পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নয়নের ওপর ভর করে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। আগামী ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। আগামী ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগেই চলমান বড় বড় প্রকল্পগুলো জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দলকে এগিয়ে নিতে পারবে এমন ‘যোগ্য নেতৃত্ব’ বাছাই করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। ঠিক সময়ে যেন সকল প্রকল্পের কাজ শেষ করা এবং দলের তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংকটের মধ্যেও নিয়মিত গণভবন থেকে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড ও দলীয় কর্মকান্ড তদারকি করছেন।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের আগেই পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, কর্ণফুলি টানেল, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কাজসম্পন্ন করা হবে। এছাড়াও ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রকল্প দ্রুত শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই প্রত্যেকটি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির আলাদা আলাদাভাবে খোঁজ নিচ্ছেন। অর্থের অভাবে প্রকল্পের কাজে যেন ধীরগতি না আসে সেজন্য অর্থ ছাড় দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সময় বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর অসাধু প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনের আগেই সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা জনগণকে দিতে চায়। ‘উন্নয়ন’ ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে ওই নির্বাচনের দলের নির্বাচনী ইশতেহার করা হবে।
এর পাশাপাশি দলীয় কর্মকান্ডে গতি আনতে নির্দেশনা দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর বৈঠকে সারাদেশের দলীয় কাজে গতি আনতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের দলীয় কাজে অংশগ্রহণ বাড়াতে বলেছেন। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে আলাদা ৫টি সাংগঠনিক টিম করা হয়েছে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্র জানায়, দলের গত সম্মেলনের আগে পরে মোট ৩১টি জেলার সম্মেলন হয়েছে। এগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি যেন শক্তিশালী হয়, অনুপ্রবেশকারীরা যেন দলে না ঢুকতে পারে।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সঠিক সময়ে প্রকল্প শেষ করার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে কঠোর সরকার। সময় মত সব প্রকল্প শেষ করা হবে। গত নির্বাচনের আমাদের দলের ইশতেহার ছিল। আগামী নির্বাচনের আগে জনগণকে দেয়া সেই ইশতেহার অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সময় মত সব প্রকল্প শেষ করার বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে। প্রকল্প সংশোধনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হচ্ছে। তিন বার কোনো প্রকল্প সংশোধনের জন্য প্রস্তাব এলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ইনকিলাবকে বলেন, গত নির্বাচনে আমাদের ওয়াদা ছিল পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বড় বড় কয়েকটি প্রকল্প জনগণকে উপহার দেয়া হবে; আগামী নির্বাচনের আগেই জনগণ সে সুফল পাবে। এছাড়া শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এসডিজি অর্জন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ওয়াদা ছিল। বড় বড় প্রকল্পগুলো উদ্বোধন হলেই দেশের আমূল পরিবর্তন আসবে। আগামী নির্বাচনের আগেই জনগণ এসব উন্নয়নের সরাসরি উপকার পাবে।
সূত্র জানায়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতারর কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে বেশি সময় ব্যয় করা হচ্ছে। এতে করে ব্যক্তিগভাবে আমলারা নানা সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে ফায়দা লুটছেন। কিন্তু সরকার দ্রæত কাজ করতে চায়। জানা যায়, প্রকল্পের সিডিউল রেট পরিবর্তন, ডিজাইন পরিবর্তন, স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন, ভ‚মি অধিগ্রহণ ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্ত বা কর্মপরিধি বৃদ্ধির নামেই কৌশলে প্রকল্প সংশোধন করা হয়। কিন্তু এর পেছনে আমলাদের থাকে অন্য উদ্দেশ্য। কেন না প্রকল্প যতদিন চলবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা ততদিন সুবিধা নিতে পারবেন। প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার, ভাতা নেয়াসহ নানা সুবিধার কারণে সংশ্লিষ্টরা চান না দ্রæত প্রকল্প শেষ হয়ে যাক। তাছাড়া প্রকল্প তৈরির সময়ই দক্ষতার অভাব থাকে। যেনতেনভাবে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ফলে বাস্তবায়ন পর্যায় এসে ডিজাইন পরিবর্তন, নতুন অঙ্গ সংযোজন করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে এবার বেশ কঠোর হয়েছেন। প্রকল্পে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য দেখানোর বিষয়ে কঠিনভাবে যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর কাজ ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের শুরুতে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। ২০২৪ সালে পদ্মাসেতুর রেল প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২২ সালের শুরুতে মেট্রোরেলেও যাত্রী চলাচল শুরুর টার্গেট নিয়ে কাজ করছে সরকার। এছাড়া ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি টানেলও উদ্ধোধন করা হতে পারে।
দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্পের বিষয়ে রেল মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, বনের জায়গা নিয়ে সমস্যা হওয়ার কারণে সরকারের এ মেগা প্রকল্পের কাজ শুরুতে বিলম্ব হলেও এরইমধ্যে এর ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যেই এ প্রকল্পটি আমরা সম্পন্ন করতে পারব।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৩ সালের অক্টোবরে উৎপাদনে নিয়ে আসার টার্গেট রয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সরকারের প্রত্যাশা, ২০২২ সালের শুরুতে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসতে শুরু করবে। এছাড়া ২০২৩ সালে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পায়রা বন্দরের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে সরকারের উন্নয়নের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী, অপরাধীদের বাদ দিয়ে সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সামনের কাতারে নিয়ে আসতে নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ৩১টি জেলার সম্মেলন হয়েছে, সেসব জায়গায় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যোগ্যদের বাছাই করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি যাচাই বাছাই করে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এছাড়া সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ ঢেলে সাজানো হয়েছে, সেগুলোরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি জমা দেয়া হয়েছে, যাচাই-বাছাই শেষে তা ঘোষণা করা হবে। এছাড়া করোনার উপদ্রব শেষ হলে যেসব জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন হয়নি তা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হবে। অপরাধীরা যেন জায়গা না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। ইতোমধ্যে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের মধ্যে অনেকে গ্রেফতার, অনেকে বহিষ্কার হয়েছে অপকর্ম, অপরাধের জন্য।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিতর্কিত, অপরাধী, অনুপ্রবেশকারীরা যেন দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান না পায় সেদিকে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বলন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দলের ত্যাগীরা সামনের কাতারে থাকুক। করোনার উপদ্রব শেষ হলে আবারও জেলা ও উপজেলা সম্মেলন করে দলকে গতিশীল করা হবে। আগামী নির্বাচনের আগে তৃণমূল সংগঠনকে শক্তিশালী করা হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর একজন সদস্য বলেন, এখন যেসব কমিটি করা হবে তা আগামী নির্বাচনের আগে আর ভাঙা হবে না। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা আগামী নির্বাচনে দলের জন্য কাজ করবেন। যারা নতুন দায়িত্ব পাবেন তারা আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে নিজেরা সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারবেন ফলে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।