Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শহরে রূপের রাস্তার ক্ষত

বিপর্যস্ত কক্সবাজারের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা : বিমুখ হচ্ছে পর্যটক

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

পর্যটন শহর কক্সবাজার প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও বাস্তবে যেন অভিভাবকহীন। ভাঙাচোরা সড়কে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, উপ-সড়কের অবস্থা এতই খারাপ যে, হেঁটে চলাচলেরই কোনো সুযোগ নেই। পৌর পরিষদের মেয়াদ ৩ বছর হতে চললেও মেয়র এবং কাউন্সিলরেরা পূরণ করেননি নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি। তিন বছরে ত্রাণ ও ভাতা বিতরণ ছাড়া মেয়র-কাউন্সিলরদের উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন কাজ নগরবাসী জানেন না। পিছিয়ে রয়েছে সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন । ফলে বিমুখ হচ্ছেন পর্যটকরাও। ইতোমধ্যে পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও এসব সড়ক, ড্রেইন সংস্কারের নেই কোনো উদ্যোগ।

পৌরসভার হাঙরপাড়া, পশ্চিম টেকপাড়া, পূর্ব টেকপাড়া, মধ্যম টেকপাড়া, উত্তর টেকপাড়া, জনতা সড়ক, আমেনা খাতুন স্কুল সড়ক, বার্মিজ স্কুল রোড, সিকদার মহল, পুরাতন ম্যালেরিয়া অফিস রোড, কবি নজরুল সড়ক, পেশকার পাড়া, কুমিল্লা পাড়া, চাউল বাজারসহ আরও কয়েকটি এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ৪ নং ওয়ার্ড। বিগত ৩ বছরে বৃহত্তর এই ওয়ার্ডে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কাউন্সিলর নিজের বাড়ির রোড সংস্কার করলেও বাকি সব এলাকার অবস্থা শোচনীয়।

টেকপাড়া চৌমুহনী থেকে চাউল বাজার পর্যন্ত সড়কটি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টি না হলেও গর্তে ২৪ ঘণ্টা পানি জমে থাকে। একই অবস্থা ড্রেনগুলোর। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ড্রেনে আবর্জনা জমে গেছে। কয়েকটি ড্রেইন পুনঃনির্মাণ করা হলেও অধিকাংশই নাজুক। বার্মিজ স্কুল রোডের সড়ক ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। কার্পেটিং উঠে গিয়ে মুছে গেছে সড়কের চিহ্ন। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। দেখলে মনে হয় এখানে সড়ক ছিল অর্ধশত বছর আগে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে সয়লাব হয়ে যায়।

একই দশা অন্যান্য ওয়ার্ডেরও। শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক হাসপাতাল সড়ক, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও স্টেডিয়াম সড়ক নিয়ে দুঃখ শেষ নেই পথচারীদের। খানা খন্দকে মুছে গেছে সড়কের চিহ্ন। গোলদিঘির পাড় এলাকার ব্যবসায়ী দিপু দাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখন সড়কের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সরকারি বালক-বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, স্টেডিয়াম ও হাসপাতাল সড়কের ব্যবসায়ীরা বলেন, শহরের মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা। এখানে স্কুল, হাসপাতাল, অফিস ও আদালত রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সড়কদিয়ে চলাচলা করে। কিন্তু সড়কের দৃশ্য দেখলে মনে হবে অজপাড়া গাঁ। শহরের কোথাও অর্ধ কিলোমিটার সড়কও ঠিক নেই। সড়কের বড় বড় গর্তে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। রোগীদের হাসপাতালে আসতে চরম কষ্ট পেতে হচ্ছে।

পর্যটন এলাকার লাবনী ও সি-ইন পয়েন্টের মাঝামাঝি হোটেল সী-গালের সামনের পর্যটন এলাকার প্রধান রাস্তাটির লক্কর ঝক্কর হয়ে থাকে সারা বছর। প্রতি বছর বর্ষা এলেই এই রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে কোন রাস্তা আছে তা বুঝা যায় না। এতে হতাহত হচ্ছে পর্যটকসহ স্থানীয়রা। এই সড়কের কারণে কক্সবাজার নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে দেশি বিদেশি পর্যটকদের মাঝে। বাস টার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু কাজ করে গর্ত ভরাট করে পৌরসভা, কউক আর সড়ক বিভাগ। কিন্তু তাদের এসব কাজে কিছুদিন পরই সড়কে আবারও একই অবস্থা ফিরে আসে।

কলাতলী মোড় থেকে হোটেল সায়মন পর্যন্ত সড়কটি হরহামেশা জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকে। আশপাশের হোটেল, রেন্টুরেন্ট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা পানি রাস্তায় এসে জমে থাকে। আবর্জনায় নালা ভরাট থাকায় ময়লা পানিও রাস্তায় চলে আসে। নোংরা পানি চলাচলে পথ না থাকায় সেই পানি নামছে সৈকত দিয়ে সাগরে। এতে কলাতলী পয়েন্টে বিষিয়ে উঠছে পরিবেশ। এ অবস্থায় কক্সবাজার ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা। এছাড়া প্রধান সড়কের আলির জাঁহাল, রুমালিয়ারছড়া, খুরুস্কুল রাস্তার মাথা, তারাবনিয়ার ছড়া, কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, বাজারঘাটা থেকে হলিডের মোড় পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে খানা খন্দক ও অগণিত গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বর্ষা শুরু থেকে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ও ছাত্র-ছাত্রী। প্রেস ক্লাব রোড ও জেলা পরিষদ সড়কের শোচনীয় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি দিয়ে ভিভিআইপি ও ভিআইপিরা চলাচল করলেও তবুও টনক নড়ে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ওই সড়কে এখন যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

বিজিবি ক্যাম্প, আলির জাহাল, বাস টার্মিনাল, সদর উপজেলা গেইট এলাকা, পাহাড়তলী, খুরুস্কুল রাস্তার মাথা সড়ক, লাইট হাউজ, এন্ডারসন সড়ক, সমিতিপাড়া ও বইল্যাপাড়া সড়কগুলো মৃত্যু মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কাউন্সিলররা নিজেদের পকেটের চিন্তায় এলাকার উন্নয়ন ভুলে গেছে বলে জানান ভোটাররা।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শহরের প্রধান সড়কের হলিডে মোড় বাস টার্মিনাল হয়ে হলিডের মোড় পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল সড়ক জনপথ বিভাগের। ২০১৮ সালে এটি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে কউক এই সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে। চলতি বছরেই দ্বিতীয়বারের মতো সংস্কার কাজ পরিচালনা করেছে কউক। কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার কাজ করতে না পারায় সহজে কাটছেনা না সড়কের দুরাবস্থা।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সড়কের বোবা কান্না শুনার যেন কেউ নেই। অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে আছে পর্যটন শহরের সড়ক-উপসড়ক। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে। কউক দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধান সড়ক কয়েক দফায় সংস্কার করা হয়। এক মাসের মধ্যে হলিডের মোড় থেকে হাশেমিয়া মাদরাসা পর্যন্ত প্রধান সড়কের কাজ শুরু করা হবে। পরবর্তীতে কিছু জটিলতা লাঘব হলে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের কাজ করা হবে।

এদিকে পৌরসভার কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় জনসংখ্যা বেড়েছে, বর্ধিত হয়েছে পৌরসভা। কিন্তু সেই অনুপাতে পৌরসভায় জনবল বাড়েনি, বাড়েনি কোনো সুযোগ-সুবিধাও। পৌরসভার ওপর জনগণের নানাভাবে চাপ বেড়েছে। চাপ পড়েছে সড়ক ও নালার উপর। এসব সমস্যা সমাধানে এখনো সরকারি কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। নাগরিকদের কর বাড়ানো হয়নি। সীমিত আয়ে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে শতকোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। একটি সড়কও ভাঙ্গা থাকবে না। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সকল সড়কের সংস্কার করা হবে। এক বছরের মধ্যে পাল্টে যাবে পর্যটন শহরের চেহারা।

 



 

Show all comments
  • Jack Ali ৯ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৩৫ এএম says : 0
    We bangladeshi people become Dumb/Deft and Blind. The government says our country is like Singapore. If we compare our country with Singapore then our beloved country, the government turned into a dustbin country.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ