Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপর্যয়ে প্রবাসী শ্রমিকরা

করোনায় কর্ম-ব্যবসা হারাচ্ছেন অনেকেই : ১ লাখ ২৭ হাজার ২০৯ জন ফিরেছেন

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশগুলোর অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এসব দেশগুলোতে কাজের পরিধি হ্রাস পাওয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের স্ব স্ব দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে লাখ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। করোনা মহামারির প্রভাবে প্রবাসীদের অনেকেই কর্ম ও ব্যবসা হারিয়ে পথে বসছেন।
বিদেশ থেকে ফেরত আসা অসহায় প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিদেশ থেকে ছুটিতে আসা এবং নতুন ভিসাপ্রাপ্ত এক লাখ শ্রমিকসহ প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী শ্রমিক কর্মস্থলে যেতে না পেরে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে লকডাউন কিছুটা শিথিল হলেও ফ্লাইট চালু না হওয়ায় এসব প্রবাসী শ্রমিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। এদের অনেকেই চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বায়রার যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান বলেছেন, আটকে পড়া প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী শ্রমিকদের স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিতকরণে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ নিতে হবে। বর্হিবিশ্বে শ্রমবাজার ধরে রাখতে ভ্রাতৃপ্রতীম মুসলিম দেশগুলোর সাথে ব্যাপক ক‚টনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধানের পথ বের করতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত ১ এপ্রিল থেকে গত ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ২৮টি দেশে থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ২০৯ জন প্রবাসী শ্রমিক। এদের মধ্যে প্রত্যাগত মহিলা কর্মীর সংখ্যা ১১ হাজার ৭০৩ জন। আর আউট পাশের মাধ্যমে ফেরাত আসা অবৈধ কর্মীর সংখ্যা ২৭ হাজার ২৭০ জন।
প্রত্যাগত একাধিক শ্রমিক জানায়, কেউ দীর্ঘ দিন কারাভোগ করে আউটপাসের মাধ্যমে দেশে ফিরছে, কারো কাজ না থাকায় কোম্পানি দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে, অনেকেরই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদেরকে পরে নেয়া হবে বলে কোম্পানি দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, তার ওপর একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সরকার। করোনা মহামারির শুরু থেকে এ যাবত প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছে। সরকারের এ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অর্থ, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্মিলিতভাবে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকার আরও মনে করছে, অর্থনীতির সবচেয়ে সুবিধাজনক খাত হলো রেমিট্যান্স। করোনা মহামারির কারণে একমাত্র ভালো সূচকটিও নিম্নমুখী হওয়ার পথে। গত জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় ৫ কোটি ডলার কমেছে এবং ফেব্রুয়ারিতে তা ১৯ কোটি ডলার কমে গেছে। প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় বলা হয় ইতালি, মালয়েশিয়া, সউদী আরব, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোতে শ্রম বাজার রক্ষায় সর্বোচ্চ ক‚টনৈতিক তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি নতুন শ্রমবাজার সন্ধানের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, এ বিষয়ে আমরা দুই ধরনের কাজ করছি। বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের চাকরি যাতে থাকে আমাদের দূতাবাসগুলো সে বিষয়ে কাজ করছে। আরেকটা কাজ করছি, যারা বেকার কিংবা অবৈধ তাদের বিষয়ে সেসব দেশের সরকারের সঙ্গে আলাপ করছি যে, তোমরা তাদের একটু সাহায্য দাও। সহায়তা পেলে তারা অনেকে কাজ করবে। এতে করে তোমাদেরও লাভ, আমাদেরও লাভ।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের বলেছি, আপনার একটু কষ্ট হলেও সে দেশেই থাকুন। একেবারে বাধ্য না হলে আসবেন না, সুযোগ নিশ্চয় আসবে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশে কি ধরনের শ্রমবাজার রয়েছে সেটা খুঁজে বের করতে দূতাবাসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। কোথায় কোথায় নতুন চাকরি পাওয়া যেতে পারে, সে সন্ধানও করা হচ্ছে। তবে হংকং, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন চাকরি হচ্ছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে আগে যে হারে লোক যেত এখন আর সে হারে সম্ভাবনা নেই। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে, আমরা আফ্রিকার কয়েকটি দেশে মনে হয় বিপুল সংখ্যক লোক পাঠাতে পারব। এটা নিয়েও কাজ চলছে।
এদিকে, গত ৯ সেপ্টেম্বর লিবিয়া থেকে ১৫৩ বাংলাদেশি শ্রমিক বিশেষ ফ্লাইট যোগে দেশে পৌঁছেছে। ত্রিপলীর বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দূতাবাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় থাকা আরও কয়েকশ’ বাংলাদেশি স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে রাজি হয়েছেন। দুটি চার্টার্ড ফ্লাইটে দ্রুত তাদের ফেরানোর প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রচারিত বার্তাটি ছিল এমন ‘আলহামদুলিল্লাহ্।’ বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে দূতাবাসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এবং বেনগাজী প্রবাসী ভাইদের সহযোগিতা ও বিশেষত আইওএম এর সক্রিয় সহায়তায় একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে বেনিনা বিমানবন্দর হতে ১৫৩ জন বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে প্রেরণ করা সম্ভব হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ