Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাত লক্ষাধিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের এখন মঙ্গাকাল

ফসলের মাঠসহ গ্রাম বাংলায় কাজের অভাব আর নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২০, ৫:৪৩ পিএম

লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত আউশ উৎপাদনের পরে মূল দানাদার খাদ্য ফসল আমনের আবাদ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন করেও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি শ্রমিক ও কৃষকদের এখন মঙ্গাকাল অতিক্রম করতে হচ্ছে। করেনা সংকটের সাথে ভাদ্রের শেষ থেকে অগ্রহায়নের শুরুর এ সময় গ্রাম বাংলায় তেমন কোন কাজ নেই। আমন আবাদ সম্পন্ন হওয়ায় ফসলী জমিতেও কৃষি শ্রমিকদের চাহিদা নেই। ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ বা ‘কাজের বিনিময়ে টাকা’র মত সরকারী কোন কর্মসূচী না থাকায় সমস্যা আরো বেড়েছে। আর এরই মধ্যে চাল, ভোজ্যতেল, পেয়াঁজ সহ বেশকিছু নিত্যপণ্যের মূল্য সমাজের অন্যসব মানুষের মত কৃষকদেরও যথেষ্ঠ বিপাকে ফেলেছে। গত পনের দিনে চালের দাম প্রতি কেজিতে ৩-৫ টাকা বাড়লেও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের তাতে কোন উপকার হয়নি। তাদের ঘরের বোরো ও আউশ ধান আগেই বিক্রী হয়ে গেছে।
পাশাপাশি গত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ও মে মাসে আরো প্রলয়ঙ্কারী ঝড় ‘আম্পান’এর পরে আগষ্টের ১৯Ñ২২ তারিখ পর্যন্ত ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় ভর করে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার সহ উজানের বণ্যার পানি ও অবিরাম বর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় শতভাগ ফসলী জমি প্লাবিত হয়। আগাম শীতকালীন সবজি সহ উঠতি আউশ ও আমন বীজতলারও যথেষ্ঠ ক্ষতি হয়। তবে এর পরেও দমে থাকেনি দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন। অত্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে আউশ ধান কর্তনের পাশাপাশি আমনের রোপনও শেষ করেছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র হিসেবে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় এবারো ৩০ লাখ টনেরও বেশী দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন হবে। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-১ মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৫ টন আউশ চাল উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। যা লক্ষমাত্রার প্রায় ৫০ হাজার টন বেশী। এবারো সারা দেশে ১৩ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টরের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলেই প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে।
উপরন্তু আগষ্টের প্লাবনে বীজতলা ও সদ্য রোপা আমনের ক্ষতি কাটিয়েও দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ৬ লাখ ১৫ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদের লক্ষ্যে পৌছেছে কৃষকগন। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টন। যে লক্ষ্যে পৌছানের ব্যাপারে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। গত রবি মৌশুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় সোয়া লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের পরে আউশ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টনেরও বেশী। চলতি আমন মৌশুমে উৎপাদন লক্ষ্য অর্জিত হলে দক্ষিণাঞ্চলে এক বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন সম্ভবনার কথা জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। এরসাথে অন্তত ১০ হাজার টন গম উৎপাদনেরও সম্ভবনা রয়েছে ফলে বিগত বছরগুলোতে ৭ লক্ষাধীক টন খাদ্য উদ্বৃত্ব দক্ষিণাঞ্চলে এবারো সে ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
তবে প্রকৃতির সাথে নিরন্তর লড়াই করে দক্ষিণাঞ্চলের যে কৃষিযোদ্ধাগন সোনার ফসল ঘরে তুলছেন তাদের এখন যথেষ্ঠ সংকটকাল। ভাদ্রের শেষভাগ থেকে অগ্রহায়নের শুরুর সময়টা ফসলের মাঠে কোন কাজ থাকেনা। তার ওপর এবার করোনা সংকটে কৃষি শ্রমিক ও দিন মজুরদের বেকারত্ব আরো বেশী। এরই সাথে চাল সহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি তাদের আরো সংকটে ফেলেছে। অর্থনৈতিক সংকটে নিজের উৎপাদিত ধান কম দামে বিক্রী করে এখন বেশী দামে চাল কনতে হচ্ছে তাদের। পরিস্থিতি উত্তরনে দক্ষিণাঞ্চলে অবিলম্বে ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ বা ‘কাজের বিনিময়ে টাকা’ কর্মসূচী চালু করার দাবী করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন কৃষকগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ