পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীরা ছোট ছোটে গ্রুপে ভাগ হয়ে চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এক গ্রুপের সদস্যরা অন্য গ্রুপের সদস্যদের খুন করতেও দ্বিধাবোধ করছে না। পারিবারিক শিক্ষা, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে কিশোররা এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে রাজধানীর উত্তরায় দুই গ্রুপের বিরোধের জেরে স্কুলছাত্র আদনান নিহত হওয়ার পর ‘গ্যাং কালচার’ আলোচনায় আসে। এরপর ঢাকার বাইরেও কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপ গড়ে উঠে। বর্তমানে ৩০ থেকে ৩২টি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য সক্রিয় রয়েছে। করোনাকালেও তারা মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরধ পরিচালনা করছে।
সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় সোহাগ নামের এক কিশোর ওই চক্রের সদস্যদের হাতে খুন হয়েছেন। পুলিশ জানায়, ওই দিন রাতে দক্ষিণখান রাজাবাড়ী খ্রিষ্টানপাড়া রোডের ডাক্তারবাড়ী মোড়ে কিশোর গ্যাং ‘দি বস’র হৃদয়, রাসেলসহ বেশ কয়েকজন সদস্য আড্ডা দিচ্ছিল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে একই রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটি রিকশার চাকা থেকে কাদা ছিটকে হৃদয়ের গায়ে লাগলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে রিকশাচালককে মারধর করতে থাকে। একজন অসহায় রিকশাচালককে সমবয়সী একজন ছেলেকে মারতে দেখে সোহাগ এগিয়ে আসে। সোহাগের প্রতিবাদে হৃদয় ও রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে ফোন করে তাদের গ্যাংয়ের অন্য সদস্য নাদিম, সানি, মেহেদী, সাদ, সাব্বিরসহ বেশ কয়েকজনকে ডেকে আনে এবং সবাই মিলে সোহাগের ওপর চড়াও হয়। এ সময় নাদিমের কাছে থাকা ধারাল ছোরা নিয়ে কাটার রাসেল সোহাগের পেটে উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় গত সোমবার রাতে দক্ষিণখান থানাধীন মোল্লারটেক থেকে রাসেল ওরফে কাটার রাসেল ও মো. হৃদয়কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও হত্যার কথা স্বীকার করেছে তারা।
এর আগে গত ১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ পাঠানটুলী এলাকায় আহাদ আলম শুভ মিয়া নামের এক যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। নিহত শুভ পাঠানটুলীর মো. বশির মিয়ার ছেলে। এলাকার এক যুবককে চড়-থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতেই শুভকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও শুভ’র স্বজনরা।
এছাড়া গত ৪ আগস্ট ফতুল্লার গাবতলীতে ওয়াসিফ গাউসিল উৎস নামের এক কিশোর রামদা হাতে নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করে। এলাকার একটি ভিডিও ফুটেজে এ ঘটনা ধরা পড়ে। ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, উৎস বড় একটি ছোরা নিয়ে একটি গলি থেকে উত্তেজিত অবস্থায় বের হয়ে আসে। কয়েকজন অনুসারি নিয়ে কয়েক মিনিট পর সে আবারও সেই গলিতে ঢুকে। ওই ঘটনার পর স্থানীয় নিজামের মা নূরজাহান বেগম ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দেন। তিনি অভিযোগ করেন, উৎস ১০ থেকে ১৫ জন নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ৪ আগস্ট নিজামকে ধাওয়া করে। এ সময়ে প্রতিপক্ষের কাছে দেশীয় অস্ত্র ছিল।
এছাড়া গত ১০ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে আত্মরক্ষার্থে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দেয় বন্দরের কদমরসুল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মিহাদ (১৮) ও বন্দরের বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র জিসান (১৫)। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই দুই কিশোরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এর আগে গত ১ এপ্রিল ফতুল্লার দেওভোগ আদর্শনগর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা শরি হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত শরিফের বাবা আলাল মাতব্বর জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য শাকিল ও লালনসহ কয়েকজন শত্রুতার জেরে তার একমাত্র ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
এদিকে, হঠাৎ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে যাওয়াতে গোয়েন্দারা মাঠে নামে। পরে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এতে বলা হয়েছে, গত বছর কিশোর গ্যাংয়ের বিবাদে খুন হয়েছেন পাঁচ কিশোর। আর এ বছরের প্রথম আট মাসেই আরো সাত কিশোর খুন হয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রতিবেদনে রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের ১০টি এলাকাকে শনাক্ত করা হয়েছে। এলাকাগুলো হলোর মধ্যে উত্তরা পশ্চিম, তুরাগ, খিলগাঁও, দক্ষিণখান, টঙ্গী, ডেমরা, সূত্রাপুর, সবুজবাগ, খিলক্ষেত ও কোতোয়ালির নাম উঠে এসেছে। আর এসব এলাকায় ৩২টি কিশোর গ্যাং বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ কিশোর জড়িত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা এখন ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, ধর্ষণ, অস্ত্র ব্যবসা, পাড়া-মহল্লায় নারী ও কিশোরীদের উত্ত্যক্ত করা, খুন ইত্যাদি কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। কখনো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়, আবার কখনো সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে তারা এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের এ কর্মকান্ডের ফলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন স্থানে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ আরো বলা হয়, গত ২৫ মার্চ মহামারীর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গার্মেন্টস ও কল-কারখানাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে শিল্প-কারখানা চালু হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোর-কিশোরীদেও লেখাপড়ার চাপ নেই। তাই বর্তমানে পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে আড্ডা দেয়াসহ বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে মারামারি ও খুনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদেও এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ভবিষ্যতে মাধ্যমে বড় ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা সংঘটিত হতে পারে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিশোর গ্যাংগুলোকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া থেকে বিরত থাকাসহ ১২ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিশু-কিশোরদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে অভিভাবকদের আরো যতœবান হওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদান, পারিবারিক বন্ধন জোরদার করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা, বির্তক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন আয়োজনের ব্যবস্থা করা, স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনসহ শিক্ষকদের মোটিবেশনাল ভুমিকা রাখা, গণমাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও অনুষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি সুবিধা বঞ্চিত ও দারিদ্র শিশু-কিশোরদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিশু-কিশোরদের গ্যাং কালচার থেকে ফিরিয়ে আনা, কিশোর গ্যাং নির্মূলে গ্যাং হটস্পর্টগুলো চিহিৃত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা থেকে বিরত থাকা, পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন করে জনসচেতনা বৃদ্ধি কার, জুম্মার খুৎবায় কিশোর অপরাধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বক্তব্য দেয়া, কিশোর উন্নয়নে পাঠিয়ে নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মানসিকভাবে সংশোধনের ব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীরা যাতে লেখাপড়া ব্যতীত অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারে সেই ব্যাপারে অভিভাবকদের সর্তক থাকতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, মাদক, অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহারসহ নানা কারণে এ ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা। এছাড়াও পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা না থাকায় কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার প্রভবনাতাও কমে গেছে। তাই এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্মীয়, নৈতিক শিক্ষা বৃদ্ধি ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরধারি বাড়ালে এ ধরনের অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হবে মনে করেন তিনি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন স্থানে এ ধরণের কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারপরও জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় একই রকম কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তবে এই অপরাধ দমনে পুলিশ চেষ্টা করছে। কিন্তু কেবলমাত্র আইন প্রয়োগ করে এই সমাধান সহজ নয় বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিকসহ নানা ধরনের বিষয়াদি জড়িত রয়েছে। তাই আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।