Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলের জেলে পল্লী ও মাছের মোকামে এখন শুনশান নিরবতা

ইলিশের মূল প্রজননকালে ২২ দিন আহরন বিপনন নিষেধাজ্ঞা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৭:১৪ পিএম

দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের উপক’লভাগের জেলে পল্লী ও ইলিশ মোকামগুলোতে এখন অনেকটাই শুনশান নিরবতা। ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গত ১৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২২ দিন সব ধরনের মাছ আহরন সহ সারা দেশে ইলিশ আহরন,পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। ফলে জেলে পল্লী সহ সব ইলিশ মোকামে এখন নেই কোন কোলাহল আর কর্মব্যস্ততা। দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকার ছোট ও মাঝারী কয়েকশ বরফ কলও বন্ধ। 

মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের দক্ষিনাঞ্চল ও উপকূলীয় ৪০টি জেলার ১৪৫ উপজেলার দেড় হাজার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ জেলে পরিবার ইলিশ আহরনে সম্পৃক্ত। যার ৩২% সার্বক্ষণিক এবং ৬৮% খন্ডকালীন। এছাড়াও ইলিশ বিপনন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরন সহ জাল, নৌকা, বরফ তৈরী এবং মেরামত কাজেও প্রায় ২০-২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাতেই প্রায় সোয়া ৩ লাখ জেলে এ পেশার সাথে জড়িত। যার ৬৫% সার্বক্ষণিক ইলিশ আহরনে সরাসির জড়িত বলে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
২০০৫ সালেই সর্বপ্রথম প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’এর আওতায় ১০দিন ইলিশের আহরণ বন্ধ রাখা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনের পরে ২০১৬ সালে থেকে নিষেধাজ্ঞা ২২ দিনে উন্নীত করা হয়। আমাদের জিডিপি’তে জাতীয় মাছ ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্যখাতে অবদান প্রায় ১২Ñ১৩%। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, সারা বিশ্বে উৎপাদন হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে গত দেড় দশকে ইলিশের উৎপাদন প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০%-এরও বেশী বাংলাদেশে উৎপাদন ও আহরিত হয়ে থাকে।
গত ১৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সারা দেশে ইলিশের আহরন, পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। ফলে উপক’লীয় এলাকা সহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলে পল্লী ও মোকামগুলেতে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। শুধুবরিশঅল পোর্ট রোডের ইলিশ মোকাম ও বরফফ কলগুলোর প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক এখন বেকার। যদিও মূূল প্রজনন এলাকা ভোলার উত্তর তজুমদ্দিন থেকে পশ্চিমে সৈয়দ আউলিয়া পয়েন্ট, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট-এর ধলচর দ্বীপ ও মনপুরা দ্বীপ, চট্টগ্রাম উপক’লের মীরসরাই উপজেলার শাহেরখালী হয়ে হাইতকান্দীÑমায়ানী পয়েন্ট এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া থেকে গন্ডামারা পয়েন্ট এলাকার বাইরে অন্যসব মাছ ধরায় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু নদীতে জাল ফেললে তাতে কি মাছ উঠবে তা বলার সাধ্য নেই কারো। গত তিন দিনে বরিশাল সহ দেশের উপক’লীয় বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নদ-নদীতে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু জেলেকে ইলিশ আহরনের অভিযোগে জেল জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
ইলিশ আহরন বন্ধে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় তার অধিনস্ত মৎস্য অধিদপ্তর সহ আরো কয়েকটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল ছাড়াও দেশের উপক’লীয় ৩৬টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। পুলিশÑপ্রশাসন ছাড়াও নৌবাহিনী, কোষ্ট গার্ড, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপি এসব টাস্ক ফোর্সের সহায়ক শক্তি হিসেবে দায়িত্বপালন করছে।
ফলে বেশীরভাগ জেলে এখন অখন্ড অবসরে। মাছের মোকামগুলোর শ্রমিকরাও বেকার। এসব বেকার শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের সহায়ক কার্যক্রম এখনো গ্রহন করা হয়নি। তবে ইলিশ আহরনে বেকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেশের উপক’লীয় ১৫২টি উপজেলার ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৮২ জেলে পরিবারের জন্য এবার ২০ কেজি করে ১০ হাজার ৫৬৬ টন চাল বরাদ্ব করেছে সরকার। যার মধ্যে বরিশাল বিভাগের ২ লাখ ৮২ হাজার ৫শ জেলে পরিবারের জন্য বরাদ্ব রাখা হয়েছে ৫ হাজার ৬৫০ টন চাল। সারাদেশে উৎপাদিত ইলিশের ৬৬Ñ৭০% আহরন হচ্ছে বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীন ও উপকূলীয় মূক্ত জলাশয়ে। গত দুই দশকে বরিশাল বিভাগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ১৫০%-এরও বেশী। তবে এবার এখনো ইলিশ আহরনে বিরত জেলেদের মাঝে চাল বিতরন কার্যক্রম শুরু হয়নি। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ চাল বিতরন সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী বিভিন্ন জেলা প্রশাসন সহ মৎস্য বিভাগ।
আগামী ৪ নভেম্ব^র পর্যন্ত ইলিশ আহরন,পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ১ নভেম্বর থেকে ৭ মাসের জন্য সারা দেশে জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। ইলিশ আহরন নিয়ন্ত্রনের ফলেই গত দুই দশকে দেশে এ মাছের উৎপাদন ও আহরন ২ লাখ টন থেকে ইতোমধ্যে ৫.৩০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে মনে করছে মৎস্য অধিদপ্তর। আগামী অর্থ বছরে দেশে এ মাছের উৎপাদন সাড়ে ৫ লাখ টনের কাছে পৌছবে বলে আশাবাদী অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ