্রহণ। ...-সোহরাওয়ার্দীর ... মিশনে অংশগ্রহণ।
১৪. ১৯৪৭ সালে সিলেটে গণভোটে অংশগ্রহণ।
১৫. ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন।
১৬. তমদ্দুন মজলিস ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সূচিত ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
১৭. ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সেক্রেটারিয়েট গেটে পিকেটিংয়ের অপরাধে গ্রেফতার।
১৮. এর চার দিন পর ১৫ মার্চ তারিখে মুক্তি লাভ।
১৯. চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলন করায় কারাবরণ।
২০. ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত। সেখানে শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতেই যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত।
২১. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন চলাকালে কারারুদ্ধ অবস্থায় বাংলার দাবিতে অনশন ধর্মঘট করে। শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে মুক্ত হন।
২২. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন।
২৩. ১৯৫৫ সালে শেখ মুজিব সদস্য নির্বাচিত হন।
২৪. ১৯৫৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক কোয়ালিশন সরকারের শিল্প-বাণিজ্য, শ্রম ও ভিলেজ এইড দফতরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।
২৫. ১৯৫৭ সালের ৩০ মে সংসদীয় কাজের সুবিধার্থে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২৪ জুন থেকে ১৩ জুলাই তিনি চীনে সরকারি সফর করেন।
২৬. ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা। সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করতঃ রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। ১১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।
২৭. ১৯৬০ সালের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করে তিনি মুক্তি লাভ করেন। সামরিক শাসন ও আইয়ুববিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু গোপন রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করেন। এ সময়ই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য ছাত্র নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামের গোপন সংস্থা গঠন করে প্রতি মহকুমায় এবং থানায় নিউক্লিয়াস গঠন করেন।
২৮. ১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। সামরিক আইনের অবসান ঘটলে তিনি মুক্তিলাভ করেন।
২৯. সোহরাওয়ার্দী অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু তার সাথে পরামর্শের জন্য লন্ডনে যান। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী বৈরুতে ইন্তেকাল করেন।
৩০. ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এক সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। সভায় মাওলানা তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিব যথাক্রমে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
৩১. ১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রদ্রোহ ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তিনি কারারুদ্ধ হন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন।
৩২. ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা বাংলায় সফর করেন। এ সময় তাকে অসংখ্যবার গ্রেফতার করা হয়।
৩৩. ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে এক নম্বর আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয় এবং তাকে গ্রেফতার করে সেনানিবাসে আটক রাখা হয়।
৩৪. ১৯৬৯ সালের ৫ আগস্ট ৬ দফাসহ ছাত্রদের ১১ দফ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে স্থানীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদ ঐ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সারা বাংলায় আন্দোলনরত হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি জনগণের চাপের মুখে মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে রেসকোর্সে সংবর্ধনা দেয়া হয় এবং সেখানে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
৩৫. ১৯৬৯ শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের নাম পূর্ব পাকিস্তানের বদলে ‘বাংলাদেশ’ রাখেন।
৩৬. ১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পুনরায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন লাভ করে।
৩৭. ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রেসকোর্সে জনপ্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ পরিচালনা করেন। প্রতিনিধিদের ৬ দফার ভিত্তিতে ব্যতীত অন্য কোনো সংবিধান গ্রহণে অস্বীকৃতিতে সংকল্প গ্রহণ করেন।
৩৮. ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার প্রতিবাদে সর্বত্র বিক্ষোভ শুরু হয়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্সে এক জনসমুদ্রে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং অবিলম্বে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।
৩৯. ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র দেশবাসীর ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হামলা শুরু হয় এবং বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।
৪০. এই পটভূমিতে দেশের জনগণ পাকিস্তানের আগ্রাসী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশ¯্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নয় মাস রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে এ বিজয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
৪১. আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। সেদিনই পাকিস্তান সরকার ঢাকার উদ্দেশ্যে তাকে লন্ডন প্রেরণ করে। ৯ জানুয়ারি তিনি লন্ডনে ব্রিটিশ এডওয়ার্ড হিথের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং নয়াদিল্লিতে যাত্রাবিরতির পরে ১০ জানুয়ারি ঢাকা পৌঁছলে তাকে ঐতিহাসিক সংবর্ধনা দেয়া হয়।
৪২. ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৩ আসন লাভ করে। ৬ সেপ্টেম্বর জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধু আলজেরিয়া যান।
৪৩. ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে তিনি লাহোর যান।
৪৪. ১৯৭৫ সালের ৫ জানুয়ারি সব দল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেন এবং রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন।
৪৫. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে সেনাবাহিনীর এক দল অফিসারের অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়।
[সূত্র : অসমাপ্ত আত্মজীবনী]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি
আরও পড়ুন