বাংলাদেশে খাদ্যে দুর্ভিক্ষ হবে না
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ রয়েছে, আজকে যে বৃষ্টি হচ্ছে এই বৃষ্টির কারণেই বাংলাদেশে সোনালী
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সউদী আরবে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু হচ্ছে। দেশটির নির্মাণখাতসহ বিভিন্ন প্রকল্প ও মার্কেটগুলোতে প্রবাসীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মস্থলে যোগ দিচ্ছে। দেশটির মার্কেট, সেলুন, শিশুদের বিনোদন পার্ক বিউটি পার্লার চালু করা হয়েছে। কর্মস্থলে যোগ দিতে পারায় প্রবাসী কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দেশটিতে বিশ লক্ষাধিক বাংলাদেশি কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। তবে নতুন নতুন প্রকল্প এখনো চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। সউদী থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে আসায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অর্থনীতিতে মন্দার ঢেউ অব্যাহত রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হয়েছে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানীতে কাজ না থাকায় অভিবাসী কর্মীদের এখনো স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এসব দেশগুলোতে লকডাউন কিছু কিছু শিথিল করা হলেও কর্মস্থলের দ্বার পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়নি। করোনার কারণে দেশগুলোতে দীর্ঘদিন যাবত অবরুদ্ধ লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসের ২৭ দিনে ১৭২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের পুরো আগস্ট মাসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। এছাড়া চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। একক মাস হিসেবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এর আগে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল চলতি বছরের জুনে। ওই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
এদিকে, করোনা মহামারির কারণে প্রতিদিনই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী কর্মী খালি হাতে দেশে ফিরছে। অনেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়েও দেশে ফিরছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কল্যাণ ডেস্ক সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কাতারের দোহা এবং ইরাকের বাগদাদ থেকে দু’টি ফ্লাইট যোগে ৩৬৭ জন প্রবাসী কর্মী চাকরি হারিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছে। সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে দোহা থেকে বিশেষ ফ্লাইট (কিউ আর-৬৪০) যোগে ২২৮ জন প্রবাসী কর্মী ঢাকায় পৌঁছে। সকাল ১০ টায় বিশেষ ফ্লাইট (এফবিএ-৭০১১) যোগে ১৩৯ জন প্রবাসী কর্মী কোম্পানীতে কাজ না থাকায় ইরাকের বাগদাদ থেকে দেশে ফিরেছে। ইরাক থেকে প্রত্যাগত ইকরাম হোসেন, মো. মমিন, রবিন মজুমদার, মাহবুবুর রহমান, মো. ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, মো. বাবুল হোসেন, নাসির হোসেন মোল্লা, রাকিব হোসেন, রফিকুল ইসলাম ও মো. আইয়ূব আলী জানান, ইরাকের অর্থনৈতি চরম মন্দার কারণে অধিকাংশ কোম্পানীর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদেরকে পুনরায় নেয়া হবে বলে কোম্পানী প্রবাসী কর্মীদের স্ব স্ব দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আরো বহু বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রত্যাগত এসব কর্মীর মধ্যে অনেকেই অবৈধ হওয়ায় তারা আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরছে। প্রত্যাগত এসব কর্মীর অনেকেই অভিবাসন ব্যয়ের টাকাও পুরোপুরি তুলতে পারেনি। ভিটেমাটি বিক্রি এবং চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিদেশে গিয়ে এসব প্রবাসীরা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। গতকাল দুপুরে ও বিকেলে জেদ্দা, দুবাই, কুয়েত, লেবানন থেকে ৫ টি বিশেষ ফ্লাইট যোগে আরো ১ হাজার ৯৩ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেছে। এদের মধ্যে লেবানন থেকেই ফিরেছে ৪১৩ জন এবং জেদ্দা থেকে ৩৩১ জন পুরুষ ও মহিলা কর্মী।
সউদী আরবের তায়েফ শহরের আল হকার পার্ক মার্কেটের প্রবাসী ব্যবসায়ী জামান ইসমাইল বেপারী গতকাল বৃহস্পতিবার ইনকিলাবকে জানান, করোনাকালে সউদীতে অবরুদ্ধ লাখ লাখ বাংলাদেশি কর্মী দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। দেশটিতে লকডাউন কিছুটা শিথিল করায় মার্কেট, সেলুন, বিনোদন পার্ক ও বিউটিপার্লার খুলছে। নির্মাণখাতের অনেক প্রজেক্টেও কাজ শুরু হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নির্মাণখাতসহ মার্কেটগুলোতে কাজে যোগদান করছে। তিনি বলেন, কর্মস্থলে যোগদান করতে পারায় প্রবাসী কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী সউদীর শ্রমবাজার ধরে রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে ভ্রাতৃ প্রতীম দেশটির সরকারের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। ছুটিতে দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশি কর্মীরা যাতে দ্রæত সউদীর কর্মস্থলে ফিরতে পারে সে ব্যাপারেও সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে বলে প্রবাসী ব্যবসায়ী জামান উল্লেখ করেন।
বায়রার যুগ্ম মহাসচিব মো.মিজানুর রহমান প্রবাসী কর্মী ফেরত আসার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইনকিলাবকে বলেন, করোনা পরবর্তী বর্হিবিশ্বের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে এখন থেকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বায়রাকে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বিদেশ প্রত্যাগত অসহায় কর্মীদের পুর্নবাসনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ বরাদ্দের বিষয়টি সহজীকরণের দাবি জানান। প্রত্যাগত কর্মীরা যাতে ঋণ নিতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য তিনি প্রবাসী মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এতদিন ধরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ ছিল সউদী আরবে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তা আংশিকভাবে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। ‘ব্যতিক্রমী ক্যাটাগরির’ আওতায় নাগরিক ও বাসিন্দাদের ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ। নোভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে গত মার্চে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় সউদী আরব। বার্তা সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নাগরিকদের জন্য আকাশপথ, স্থলপথ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।