Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

৯৯৯ ফোন দিয়েও এস আই আকবরের সেবা জুটলো না সিলেটে এক নারীর

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৯:১১ পিএম

সিলেটের একভোক্তভোগী নারী লিসাত লিজা। সেও অভিযোগ তোলেছে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যুবককে নির্যাতন দায়ে বরখাস্তকৃত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। অন্তঃসত্ত্বা এ নারীর পেটে লাথি মেরে গর্ভের সন্তান নষ্ট করা হলেও ১০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে বরং তাঁকে, তাঁর স্বামী ও স্বামীর ভাগ্নেকেই মামলায় ফাঁসিয়ে দেন তিনি।’ মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) নির্মম এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আকবরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে খাদিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ এ কে রেদওয়ান আহমদের স্ত্রী লিসাত লিজা বলেন, ‘আকবরের সামনেই আমার পেটে লাথি মারা হয়েছিলো। ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে এসআই আকবর এসে আমাদের রক্ষা না করে হামলাকারীদের পক্ষ নেন। এবং উল্টো আমার স্বামী ও ভাগ্নেকে ধরে নিয়ে যান থানায়। তবে থানায় যাওয়ার আগেই গাড়িতে ১০ হাজার টাকা চেয়ে চাঁদা দাবি করে এসআই আকবর বলেন, আপনারা চাইলে টাকা ১০ হাজার দিলে সমাধান হয়ে যাবে। না হলে লম্বা হবে ঘটনা ।’
লিসাত লিজা বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা ইউনিট স্থাপন নিয়ে মিরবক্সটুলা এলাকাবাসী বিরোধিতা করলে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। আমার পৈত্তিক বাড়ি মিরবক্সটুলা হওয়ায় করোনা ইউনিট স্থাপনের বিপক্ষে ছিলেন তারাও। এসময় আমার স্বামী নিজে ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করে করোনা ইউনিট স্থাপনের পক্ষে অবস্থান নেন। এই পোস্টে বিভিন্ন ব্যক্তি নানা কটুক্তি ও হুমকি-ধামকি প্রদান করেন। এর কিছুদিন পর ১৭ এপ্রিল আমার স্বামীর ভাগ্নে আদিত্য ইসলাম সালমান মাউন্ট এডোরায় চিকিৎসার কাজে আসলে তাকে মারধর শুরু করেন আমার বাবার বাড়ির এলাকার লোকজন।
পেয়ে আমার স্বামী ঘটনাস্থলে গেলে মারধোর করা হয় তাকেও। এসময় আমার স্বামীর ভাগ্নে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এর কল সেন্টারে ফোন দিয়ে সহযোগিতা চায়। এর ভিতরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই আমিও। তখন ৫ সপ্তাহের অন্ত:সত্ত্বা আমি। এসময় এসআই আকবরসহ কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসে হামলাকারীদের পক্ষ নেন এবং তার সামনেই আমার পেটে লাথি মারা হলেও আমাদের রক্ষা করার চেষ্টা করেননি তিনি। ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্তহামলাকারীদেরই পক্ষ নেন আকবর। এসময় আমার সাথে তার বাকবিতণ্ডা হয়। আমি তাকে প্রশ্ন করি, আপনি আমাদের রক্ষা করতে এসেছেন নাকি নাটক করতে এসেছেন। তখন তিনি হামলাকারী একজনকে সাথে নিয়ে আড়ালে চলে যান। এর পরই আমার স্বামীকে ও আমার স্বামীর ভাগ্নেকে পুলিশের গাড়িতে তুলেন। তখন আকবর যাকে নিয়ে আড়ালে গিয়েছিলেন উনি ডামি কয়েকটি অস্ত্র এনে দেন এবং বলেন এগুলো নাকি আমার ভাগ্নে সাথে করে নিয়ে এসেছিলো। পরে থানায় নিয়ে এসে আমার স্বামীকে ১ম, আমার ভাগ্নেকে ২য় ও আমাকে ৩য় আসামি করে মামলা রেকর্ড করা হয়। ঘটনার ৭ দিন পরই আমার রক্তক্ষরণ শুরু হলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই আমি। তখন ডাক্তার আমাকে জানিয়েছিলেন আমার গর্ভের সন্তার নষ্ট হয়ে গেছে।’ লিজা বলেন, ‘আমার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। জিন্দাবাজার এক্সিলেন্ট স্যুজ দোকেনের মালিক তিনি। আর যারা হামলা করেছিলো তারা সবাই বিএনপি জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। মিলাদ আহমদ নামের বিএনপি নেতার স্ত্রী আমার পেটে লাথি মেরেছিলেন। পরে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেলেও আমার স্বামী চাননি বাড়তি কোন ঝামেলায় জড়াতে। বরং তিনি আমাকে বলেছিলেন, বিচার যেন আল্লাহর কাছে চাই। কারণ পুলিশের কাছে রক্ষা করার আবেদন করে যেখানে টাকা না দেওয়ায় বরং মামলার আসামি হয়েছিলাম সেখানে বিচার আর কার কাছে চাইব। তাই আজ যখন দেখলাম আমার টাকা না দেওয়ায় গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার পরও পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে উলটো মামলার আসামি হয়েছি ঠিক তেমনই আরও একজন মায়ের সন্তান, এক শিশুর বাবা মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য এই আকবরের নির্যাতনেই মারা গেছেন। তখন আমার একটাই দাবি, দ্রুত আইনের আওতায় এনে আকবরের শাস্তি দেওয়া হোক। তা না হলে পুলিশের উপর মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। এব্যাপারে সুজন সিলেটের পক্ষ থেকে গণশুনানীর পরিকল্পনা আছে বলে জানালেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। একই সাথে এদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানান তিনি।



 

Show all comments
  • Jack Ali ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৯:৫৭ পিএম says : 0
    O'Allah curse upon the government.. of Allah rescue us from the Zalem government and select a muslim leader who will rule our Beloved Country by the Law of Allah.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ