Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত উৎপাদক-ব্যবসায়ীরা

ভাসমান পেয়ারাহাট

বরিশাল ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

করোনা সঙ্কটে ব্যাপক লোকসানের মাঝেই পিরোজপুর-ঝালকাঠির আটঘর-কুড়িআনা ও ভিমরুলির পেয়ারার মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে। ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত ভিমরুলীর পেয়ারার ভাসমানহাটে এবার ক্রেতার অভাব উৎপাদকদের চরম বিপাকে ফেলে। করোনা মহামারিতে ক্রেতার অভাবে দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত উৎপাদকসহ বাগান কেনা পাইকাররাও। এমনকি এবার ভিমরুলীতে পর্যটকদের আনাগোনাও তেমন ছিলনা। বিগত প্রায় এক দশক ধরেই বিপুল পর্যটক ছুটে আসছিলেন ঝালকাঠীর ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারারহাটসহ আটঘর-কুড়িআনার পেয়ারা বাগান দেখতে। চাষি এবং বাগান চাষিদের দাবি, এবার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা।
গত প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ঝালকাঠী ও পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী আটঘর-কুড়িআনার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সার্জন পদ্ধতিতে বিশাল বাগান থেকে ভিমরুলীর ভাসমানহাটে পেয়ারার বিপনন হয়ে আসছে। ঐসব বাগান থেকে ক্রেতারা ছোট ও মাঝারি নৌকায় এ ভাসমানহাটে পেয়ারা নিয়ে এসে নৌকাতেই তা বিক্রি করে আসছিলেন। আর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকাররা ভিমরুলীর ভাসমানহাট থেকে পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে দেশের বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করছিল।
কিন্তু করোনা সঙ্কটে দেশের অর্থনীতিতে যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, তার বিরূপ প্রভাব ঝালকাঠী-পিরোজপুরের পেয়ারার বাজারেও পড়েছে এবার। উৎপাদকরা বাগানে এক কেজি পেয়ারা ১০ টাকাও বিক্রি করতে পারেন নি। আর পাইকাররাও ভিমরুলীর ভাসমানহাটে ১২-১৫ টাকা কেজি দরে পেয়ারা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে একদিকে যেমনি উৎপাদকদের যথেষ্ট লোকশান গুনতে হয়েছে, তেমনি বাগান ক্রেতাদেরও পুজি ফিরে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চতার মধ্যেই মৌসম শেষ হয়েছে।
সারাদেশেই আটঘর-কুড়িআনার ‘মুকুন্দপুরী, লতা ও পুর্নমন্ডল’ জাতের মিষ্টি ও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন পেয়ারার সুখ্যাতি রয়েছে। এর স্বাদ ও গন্ধের কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ভারতের কোলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বাজার ও ত্রিপুরার আগরতলাতেও ‘বরিশালের পেয়ারা’ খ্যাত এ সুমিষ্ট ফলের সুখ্যাতি রয়েছে।
এবার পেয়ারার বাজার ও বাগানে পাইকারদের সীমিত পদচারনা ছিল। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী ও ফরিদপুর থেকে কিছু বেপারি নৌকা থেকেই পেয়ারা কিনে ট্রলার অথবা ট্রাকে করে তাদের গন্তব্যে নিয়ে গেছেন। আটঘর, শতদশকাঠি, কাফুরকাঠি, ভীমরুলি, জিন্দাকাঠি, ডুমরিয়া, খাজুরিয়া, বাউকাঠি, বেতরা, হিমানন্দকাঠি, পোষন্ডা, রমজানকাঠি, সাওরাকাঠি ও কাঁচাবালিয়া গ্রামে প্রতিবছরই ২০-২৫ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদিত হচ্ছে।
তবে দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ, পেয়ারা ও আমড়াসহ আরো কয়েকটি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানির যথেষ্ঠ সম্ভবনাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে এ অঞ্চলে একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরন অঞ্চল গড়ে তোলার বিবেচনার দাবি এ অঞ্চলের আমজনতার। এক সময়ে ইপিজেডের চেয়ারম্যানসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এলাকাটি ঘুরে ইতিবাচক মাতামত দিলেও পরবর্তীতে আর কিছু হয়নি। এমনকি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদুত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং ভারতের সদ্য বিদায়ী হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ’ও গতবছর ভিমরুলী’র ভাসমান পেয়ারার হাট ঘুরে দেখে উচ্ছাস ধরে রাখতে পারেননি।
তবে এবার বাজার মূল্য মন্দার মধ্যেও আগামী মৌসমের জন্য আবার আশার বুক বাঁধছেন আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারার উৎপাদকরা।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির রমজানকাঠি কারিগরি ও কৃষি কলেজের কৃষিবিদ ড. চিত্তরঞ্জন সরকার বলেন, ‘পেয়ারা বাগান খুব লাভজনক হয়ে উঠলেও এবার করোনা সঙ্কটে উৎপাদক ও পাইকারদের সমস্যায় ফেলেছে। তার মতে, এ অঞ্চলে পেয়ারা’কে নিয়ে এক ভিন্ন অর্থনৈতিক সম্ভবনার সৃষ্টি হলেও করোনা মহামারী সব ¤øান করে দিয়েছে এবার।
কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান মালিক অনিল বাবু জানান, বছর জুড়ে আশায় বুক বেঁধে থাকি আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পেয়ারা বিক্রি করে বছরের সংসার ব্যায় নির্বাহ করার। এবার চরম নিরাশায় এ অঞ্চলের পেয়ারা বাগান মালিক ও ক্রেতাসহ পাইকাররাও। একাধিক বাগান ক্রেতা ও পাইকার শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। এমনকি ভিমরুলীর নৌকা মালিক ও খাবার দোকানিরাও মলিন বদনে হাহাকার করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ