Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সব বড় শহরে মেট্রোরেল তৈরির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

একনেকে মোবাইল গেইম ও অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নসহ ১১ হাজার ২১১ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

চট্রগ্রামসহ দেশের সব বড় শহরে মেট্রোলের তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে সবার আগে চট্টগ্রামের এয়ারপোর্ট থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যগুলো করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন, শুধু ঢাকা কেন? চট্টগ্রামে মেট্রোরেল হতে হবে। চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল হতে হবে। এছাড়া বড় শহর বিশেষ করে যেখানে বিমানবন্দর আছে সেখানেও মেট্রোরেল হতে পারে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বড় শহরে মেট্রোরেল করতে হবে।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে ব্রিফিং-এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভায় মোবাইল গেইম ও অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ২১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।

এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরাও ছিলেন। একনেক শুরুর আগে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গত ৫০ বছরের অর্থনৈতিক রূপরেখা সংক্রান্ত একটি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, নালা বা খালের পানি রক্ষা করতে নালার নিচে ঢালাই দেয়া হলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের তলদেশে সিমেন্ট ঢালাই না দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া প্রকল্পের সম্ভাব্য সমীক্ষার পরও যদি পরবর্তীতে ডিজাইন ভুল কিংবা নকশায় ক্রটি ইত্যাদি ধরা পড়ে তাহলে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সমীক্ষার পরও যদি প্রকল্প বারবার সংশোধন করতে হয়, তাহলে যারা সমীক্ষা করবে সেই পরামর্শকদের জবাবদিহীতার আওতায় আনতে হবে। কেননা তারা এখন আড়ালেই থাকছেন। অনেক টাকা নেন পরামর্শক খাতে। কিন্তু কাজে ভুল করলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। যে কোনো সমস্যায় পরামর্শকদের সামনাসামনি করতে হবে। এছাড়া সরকারের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে যারা ভুক্তভোগী, তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তিনি বলেন, অর্থ যেন তাড়াতাড়ি দেয়া হয় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারের আয়, বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয় বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেটির সব টাকাই সরকার দেবে। সিটি করপোরেশনের অংশের ৪৯৮ কোটি টাকা দিতে হবে না। তবে ভাবিষ্যতে যাতে এমনটা না হয়। নিজেদের আয় বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে সংস্কার কাজের জন্য একটি আলাদা তহবিল গঠন করা যেতে পারে। যাতে সংস্কারের অভাবে অবকাঠামোগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে না যায়। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সংশোধন করে আড়াই লাখ গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ প্রকল্পটি যাতে মানসম্মতভাবে সঠিক সময়ে শেষ হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের সীমানা না বাড়িয়ে ছোট ছোট উপশহর তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক তরুণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপস ও গেইম উন্নয়ন বিষয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, এ প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ৪৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়ালো ৩৩০ কোটি ৮ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্পটির মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম জানান, করোনার কারণে ২ বছরের প্রকল্প যাচ্ছে ৭ বছরে। এছাড়া যোগ হয়েছে নতুন অনেক কাজও।

পরিকল্পনামন্ত্রী ব্রিফিংয়ে আরো বলেন, চলতি বছরে তিনটি মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হবে। এগুলো শেষ হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তিনি জানান, সংশোধিত প্রকল্পগুলো দেরিতে বাস্তবায়নের অন্যতম কারণ হলো কোভিডের বিরুপ প্রভাব। এছাড়া জমি সংকট এবং জমির মালাকানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশি ঋণের নানা ধরনের শর্তের জাল থাকে। এক্ষেত্রে উভয় দিকেই আমলাতান্ত্রিকতা আছে। যেমন আমাদের রয়েছে, তেমনি উন্নয়নসহযোগী সংস্থাগুলোতেও আমলাতান্ত্রিকতা আছে। দু’দেশের আমলাতন্ত্রের প্রভাব, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। জনশুমারি প্রকল্প নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজের দেরি যে হচ্ছে সেটি দেখা হবে। তবে এর দায়ভার প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে আমারও। কেননা ট্যাব কেনার ক্ষেত্রে অনেক ছায়া শক্তি কাজ করছে। সেগুলো আমরা দেখি না। তবে যেসব শক্তি দেখা যায় সেগুলো মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের আছে। ছায়া শক্তি আল্লাহর আরশ থেকে সর্বত্রই আছে।

সভায় অনুমোদন পেয়েছে আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব। এটি বাস্তবায়িত হলে নতুন করে আরো আড়াই লাখ গৃহহীনকে ঘর দেয়া হবে। এজন্য প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। মেয়াদ বেড়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। এই ব্যয় বড়লেও সেটি মানবিক দিক থেকে একটি ভালো উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হবে আগামী জুন মাসে। সেরকমই মেয়াদ ধরা আছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের লাইন-৬ এর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত খুলে দেয়া হবে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শেষ হবে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই। পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে ১ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে প্রকল্পের শুরুতেই স্টাডিতে উঠে এসেছে। আর বাকি দুটি প্রকল্প শেষ হলে প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। সে হিসেবে বলা যায় তিনটি প্রকল্প চালু হলে ২ দশমিক ৫ শতাংশের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কগুলো উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য লজিস্টিক্স ও ফ্লিট মেইনটেন্যান্স ফ্যাসিলিটিস গড়ে তোলা, ব্যয় ১৩৬ কোটি টাকা। কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে জাতীয় মহাসড়ক মানে চার লেনে উন্নীতকরণ, ব্যয় ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন, ব্যয় ৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বরগুনা জেলার অধীন পোল্ডার ৪৩/১ ও ৪৪বি পুনর্বাসন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অংশ পায়রা নদীর ভাঙন হতে প্রতিরক্ষা প্রকল্প, ব্যয় ৭৫১ কোটি টাকা। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রক্ষ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙনরোধ প্রকল্প, ব্যয় ১৪৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্প, ব্যয় ১৩৫ কোটি টাকা। বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই প্রথম পর্যায় প্রকল্প, ব্যয় ৫৫২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।



 

Show all comments
  • টুটুল ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:০২ এএম says : 0
    খুবই ভালো উদ্যোগ
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:০২ এএম says : 0
    মেট্রোরেলের নিচের রাস্তা যেন ব্যবহার উপযোগী থাকে
    Total Reply(0) Reply
  • Thamed Chowdhury ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৪৩ এএম says : 1
    · জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু । জয়তু ❝ প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ❞
    Total Reply(0) Reply
  • শারমীন আলম আরজু ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৪৫ এএম says : 0
    শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আছে বলে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে.... ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপাকে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Arnob ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৪৬ এএম says : 0
    শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ।। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • Sk Rahman ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৪৬ এএম says : 0
    Many many things to the present government establish Metro rail in Dhaka City for better travel and reduces traffic jams. Now those are holding private cars , government needs to tax hike for the rich people like wealthy nations. It will bring more revenue to fix the highways and roads and the traffic systems.
    Total Reply(0) Reply
  • Mustafiz Majnu ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৪৭ এএম says : 0
    এভাবেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে এগিয়ে যাবে তারই যোগ্য উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনা।। জয় বাংলা,, জয় বঙ্গবন্ধু,, জয়তু শেখ হাসিনা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ