পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বেগুনের ফলন দেখে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছায়কোট গ্রামের কৃষক আবদি মিয়ার মুখে ফুটেছিল তৃপ্তির হাসি। কিন্তু নিমসার হাটে সেই হাসি মিলিয়ে গেল তার। সপ্তাহ ঘুরেই বেগুনের দাম মণ প্রতি কমে গেছে ১০০ টাকা। গত হাটে পাইকারদের কাছে ভালো মানের বেগুন প্রতি মণ বিক্রি করেছিলেন এক হাজার ৫০০ টাকায়। গতকাল তার দাম নেমে হয় এক হাজার ৪শ’ টাকা। ৪০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করতে কষ্ট হয় আবদি মিয়ার। অথচ তার বেগুনই হাত বদলেই শহরে বিক্রি হয় ৮০ টাকা কেজি দরে।
কুমিল্লার চান্দিনা, বুড়িচং এই দুই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজির ফলন হয়। কৃষকরা বেগুন, শসা, ঝিঙা, লাউ, পুঁইশাক, মরিচ, ডাঁটাশাক, পেঁপে ও কচুর লতি নিয়ে আসেন কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বাজার নিমসার পাইকারি হাটে। সেখান থেকে প্রতিদিন অর্ধশত ট্রাক শাকসবজি নিয়ে রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং অন্যান্য জেলায় যায়। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ওই সব জেলার শাকসবজির চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগই পূরণ করেন কুমিল্লার কৃষকরা।
সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত নিমসার সবজির হাটে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি ক্রেতারা সবজি কিনে ঝুড়িতে সাজাচ্ছেন। ঝুড়ি বোঝাই সবজি তোলা হচ্ছে ট্রাক অথবা পিকআপ ভ্যানে। হাটের কৃষকরা জানান বাজারে প্রতিমণ বেগুন এক হাজার ৪০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, শসা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, পুঁইশাক ৪০০ টাকা, মরিচ এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা, পেঁপে ৫০০ টাকা, ঝিঙা ৯০০ টাকা, জলপাই ৮০০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিছ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। চান্দিনার শ্রীমন্তপুর গ্রামের সবজি চাষি শাহাজাহান মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দালালরা কম টাকা দিয়ে প্রায় জোর করেই সবজি নিয়ে যায়। তারা কমিশন নিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেয় সেই সবজি। চাষিদের কাছ থেকে মরিচ কিনে বাজারেই পাইকারি বিক্রি করেন রমজান মিয়া। তিনি জানান, কৃষকের কাছ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে মরিচ কিনে তিনি পাইকারদের কাছে ১৮০ টাকায় বিক্রি করেন।
চাষিদের অভিযোগ, দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সবজি চাষ করে কোনো রকমে খরচের টাকা তুলতে পারছেন তারা। মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দামে সবজি বিক্রি করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সবজি চাষি আমির হোসেন জানান, তিনি এ বছর ২৪ শতক জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছেন। প্রথম দিকে প্রতিটি লাউ বিক্রি করেছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে। এখন বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। এ দামে লাউ বিক্রি করে কোনো রকমে আবাদের খরচ উঠেছে বলে জানান তিনি। একই অভিযোগ কালাকচুয়া গ্রামের সবজি চাষি নজরুল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিক্রি করে আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। পূর্ব পুরুষরা চাষ করে আসছে, তাই চাষ করি। সৈয়দপুর গ্রামের সাইফুল ১ মণ কাঁচা মরিচ নিয়ে এসেছেন হাটে। ১১০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, আড়তদার, ফড়িয়া ও ব্যাপারিরা এখানকার হাট নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা যে দাম নির্ধারণ করে দেন, সেই দামেই আমাদের মাল বিক্রি করতে হয়। কৃষি উপকরণের দামের তুলনায় সবজির দাম খুবই কম। কাঁচা সবজি গাছে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তা বিক্রি করতে হয়।
এদিকে, পাইকাররা দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন হাটের খাজনা, আড়তদারি ও পরিবহন খরচকে। তারা জানান কৃষকদের কাছ থেকে সবজি ক্রয় করার পর তা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে দ্বিগুণ খরচ পড়ে। তাই খুচরা বাজারে সবজি দাম বেড়ে যায়। নিমসার হাটে সবজি কিনতে আসা ঢাকার যাত্রাবাড়ি ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন এবং টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তারা প্রতি কেজি পটল ৫০, কাঁচা মরিচ ১১০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। হাটের খাজনা, আড়তদারি ও পরিবহন খরচ দিয়ে ঢাকা পৌঁছাতে সবজির মূল্য দ্বিগুণ হয়ে যায়। এরপর তাদের লাভের প্রশ্ন থাকে। যাত্রাবাড়ি সবজি ব্যবসায়ী সেন্টু মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চাষির কাছ থেকে একটি লাউ ৫০ টাকায় কিনলে, ঢাকার বাজারে আবার আড়তদারি দিয়ে তা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি না করলে লাভ হয় না।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেলেও ভোক্তারা বেশি দাম দিয়েই সবজি কিনছেন। অথচ সবজি উৎপাদনে রীতিমতো বিপ্লব ঘটালেও এর দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় এই এলাকায় সবজির ফলন ভালো হচ্ছে। কিন্তু রাজধানী বা কুমিল্লা শহরে খুচরা বাজারে যে দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে, এর তিন ভাগের এক ভাগ দামে পাইকারি বাজারে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিলে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে।
উৎপাদক ও বিশ্লেষকদের মতে, প্রক্রিয়াজাত করণের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই এ এলাকার চাষিরা কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুরজিত দত্ত দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ জেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়ে থাকে। মৌসুমি সবজির আমদানি বাড়লে পাইকারি ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম কমিয়ে দেন। ফলে কৃষকরা কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।