Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মজুদদারিতে খাদ্য সঙ্কটের শঙ্কা

না খেতে পেয়ে মৃত্যু হবে ৩ কোটি মানুষের : ডব্লিউএফও

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:৫৮ এএম

করোনা মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এই আতঙ্কে বিত্তশালী ও খাদ্য সরবরাহকারীরা অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে। বাংলাদেশেও অতিমুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা ধান-চাল মজুদ করেছেন। এ কারণে সরকার চলতি মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এর ফলে অনেকে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন। তবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বলছে বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।

‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’ (ডব্লিউএফও)-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোটা বিশ্বের কোনো প্রান্তেই খাদ্য জোগানের কোনো অভাব নেই। কিন্তু করোনা মহামারি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর বিত্তশালী ও খাদ্য সরবরাহকারীরা যদি আতঙ্কে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করতে শুরু করেন, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে খাবার পাবেন না দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের ২৭ কোটি মানুষ খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়তে চলছেন। করোনা মহামারি এভাবে চললে এ বছরের শেষেই ১৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ খাদ্যাভাবের কবলে পড়বেন। অবিলম্বে সাহায্যের হাত না-বাড়ালে না খেতে পেয়ে অন্তত ৩ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে। এ জন্য জাতিসংঘের খাদ্য বিভাগের প্রধান বিশ্বের ধনকুবেরদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।
করোনা মহামারি এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে বাংলাদেশেও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ ধান-চাল মজুদ করেছেন। মজুদদারদের কারসাজিতে ধান-চালের আকাল না থাকা সত্তে¡ও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। বোরো ধানের ভালো ফলনের পর চালের দাম কমবে বলে আশা করেছিল মানুষ। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। চালের বাজারে বিরাজ করছে অস্থিরতা। সরকারের সঠিক নজরদারি না হলে ভবিষ্যতে চালের বাজার আরও অস্থির হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) অবশ্য বলছে বাংলাদেশে আপাতত খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। ব্রি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, চালের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বোরো ও আমন মৌসুমের উদ্বৃত্ত উৎপাদন থেকে হিসাব করে, জুন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে ২০.৩১ মিলিয়ন টন চাল ছিল। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানোর পরেও ৫.৫৫ মিলিয়ন টন চাল দেশের অভ্যন্তরে উদ্বৃত্ত থাকবে। নভেম্বর পর্যন্ত ১৬.৫০ কোটি মানুষের চাহিদা মেটানোর পরেও ৩৬-৭৮ দিনের চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এছাড়া, নভেম্বরের মধ্যে দেশের ফুড বাস্কেটে নতুনভাবে আউশ ও আমনের উৎপাদন যুক্ত হবে। ফলে, বাংলাদেশে খাদ্য সঙ্কটের কোনো আশঙ্কা নেই।
তবে ব্রি’র এই আশাবাদের সাথে অনেকে একমত হতে পারছেন না। কারণ অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীদের মজুদারীর ফলে সরকার এবার ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এতে করে ব্যবসায়ীরা যে কোনো সময় কারসাজি করে বাজার অস্থির করতে পারে। চলতি বোরো মৌসুমে সরকার ২০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এরমধ্যে ৮ লাখ টন বোরো ধান, ১০ লাখ টন বোরো সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন বোরো আতপ চাল। প্রতিকেজি ২৬ টাকা দরে বোরো ধান, আর ৩৬ টাকা দরে বোরো সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা দরে বোরো আতপ চাল কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়। গত ২৬ এপ্রিল থেকে বোরো ধান কেনা শুরু হয়। আর ৭ মে থেকে শুরু হয় বোরো চাল সংগ্রহ অভিযান। কিন্তু নির্ধারিত সময় গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এরপর আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়েও ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি সরকার। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে মাত্র ৮ লাখ ৯১ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছে। গত বছর সরকার ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং দেড় লাখ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছিল। সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৩ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এরমধ্যে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন গম। গত বছর মজুদ ছিল ১২ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন গম।
ধান-চাল সংগ্রহে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও সংগ্রহ কাক্সিক্ষত মাত্রায় না হওয়াটা অশনি সংকেত বলে অনেকে মনে করেন। অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে ধান কিনে ব্যাপক হারে মজুদ করেছেন। এতে করে একটা সময় বাজারে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ ধান-চাল মজুদ না থাকলে ব্যবসায়ীরা যে কোনো সময় বাজার অস্থির করতে পারে। আর অতিমজুদের ফলে কৃত্তিম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এর ফলে নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ খাদ্যাভাবে চরম কষ্টে পড়তে পারে। অর্থাৎ এক ধরনের দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার গরিব দেশগুলো এতে প্রবল সমস্যায় পড়বে। এই পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে জন্য সব দেশের সরকারকে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কড়া নজরদারি করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। খাবার নিয়ে যাতে কোনো ধরনের কালোবাজারি না হয় সে দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ