Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একটি সেতুর অভাবে ধুঁকছে চার গ্রামের মানুষ

মো. রফিকুল হাসান রনজু, ভ‚রুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ভ‚রুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের সড়ককাটা এলাকার পশ্চিমে ফুলকুমার নদের আরফান হাজীরঘাটে একটি সেতুর অভাবে ধুকছে চার গ্রামের মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভ‚রুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার সংযোগ স্থল জয়মনিরহাট ইউনিয়নের শিংঝাড় গ্রামকে চিরে বেড়িয়ে গেছে ফুলকুমার নদ। সড়ককাটা অংশে রয়েছে ঢাকা-ভ‚রুঙ্গামারী সড়ক ধরে যোগাযোগের মহাসড়ক। অন্য পাড়ে গড়ে উঠেছে শিংঝাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজমাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজমাতা উচ্চ বিদ্যালয়, শিংঝাড় দাখিল মাদরাসা ও বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রতিদিন যাতায়াত করে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ ও সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরি বিজিবির সদস্যরা। গ্রামবাসী নিজেদের প্রয়োজনেই প্রায় প্রতি বছর স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে গ্রাম থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে নির্মাণ করে বাঁশের জাকলা। কিন্তু সেই জাকলা ২ বছরের বেশি টেকসই না হওয়ায় কষ্টের সীমা থাকে না তাদের। নিজেদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে খরচ হয় দ্বিগুন। কোমলমতি ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এতদিন তারা করে গেছেন কাজটি। কিন্তু আর পারছেন না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পূর্বপাড়ের শাহজাহান আলী খন্দকার, মোসলেম উদ্দিন, দুলাল হোসেন, আ. মালেক ওমর আলী বলেন, গত বছর দাতাদের বাঁশ এবং গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের পরেও খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। সে টাকা জোগার করতে হাতপাততে হয়েছে দুয়ারে দুয়ারে। ধর্ণা দিতে হয়েছে রথি মহারথিদের দরবারে। তারপরও আছে উদ্যোমী লোকের অভাব। ওপারের বিচ্ছিন্ন চরে সংযোগহীন জীবন-যাপন করছেন চাকরি জীবনে সৎ ও নিষ্ঠাবান তকমা পাওয়া সাবেক সচিব আলেফ উদ্দিন, বর্তমান জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ, প্রথিযশা প্রধান শিক্ষক কাজিম উদ্দিন সরকার এবং অনেক নামী দামী মানুষ। যাদের অহংবোধ আরো দীর্ঘমেয়াদী করেছে চার গ্রামের মানুষের কষ্টকর চলাচল এবং দুর্ভোগ।
পশ্চিম পাড়ের সাবেক সেনা সদস্য জমসের আলী মন্ডল, আলহাজ আশরাফ আলী, রমিজ উদ্দিন জানান, স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যবধি এই বাঁশের জাকলা দেখতে এসে সেতু করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে গেছেন বহু এমপি ও চেয়ারম্যান। পাঁচ বছর পরপর স্থানীয় নির্বাচনে সকল প্রার্থীরই নির্বাচনী এজেন্ডায় থাকে আরফান হাজীর ঘাটের এই সেতুটির নাম। নির্বাচন গেলেই হারিয়ে যায় সব এজেন্ডা।
এপারে খামার আন্ধারিঝাড়, আইকুমারি ভাতি, ওপারে শিংঝাড়, আজমাতা গ্রাম। মাঝখানে ফুলকুমার নদ। সংযোগহীনতার ইতিহাসকে স্বাক্ষী রেখে একটি সেতুর দাবিতে যে কোন ধরণের ত্যাগ স্বীকারে রাজী কৃষি প্রধান এ এলাকার মানুষ।
জয়মনিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান বলেন, ইতোপূর্বে এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এতে কোন ফল না পাওয়ায় আবারো আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবো।
উপজেলা প্রকৌশলী এন্তাজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ফলাফলের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুন্নবী চৌধুরী বলেন, দুই উপজেলার মাঝখান দিয়ে নদটি বয়ে যাওয়ায় এখানে একটি সেতু করতে সমস্যা হচ্ছিল তার পরেও আমরা এলজিইডির মাধ্যমে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছি। যত দ্রæত সম্ভব সেতুটি নির্মান করার জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ