Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিলুপ্তির পথে শ্রাবণের রানী পদ্মফুল

‘পদ্মদীঘির ধারে ধারে ঐ সখি লো কমল-দীঘির পারে’

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

‘পদ্মদীঘির ধারে ধারে ঐ সখি লো কমল-দীঘির পারে’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি জনপ্রিয় গানের কলি। পদ্মফুল নিয়ে রচিত এ গানটি তৎকালীন গ্রামীণ বাংলার মানুষের মাঝে এক অনাবিল আনন্দ সমীরণের যোগসূত্র তৈরি করেছিল। পদ্মফুলের পাতা নিয়ে আধুনিক গান লিখেছেন বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক খান আতাউর রহমান। গানের প্রথম লাইন ‘জীবন সে তো পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু’। নিজেই সুর করেছেন এবং কণ্ঠ দিয়েছেন নিলুফার ইয়াসমিন। এই গানটিও ছিল বেশ জনপ্রিয়। তাইতো পদ্মফুল নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক কবিতা ও গান।
এক সময় গ্রামীণ জনপদে পরিচিত অসংখ্য ফুল ছিল। পথ চলতে দু’পাশে ঘাস ফুলের পাশাপাশি বিলঝিলে নাম না জানা অনেক ফুল দেখা গেলেও পদ্মফুল ছিলো অন্যতম। শ্রাবণ থেকে শুরু করে শরতের শেষ অবধি এই ফুলের সমাহার দেখা যেত গ্রামের অধিকাংশ পুকুর,দীঘি, বিলঝিল ও পতিত জমিতে।

সভ্যতার বিবর্তন, শিল্পায়ন, যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারে পরিণত হওয়ায় চাহিদা বাড়ছে বসতভিটার। ফলে ক্রমাগত খাসপুকুর ও ব্যক্তি মালিকানধীন পুকুর ভরাটের ফলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বিলুপ্তপ্রায় শ্রাবণের রাণী খ্যাত সবুজ পাতায় সমৃদ্ধ গোলাপী পদ্মফুল। তবে উপজেলার কয়েকটি গ্রামের পুকুরে এখনো এই ফুল থাকলেও এর রূপ আগের মতো নেই।

জানা গেছে, অনিন্দ্য সৌন্দর্যের কারণেই পদ্মকে ফুলের রানী বলা হতো। পদ্মফুল সাধারণত সাদা, গোলাপী অথবা হালকা গোলাপী রংয়ের হয়। অনেকেই লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের মধ্যে মিল থাকার কারণে চিনতে ভুল করেন। কিন্তু এর বীজপত্রটা ভালোভাবে দেখলেই পার্থক্য বোঝা যায়।

অপরদিকে, কাশ্মীর আর ইরানে নীল বর্ণের পদ্ম ফুলের দেখা মেলে যাকে নীলপদ্ম বা নীল কমল বলে। পদ্মফুল প্রধানত শরৎকালে ফোটে। তবে কখনো কখনো বর্ষাকালেও লাল পদ্মের দেখা পাওয়া যায়। পানির ওপর পদ্মের সবুজ পাতায় মুষলধারে বৃষ্টি পড়ায় সৃষ্ট শব্দ প্রকৃতির অনন্য সমৃদ্ধ সম্ভার। এসময় বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে বিলপাড়ে থাকা কেউ কেউ পদ্ম ফুলের পাতা তুলে মাথায় ধরে রাখে। আবার কেউ ছাতার মতো মাথায় দিয়ে গন্তব্যে ফেরে। ফুল ফোটার সময় এলে দূর থেকে পদ্ম পুকুরের সৌন্দর্য দেখতে অনেকে ছুটে যেত। এক সময়ে গোদাগাড়ী উপজেলার অনেক গ্রামে গোলাপী রংয়ের পদ্মফুল দেখা যেত। বিশেষ করে ছিত্রাপুর, বাসডোল, ভাসা, মানদীঘি, কালিদীঘি, সোনাদীঘি, বিল পাতিকলা, দুরগাদহ বিল, কমলাপুর বিলসহ বিভিন্ন গ্রামে বড় বড় পকুরে পদ্মফুলের মনমাতানো সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ে ঘরবাড়ি, বাজার, দোকানপাট, খামার নির্মাণ শিল্পায়নের ফলে পুকুর ও ঝিল ভরাট হওয়ায় অনেকটাই বিলুপ্ত পদ্মের সৌন্দর্য শোভা।

লেখক ও কবি দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, এক সময়ে অবসাদগ্রস্ত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ নিজের ক্লান্তি ভুলে মনকে প্রফুল্ল করতে ছুটে যেতেন পদ্মফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পুকুরের কাছে। তারা অপলক দৃষ্টিতে পদ্ম পুকুরের দিকে তাকিয়ে সুখ অনুভব করতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে গোদগাড়ীর গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পদ্মফুল।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, গোলাপী পদ্মফুল সত্যিই বিলুপ্ত হতে চলেছে। ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণের অংশ হিসেবে অন্তত এই ফুল সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। পদ্মফুল হলো প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য এবং সৌন্দর্য। একসময় বাংলাদেশের খাল বিলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মাতো পদ্মফুল। বাংলাদেশের সৌন্দর্যের অনেকখানি জুড়ে ছিল এই ফুল। পদ্মফুল ছাড়া বাংলাদেশের সৌন্দর্যের পূর্ণতা অকল্পনীয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রাবণ

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ