বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঢাকার নটরডেম কলেজে লেখাপড়া করায় খ্রীষ্টান অপবাদ দিয়ে জুয়েল খান নামের এক মেধাবী ছাত্রের পরিবারকে গত চার মাস ধরে সামাজচ্যুত করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ওই পরিবারের কেউ সমাজের অন্য কোন লোকের সাথে মেলামেশা করার চেষ্টা করলে তাদের বাড়িঘরও ভেঙে এলাকা ছাড়া করার হুমকিও দেয়া হয়েছে।এছাড়া গত ঈদুল আযহায় ওই পরিবারটিকে সামাজিকভাবে পশু কুরবানিতেও অংশ নিতে দেয়া হয়নি। অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে মির্জাপুর উপজেলার তারফপুর পাথালিয়াপাড়া গ্রামে।
জুয়েল খান উপজেলার তরফপুর পাথালিয়াপাড়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে। সে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর ৪০তম বিসিএস-এ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষই থানায় ও কোর্টে মামলা করেছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, বাড়ির সীমানা নিয়ে জুয়েল খানের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশি আবদুর রশিদ খানের ছেলে শরিফুল ইসলামের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জের ধরে গত পহেলা মে শরিফুল ইসলামের লোকজন লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে জুয়েলদের বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের মারপিট করে। এ ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন শরিফুল ইসলাম, আবদুল বাছেদ মিয়া, রমজান আলী, আবদুল লতিফ, তারিকুল ইসলাম ও লিটু আনাম।এ সময় একই গ্রামের শামসুল হকের ছেলে মাসুদ জুয়েলকে উদ্দেশ্য করে বলেন তুই খ্রীষ্টান কলেজে (ঢাকার নটরডেম কলেজ) লেখাপড়া করেছিস। এছাড়া তুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় লেখাপড়া করেছিস। নটরডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বাংলায় লেখাপড়া করে তারা নাস্তিক। তুইও নাস্তিক। নাস্তিকের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুমকি দেন। এছাড়া জুয়েলের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেন তারা। জুয়েল ও তার ভাই মারুফ খান এসব কথার প্রতিবাদ করলে রফিকুল ইসলাম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা জুয়েল ও তার বৃদ্ধ বাবা মফিজুল ইসলাম, মা আমেনা বেগম, নানী ইয়ারন বেগম, ভাই মারুফ খান এলোপাথারি মারপিট করে আহত করে। এ সময় তাদের লাঠির বারিতে জুয়েলের বৃদ্ধা নানী ইয়ারন বেগমের ডান হাতের পাখনার হাড় ভেঙে যায়। তাদের আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলাস্থ জামুর্কী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এই ঘটনার পর থেকে ওই পরিবারটিকে সমাজ চ্যুত করে রাখা হয়েছে। গত ঈদুল আযহায় পরিবারটিকে সামাজিকভাবে পশু কুরবানিতেও অংশ নিতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ওই পরিবারের কেউ সমাজের অন্য কোন লোকের সাথে মেলামেশা করার চেষ্টা করলে তাদের বাড়িঘরও ভেঙে এলাকা ছাড়া করা ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ অমানবিক ঘটনার পরও জুয়েলের পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে বলে জুয়েলের মা আমেনা বেগম জানিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে তরফপুর পাথালিয়া পাড়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে একাধিক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে।
তরফপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বাস্থ্যকর্মী মাহমুদুল হাসান বলেন, জুয়েলের পরিবার সমাজের কাউকে মানে না। তাছাড়া জুয়েলের বাবা মসজিদ সম্পর্কে কটাক্ষ করে কথা বলে এবং মসজিদে তাদের নির্ধারিত হারে ধরা অনুদানের টাকাও তারা দেয় না। যে কারণে সমাজের মুরুব্বিরা তাদের সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গ্রামের মাতাব্বর তরফপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহবায়ক আবদুল বাসেদ মিয়া বলেন, দুই পরিবারের বিরোধ মীমাংসা করতে গিয়ে আমরা মামলার আসামী হয়েছি।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, জুয়েল খান নটরডেম কলেজে লেখাপড়া করার কারণে ওই গ্রামের কতিপয় মাতাব্বর তাকে খ্রীষ্টান উপাদী দিয়েছে বলে শুনেছেন।
মিজাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সায়েদুর রহমান বলেন, গ্রামের কয়েকজন মাতাব্বর মিলে জুয়েলের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। বিষয়টি খুবই অমানবিক। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।