পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে আটকে থাকা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে রফতানির জন্য শুল্ক বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। এতেই একদিনে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ১৫-২০ টাকা কমেছে। পাইকারিতে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম কমায় খুচরা বাজারেও তার প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন সীমান্ত আসতে শুরু করেছে ভারতীয় পেঁয়াজ। হিলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরসহ দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে আসা শুরু হয়েছে। পেঁয়াজ আসার খবর পেয়ে স্থলবন্দরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা ভিড় করতে শুরু করেছেন। তবে বন্দরে আটকে থাকা ও তীব্র গরমে পেঁয়াজের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা। আমাদের হিলি, সাতক্ষীরা জেলা, শিবগঞ্জ উপজেলা সংবাদাতারা জানিয়েছেন এ সংক্রান্ত তথ্য।
টানা ৫ দিন আটকে থাকা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক হিলি স্থলবন্দর প্রবেশ করতে শুরু করেছে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে ভারত অভ্যন্তর থেকে জিরো পয়েন্ট গেইট অতিক্রম করে হিলি বন্দরে গাড়ি গুলো প্রবেশ করে। হিলি পানামা পোর্ট জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাপ মল্লিক বলেন, গত সোমবার কোন কারণ ছাড়াই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। ফলে শত শত পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ভারতের অভ্যন্তরে আটকা পড়ে যায়। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক শেষে গতকাল বিকেলে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তবে অনেক দিন আটকে থাকা ও গরমে পেঁয়াজ গুলোর গুণগত মান নষ্ট হয়েছে। দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে বন্দরে আসা পেঁয়াজ গুলো দ্রæত ছাড়ের ব্যবস্থা করছি। যাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক আসা শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে পেঁয়াজ ভর্তি দিনের প্রথম ট্রাকটি প্রবেশ করেছে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক তৌফিফুর রহমান বাবু জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে খোলা এলসির বিপরীতে পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। অনুমতির পর পেঁয়াজের ট্রাক সোনামসজিদ বন্দরে ঢুকতে শুরু করেছে। তবে ওপারে ভারতের মহদিপুর স্থলবন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় প্রায় দুই শতাধিক ট্রাক আটকে আছে। এছাড়া বেশকিছু ট্রাক পথে রয়েছে বন্দরের আসার জন্য। পর্যায়ক্রমে পেঁয়াজভর্তি সব ট্রাক প্রবেশ করবে বাংলাদেশে। শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাতটি ট্রাকে ১৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ঢুকেছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১২ টায় পেঁয়াজ ভর্তি প্রথম ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ভারতে আটকা পড়া এলসির পেঁয়াজ ভর্তি ১৬৩টি ট্রাকের মধ্যে ৪০ টির মতো ট্রাক এখন পর্যন্ত ভোমরা বন্দরে ঢুকতে পেরেছে বলে জানা গেছে। বন্দরের সহকারি কমিশনার আমির মামুন বলেন, লিও পারমিশন (সকল ডকুমেন্ট কমপ্লিট) করা ট্রাকগুলোই দেশে প্রবেশ করতে পারবে।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, ভারত সরকার হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় ঘোজাডাঙ্গা এলাকায় পেঁয়াজ ভর্তি ১৬৩ টি ট্রাক আটকে পড়ে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় আমদানীকারকরা দুঃচিন্তায় পড়েন। এই কয়দিনে আটকে পড়া ট্রাকেই অনেক পেঁয়াজ পচে গেছে।
বন্দর গুলো দিয়ে যখন ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ আসার প্রভাব পড়েছে রাজধানীসহ স্থানীয় বাজারগুলোতে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে। যা গত তিনদিন ছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, যা গতকাল ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
রাজধানীতে পেঁয়াজের সব থেকে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব থেকে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়, যা গতকাল ছিল ৭৭ টাকা এবং তিনদিন আগে ছিল ৮৫ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।
এর আগে গত সোমবার হুট করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতেই মঙ্গলবার ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারে বেড়ে ১১০ টাকা হয়ে যায়। আর পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। এমন দাম বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে ক্রেতাদের মাঝে।
পেঁয়াজের দাম কমার বিষয়ে শ্যামবাজারের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের মো. কাজল বলেন, গতকাল কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা কমেছে। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। এখন দেশি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়। আর ছোট আকারের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। অপরদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা গতকাল ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগে রফতানির অনুমতি পাওয়া পেঁয়াজ ভারত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হলে দাম আরও কমবে। আমরা আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আগের স্থানে ফিরে যাবে। পেঁয়াজের দাম কমে যাক এটা আমরাও চাচ্ছি।
রামপুরায় ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন হুমায়ন মিয়া। তার কাছে থাকা দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা এবং ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা দাম। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। পাইকারি বাজার থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি, এ কারণে কম দামে বিক্রি করছি।
বাড্ডায় কেজি ৯০ টাকা করে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা মমিনুল ইসলাম বলেন, পাইকারিতে দাম কমায় আমরাও কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছি। গত দুদিন ১১০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। গতকাল ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমাদের আগের কেনা।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সংবাদ বেরিয়েছে ভারত পেঁয়াজ দেবে। শ্যামবাজারেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভারতের পেঁয়াজ পাওয়ার সংবাদ শুনেছি। ভারতের পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম আরও কমে যাবে। এ কারণে ভারতের পেঁয়াজ আনিনি। আগে আনা ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেনা দামে বিক্রি করে দিচ্ছি।
তবে ভারত বলছে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে দৃঢ় রাখার জন্যই ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানির বিশেষ অনুমতি দিয়েছে। ভারতে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় গত সোমবার এক নির্দেশে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকারের বাণিজ্য বিভাগের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা। এতে ক্ষুব্ধ হন দু’দেশেরই আমদানি-রফতানিকারকরা। উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান। বাংলাদেশ থেকেও পেঁয়াজ রফতানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ আসে।
এরপরই দিল্লিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে আটকে থাকা পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে রপ্তানির পথে আটকে পড়েছে, সেসব ট্রাক অবিলম্বে ছেড়ে দেয়ার। এ সংক্রান্ত নির্দেশও দেওয়া হয় ভারতের শুল্ক বিভাগকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।