Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যমুনা-পদ্মায় ফের ভাঙন

সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ ও মো. রনি শেখ, টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

দফায় দফায় বন্যার পর এবার তীব্র স্রোতের কবলে পড়লে যমুনা ও পদ্মায় ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। যমুনার তীব্র ভাঙনে ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে দক্ষিণ চৌহালির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। আর পদ্মার তীব্র ভাঙনে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে বান্দারবাড়ি গ্রামটিসহ কয়েকশ’ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে চরম বিপদে পড়েছে ভাঙন কবলিতরা।

পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে যমুনার ভাঙন। তীব্র ভাঙনে ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে দক্ষিণ চৌহালির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকেই দক্ষিণ চৌহালির বাঘুটিয়া ও খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়। এরই মধ্যে ওই দু’টি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে মানুষ বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। গত কয়েক সপ্তাহ আগেই এসব অঞ্চলের মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন। এ অবস্থায় ভাঙন আতঙ্কে যমুনাপাড়ের জনগণ চরম বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাসপুকুরিয়া থেকে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর বিনানুই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়। যমুনার পানি দফায় দফায় হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। এতে প্রায় কয়েকশ’ বসতভিটা, ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদরাসা, তাঁত কারখানাসহ পাকা রাস্তা নদীগর্ভে চলে যায়। বর্তমানে নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাসপুকুরিয়া ও বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর বিনানুই হাটাইল, চর নাকালিয়া, ভুতেরমোড়, খাসপুকুরিয়া, মেটুয়ানী এলাকার পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। একই সঙ্গে কয়েকশ’ বিঘার ফসলি জমিও বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা।

খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের এলাকাবাসী জানান, গত তিনদিনের মধ্যে মেটুয়ানি গ্রামেরই প্রায় ৩০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। চৌহালি সদর থেকে পাথরাইল পর্যন্ত নয় কিলোমিটার পাকা সড়কটির মধ্যে অধিকাংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত কয়েকদিনে রেহাই পুকুরিয়া পশ্চিম থেকে মেটুয়ানি পর্যন্ত ২৫০ মিটার পাকা রাস্তা ধসে যাওয়ায় উপজেলা সদরে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন জনগণ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙনরোধের চেষ্টা করলেও তা টিকছে না।

ভাঙনরোধে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কাহহার সিদ্দিকী জানান, বন্যার আগে থেকেই মেটুয়ানি, বিনানুই, চর নাকালিয়া গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়ছে। এ পর্যন্ত তিনটি গ্রামের প্রায় চার শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর। কয়েক সপ্তাহ আগে বন্যার পর ভাঙন শুরু হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

চৌহালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা ইয়াসমিন জানান, অনেকদিন ধরেই চৌহালির দক্ষিণাঞ্চলে ভাঙন চলছে। এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চৌহালি উপজেলার দায়িত্বে থাকা টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙনরোধে খাসপুকুরিয়া দেওয়ানগঞ্জ বাজার এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষিণ চৌহালি রক্ষায় স্থায়ী নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে তীব্র স্রোতের কারণে পদ্মার শাখা নদীতে ফের নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার দিঘীরপাড়ের কান্দারবাড়ি এলাকায় হঠাৎ করে পদ্মার শাখা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ভয়ানক দৃশ্য ধারণ করেছে বহুরূপী পদ্মা। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বান্দারবাড়ি গ্রামটিসহ কয়েক শত একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে চরম বিপদে পড়েছে ভাঙন কবলিতরা।

সরজমিনে গতকাল দেখা যায়, পদ্মার শাখা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীব্র স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ঘূর্ণিপাকের সৃষ্টি হয়ে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি ও বসতভিটা। কিছুদিন পূর্বে জিও ব্যাগ ফেলে দিঘীরপাড় বাজার নদী ভাঙন কিছুটা রোধ করা গেলেও ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে শাখা নদীর ওপাড়ের কান্দারবাড়ি ও পাশের সদর উপজেলার পূর্বরাখি গ্রামের চরের একাংশ।
নদী ভাঙন কবলিতরা জানান, গত দুদিনের ব্যবদানে আমাদের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হঠাৎ করে নদী ভাঙন দেখা দেয়ায় আমরা চরম বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়ছি। আমাদের বসত ঘর ভেঙে অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছি।

গত সোমবার বিকেলে ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা আক্তার, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা উছেন মে এবং দিঘীরপাড় ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম হালদার।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ হাসিনা আক্তার জানান , ইতোমধ্যেই আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি নদী ভাঙনের বিষযয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়জনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য জানাবো এবং ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষকে যথাসম্ভব খাদ্য, চিকিৎসাসহ সকল প্রকার সহায়তা করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙন

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ