Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সৈকত খন্ডিত করে ইনানীতে অনুমোদনহীন বাঁধ সরিয়ে নিতে হবে-এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল

সৈকতে অনুমোদনহীন বাঁধ হতে পারেনা-কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল ফোরকান আহমদ

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২০, ৭:৪৮ পিএম

প্রতিবাদে বুধবার ডিসি অফিসের সামনে পরিবেশ সংগঠনের মানববন্ধন
কক্সবাজার সৈকতের ইনানী হোটেল রয়েল টিউলিপ সোজা অনুমোদনহীন বাঁধ কিছুতেই সমর্তনযোগ্য নয়। এটি অবিলম্ব সরিয়ে ফেলতে বলেন এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল। এখানে একটি অনুমোদনহীন একটি বাঁধ দিয়ে সৈকতকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে।
পারিবেশবাদী ও সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে এই অবৈধ বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে কক্সবাজার সদরের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল একথা বলেন।
তিনি বলেন, এই বাঁধ যেমন বাংলাদেশের গর্ব বিশ্বের ধীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকতকে দ্বিখণ্ডিত করে সৌন্দর্য নষ্ট করছে। তেমনি এই বাঁধের কারণে কক্সবাজারের আরেক গর্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে করা
১২০ কিমি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক হুমকির মুখে পড়বে। তাই সরকারের কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনহীন এই বাঁধ কিছুতেই করা যায়না।
এমপি কমল বলেন, নৌবাহিনীর প্রয়োজনে রেজুখালের মোহনা অথবা নৌবাহিনীর ইয়ার ব্যাচের স্থানে আধুনিক প্রযুক্তির নির্ভর জেটি করলে কারো আপত্তি থাকবেনা। মঙ্গলবার বিকেলে ওই বাঁধ পরিদর্শনকালে এমপি কমল একথা বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক আন্দোলন বাপার সভাপতি সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী, নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন শাহ আলম, জেলা জাসদ সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী টুটুল,পরিবেশবীদ হেলাল উদ্দিন, সহ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা ও মিডিয়াকর্মীরা।

ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সোজা সৈকতে অনুমোদনহীন বাঁধ দিয়ে সৈকত দ্বিখন্ডিত করার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে কক্সবাজার। এর প্রতিবাদে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো একাধিকবার মানববন্ধন করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। ১২০ কিমি সৈকত কক্সবাজারের শুধু নয় গোটা বাংলাদেশের গর্ব। এটি খন্ডিত করার প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা সরিয়ে ফেলার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত ফোরকান আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার সদরের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন শাহ আলম, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহজাহান, পরিবেশ সাংবাদিক নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী, জেলা জাসদ সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, এনজিও কর্মী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম।
এসময় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি সহ সাংবাদিকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান বলেন, কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া এই বাঁদ কিছুতেই হতে পারেনা। তবে রাষ্ট্রীয় যেকোনো প্রয়োজনে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে যেকোন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনায় কারো কোনো আপত্তি থাকবে না। তিনি বলেন, তাঁর জানামতে এবিষয়ে জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তর এর অনুমতি নেয়া হয়নি।

মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন হলে যেকোনো কাজে কক্সবাজারবাসী সহযোগিতা করতে রাজি। তবে পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। আমাদের গর্ব দীর্ঘ সৈকত খন্ডিত করে নয়।

সাবেক জেলা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বলেন, দেশের গর্ব কক্সবাজার সৈকত খন্ডিত করে যে কোনো কার্যক্রম কক্সবাজারবাসী মেনে নেবে না। এছাড়াও বাংলাদেশের গর্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে করা ১২০ কিমি মেরিন ড্রাইভ হুমকির মুখে পড়ার মতো কোনো কাজ করতে দেয়া হবে না। তিনি রেজু খালের মোহনা অথবা টেকনাফ ১২০ কিলোমিটার সৈকতের পরে সম্ভাব্য যেকোনো স্থানে উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে জেটি করা হলে কারো আপত্তি থাকবে না বলে জানান।

সভায় কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের এডি সামান্তা বলেন, ইনানীতে সৈকত দ্বিখন্ডিত করে বাঁধ দেয়ার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন ধরনের অনুমোদন নেয়া হয়নি।

সভায় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টে শাহ আলম বলেন, ২০২১ সালে ৭ দিনের একটি নৌ মড়রা হবে কক্সবাজারে। এতে ৩৫ দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা অংশ গ্রহণ করবেন। কক্সবাজার সোজা সাগরে অনুষ্ঠিতব্য মহড়ার প্যারেড়ে সালাম গ্রহণ করবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাগরে অনুষ্ঠিতব্য সেই প্যারেড়ে অংশ নিতে এখন থেকে এই বাঁধ বা জেটি নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি বলেন এটি সম্পুর্ণ একটি অস্থায়ী জেটি। মহড়া শেষে এটি সরিয়ে নেয়া হবে। তিনি বলেন, এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলো থেকে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন,
এই মহড়ায় অংশগ্রহণকারী ৩৫টি দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা কক্সবাজার আসলে এই দেশগুলোর সাথে কক্সবাজারের সাগর পাড়ের মানুষের একটি মেলবন্ধন সৃষ্টি হবে বলে তিনি জানান। এ ধরনের মহড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়ে থাকেন বলেও তিনি জানান।

তবে তার এই কথায় কক্সবাজারের পরিবেশবাদী ও সাংবাদিকেরা আস্তায় আনতে পারছেন না। হোটেল রয়েল টিউলিপ সোজা এই বাঁদ হওয়ায় এর পেছনে রয়েল টিউলিপ এর সৈকত দকলের পাঁয়তারা থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা। পরিবেশবাদীরা জানান, ইতিপূর্বে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর কক্সবাজার আগমনে হোটেল রয়েল টিউলিপ সোজা সৈকতে ভরাট করা জায়গাটি রয়েল টিউলিপ কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে দখল করে রেখেছ। এটি প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা করে তারা ভাড়া আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে বুধবার সকালে এই বাঁদ বা জেটি নির্মাণ বন্ধের দাবীতে পরিবেশবাদী সংগটন গুলো মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ