Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় আয় ২০ ও ব্যয় ৬ শতাংশ কমেছে

জীবিকার ওপর ধারণা জরিপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

প্রাণঘাতি করোনার প্রভাবে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। করোনাকালীন সময়ে বন্ধ হয়েছে অসংখ্য শিল্পকারখানা ও দোকানপাট। চাকুরি হারিয়ে অনেকে চলে গেছেন গ্রামে। করোনার প্রভাবে অনেক পরিবারের আয় কমে গেছে। আয় কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে খরচও কমে গেছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে উঠে এসেছে, করোনার প্রভাবে দেশে খানা প্রতি মাসিক গড় আয় কমেছে তিন হাজার ৯৩৩ টাকা। দেশে করোনা শুরুর আগে মার্চে একটি খানায় গড় আয় ছিল ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা। আগস্টে সেটি কমে এসেছে ১৫ হাজার ৪৯২ টাকায়। সেই হিসেবে একটি খানায় গড় আয় কমেছে তিন হাজার ৯৩৩ টাকা। শতাংশের হিসেবে ২০ শতাংশ। অন্যদিকে আয় কমে যাওয়ায় খরচও কমে গেছে। মার্চে যেখানে একটি খানায় মাসে খরচ ছিল ১৫ হাজার ৪৩ টাকা। আগস্টে সেটি কমে হয়েছে ১৪ হাজার ১১৯ টাকা। সে হিসেবে খরচ কমেছে ৯২৪ টাকা। শতাংশের হিসেবে ব্যয় কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। বিবিএস বলছে, করোনাকালীন সময়ে দেশে খানাভিত্তিক আয় কমলেও সেই তুলনায় ব্যয় কমেনি।

গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল তুলে ধরে বিবিএস। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) শেষে জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এসময় অন্যদের মধ্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো.তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

বিবিএস জানিয়েছে, করোনাকালীন সময়ে মানুষের জীবিকার ওপর কি ধরনের অভিঘাত এসেছে তা জানার জন্য দৈবচয়নের ভিত্তিতে মোট দুই হাজার ৪০টি মোবাইল ফোন নম্বর নির্বাচন করা হয়। গ্রামীণফেনের ৯৫০টি নম্বর থেকে ৫২৩ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। রবি থেকে ৬৫০ জনের মধ্যে জরিপে অংশ নেন ৩০৮ জন। বাংলালিংক থেকে ৪৩৭ জনের মধ্যে প্রকৃত উত্তরদাতা ১৩৭ জন এবং টেলিটকের ৪৮টি নাম্বারের মধ্যে ২১ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে উত্তরদাতার হার দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ বা ৯৪৯ জন। ১৩ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর এই সাতদিনে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, চলমান করোনার সময়ে ৫৩ শতাংশ খানা কোনো না কোনোভাবে খাবার খাওয়া কমিয়েছে। উত্তরদাতার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ খানা জানিয়েছে, তাদের মাসিক আয় কমে যাওয়ার কারণে ভোগের পরিমাণ কমাতে বাধ্য হয়েছে। ৬৮.৩৯ শতংশ খানার সদস্যরা জানিয়েছে, করোনার অভিঘাতে তারা আর্থিকভাবে সমস্যার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে রিকশা ও ভ্যানচালক, দিনমজুর বেশিমাত্রায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে।

জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, কোভিডের অভিঘাত সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে। এই প্রভাব কতটা পড়েছে তা বের করতেই প্রথমবারের মতো এই ধারণা জরিপ পরিচালনা করেছে বিবিএস। এটা একটি ভাল উদ্যোগ।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, আমরা প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। এই স্যাম্পল সাইজ জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। কেননা ৯০০ এর বেশি হলেই সেটি গ্রহণযোগ্য হয়। তিনি বলেন, করোনার সময়ে মানুষের আয় যতটা কমেছে, কিন্তু ব্যয় ততটা কমেনি।

কোভিড-১৯ বাংলাদেশ: জীবিকার উপর অভিঘাত ধারনা জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, করোনাকালীন সময়ে আার্থিক সংকট মোকাবেলায় ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পরিবার সরকারি সহায়তা পেয়েছে। আর সরকারি ত্রাণ গ্রহণকারী এ পরিবারগুলোর ৯৪ দশমিক ৪৪ শতাংশের আগস্ট মাসের এবং ৮২ দশমিক ৬৪ শতাংশের মার্চ মাসের আয় ছিল প্রায় ২০ হাজার টাকা। এতে দেখা যায় সরকারি ত্রাণ বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো পেয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে দেশের বেকার পরিস্থিতি। গত মার্চ মাসে বেকারের শতকরা হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। করোনার প্রভাবে সেটি হুহু করে বেড়ে গিয়ে এপ্রিল-জুলাই পর্যন্ত (চার মাসে) এ হার দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশে। তবে সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা কমে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিবিএস বলেছে, বর্তমানে দেশে একটি গতিশীল শ্রমবাজার বিদ্যমান রয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। চলমান মহামারির অভিঘাত ক্রমান্বয়ে কেটে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিন মজুরের সংখ্যা পুনরায় আগের সংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছেছে। মার্চে দিনমজুরের সঙ্গে যুক্ত ছিল ছিল আট শতাংশ পরিবার। সেটি জুলাইয়ে কমে হয় চার শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে আবারও বেড়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, করোনাকালীন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির সহায়তা পেয়েছে ৯ শতাংশ খানা, ওএমএস সহায়তা পেয়েছে সাত শতাংশ খানা। জরিপের তথ্য বলছে, মার্চে বেকারের সংখ্যা ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। সেটি জুলাইয়ে বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থ্যাৎ চার মাসে বেকার বেড়েছে দশ গুণ। যদিও এখন তা কমে চার শতাংশে নেমে এসেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ