পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাছে ভাতে বাঙালি। বাঙালির খাবার প্লেটে মাছ না হলে যেন পরিপূর্ণ হয় না। আর সেই মাছ যদি ইলিশ হয় তাহলে তো কথায় নেই। একেবারে সোনায় সোহাগা। ইলিশকে মাছের রাজা বলা হয়। ইলিশ এখন পুকুরে চাষ হচ্ছে। যদিও কমন ইলিশ নয়। কিন্তু স্বাদ ও গন্ধ প্রায় সমতুল্য। নাম মনিপুরি ইলিশ। গড়নে পুঁটি মাছের মতো। কোথাও কোথাও এটি পেংবা মাছ হিসেবেও পরিচিত। তবে এটি যে ইলিশের বিকল্প এতে কোন সন্দেহ নেই। চীন ও মায়ানমারের নদীতে মাছের জাতটির বিচরণ। ভারতের মনিপুর রাজ্যে ওটি ‘স্টেট ফিস’। মনিপুরি ইলিশ সেখানে ইলিশের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। মনিপুর রাজ্যে শুরু হলেও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, বর্ধমান ও উড়িষ্যার বিভিন্ন জায়গায় এই মাছ চাষ হচ্ছে। এপার ও ওপারের মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়. উড়িষ্যার ‘সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অব ফ্রেশ ওয়াটারের ফিসের’ মৎস্য বিজ্ঞানীরা বলেছেন, স্বাদে ও গন্ধে ইলিশেরও হার মানায় অনেকক্ষেত্রে।
বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানেও পুকুরে ওই ইলিশ চাষ শুরু হয়েছে। সিটি গোল্ডের গহনা তৈরি করে ভারতের একচেটিয়া বাজার বন্ধের রেকর্ড রয়েছে সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুরের। এবার সেখানে ব্যাপকভাবে পুকুরে ওই ইলিশ মাছের চাষে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে উপজেলাটি। বর্তমানে পুকুরে ইলিশ চাষের রীতিমতো হিড়িক পড়েছে। ঝিনাইদহ ও যশোর এলাকার বহু মৎস্য চাষি বিশেষ করে যারা মা মাছ থেকে পোনা উৎপাদন করে থাকেন তারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় যাচ্ছেন খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মিডিয়া কর্মীরাও সংবাদ সংগ্রহে ছুটছেন। ভিড় করছেন উৎসুক লোকজন।
মহেশপুরের পান্তাপাড়া ও বাশবাড়িয়া ইউনিয়নের পান্তাপাড়া, তুলসীতলা ও বাগানমাঠ গ্রামের প্রায় অর্ধশত ছোট বড় পুকুরে ইলিশ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন অনেকেই। পুকুরের ইলিশ বাজারে উঠলে আর কাড়াকাড়ি লাগবে না। লাখ লাখ পোনা ছাড়া হয়েছে পুকুরে। মহেশপুরের মৎস্যচাষি অলিমুজ্জামান জানান, তিনি প্রথমে মাছটির পোনা সংগ্রহ করেন ময়মনসিংহ থেকে। তিনি জানান, ময়মনসিংহের হ্যাচারি সংগ্রহ করে মনিপুর থেকে। ২০১৯ সাল থেকে মূলত ইলিশের পোনা উৎপাদন ময়মনসিংহে শুরু হয়। সেখান থেকে মহেশপুর ও হরিণাকুন্ডু ছাড়াও অন্যান্য এলাকার পুকুরে ইলিশের ওই পোনা ছাড়া হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে বাজারে ওই ইলিশ পাওয়া যাবে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
মৎস্য চাষি ও বিশেষজ্ঞরা জানান, ওই ইলিশ মাছটি দেখতে দেশি পুঁটিমাছের আদল। তবে পুঁটির থেকে আকারে বেশ বড়। স্বাদে একেবারে ইলিশের মতো। মাছটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলে কমন ইলিশের উপর চাপ কম পড়বে। বছরের বারো মাসই ইলিশের স্বাদ পাওয়া যাবে। ইলিশ মাছ ক্রয়ের সাধ আছে সাধ্য নেই অবস্থার লোকজনের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। মৎস্য চাষিরা আশা করছেন স্বল্পমূল্যে ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ পাবেন। যারা চাষ করছেন তারাও মনে করছেন স্বল্পমূল্যে প্রচুর ইলিশ সরবরাহ করতে পারবেন। মৎস্য চাষিরা জানান, মাছটি দেখতে মাথার অংশ ইলিশের আর পেছনের অংশ পুটি মাছের মতো, কিন্তু স্বাদ ও গন্ধে পুরোটাই ইলিশ।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এ্যান্ড বায়োসায়েন্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর সিরাজুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ইলিশের কয়েকটি প্রজাতি আছে। কোন প্রজাতির ইলিশ চাষ হচ্ছে এটি আমার জানা নেই। তবে কমন ইলিশ পুকুরে চাষ করা যায় কী না তার পরীক্ষা চলছে চাদপুরে। গ্রোথ ও স্বাদ সাধারণত হয় না বললেই জানি। তবুও গবেষণা চলছে। অদুর ভবিষ্যতে হলেও হতে পারে।
মহেশপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভারতের মনিপুরি রাজ্যে মাছটি ব্যাপক চাষ হয়। সেজন্য এটি মনিপুরি ইলিশ হিসেবে পরিচিত। মাছটি পেংবা বলেও অনেকস্থানে পরিচিত। মৎস্যচাষিরা পুকুরে ওই ইলিশ চাষ শুরু করেছেন। মৎস্য বিভাগ সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। কোথায় কী সমস্যা তার খোঁজখবর রাখছেন। চাষের প্রযুক্তি জ্ঞানও দিচ্ছেন। এলাকার আত্তাব আলী, সজিব হোসেন, ওসমান গণী, জায়েদ আলী, আব্দুর রহিম, মকছেদ আলী, জুলমত আলীসহ মৎস্যচাষিদের কথা এলাকার প্রায় অর্ধশত পুকুরে ১০ লাখ পোনা ছাড়া হয়েছে। মৎস্যচাষি আব্দুল আলিম একাই ৪ বিঘার একটি পুকুরে ৬০ হাজার পোনা ছেড়েছেন। পুকুরে পোনা ছাড়ার সময় কেজিতে ৫ হাজার বাচ্চা ছিল, যা গত দেড় মাসে অনেকটা বড় হয়েছে। বর্তমানে ৩৫ টি মাছে এক কেজি ওজন হচ্ছে। ৭ থেকে ৮ মাস বয়স হলেই বাজারে তোলা যাবে। মিঠাপানিতে উৎপাদিত এই মাছ বাজারে পর্যাপ্ত আমদানি হলে ইলিশের চাহিদা অনেকটা পুরণের পাশাপাশি চাষীরাও লাভবান হবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।