Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রোগীদের দেখভালে পরিচ্ছন্ন কর্মী

কুড়িগ্রামে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা: | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

কুড়িগ্রামে প্রত্যন্ত এলাকার ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলির এখন বেহাল দশা। চিকিৎসক নিয়মিত কেন্দ্রগুলিতে না আসায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। অপরদিকে দীর্ঘদিন অফিস বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকার সরঞ্জামাদিসহ উপকরণ। এমন পরিস্থিতিতে কিছু কিছু কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন খন্ডকালীন পরিচ্ছন্নকর্মীরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৯ উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে-৫৮টি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে ৪০টি এবং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে রুলার ডিসপেনসারি (আরডি)-১৮টি।
সরেজমিন জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিগত কয়েক বছর আগে সপ্তাহে একদিন করে খোলা হতো এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু এখন আর এটা খোলা হয় না। ফলে এই এলাকার মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
একই উপজেলার কেদার ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিও রয়েছে তালাবদ্ধ। ভিতরের গ্লাস ভাঙা। রোগীদের জন্য রাখা বেডগুলি ধূলোবালি আর জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারের দেয়া কোটি কোটি টাকার সরঞ্জামাদি।
এদিকে নাগেশ্বরীর উপজেলার বল্লভের খাস ইউনিয়ন অফিস চলছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দোতলা ভবনে। এখানে উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার ও ফার্মাসিস্ট থাকলেও তারা নিয়মিত নন। এখানকার পরিচ্ছন্ন কর্মী মিনা রানী (৫০) কাজের ফাঁকে রোগীদের দেখভাল করছেন। তিনিই রোগীদের পথ্য দিচ্ছেন। প্রেসক্রিপশন করতে না পারলেও রোগীর সমস্যা শুনেই চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি। গেল ৩ বছর ধরে ৫শ’ টাকা ভাতায় পরিচ্ছন্নকর্মীর বাইরে চিকিৎসাসেবার কাজটি করছেন তিনি। ডাক্তার ডেপুটেশনে অন্যত্র সুবিধা ভোগ করলেও তারা মাঝেমধ্যে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান।
এই হল প্রত্যন্ত এলাকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসাসেবার হালচাল। সরকারি ছুটি ব্যতিত প্রতিদিন কেন্দ্র খোলার নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা ও উদাসিনতায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিনামূল্যে এসব কেন্দ্র থেকে ২২ প্রকার ঔষধ বিতরণের কথা থাকলেও কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় সেগুলো নিয়মিত বিতরণ দেখিয়ে লোপাট করছে এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারীরা। কেন্দ্রগুলো অনিয়মিত হওয়ায় ভ‚রুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সামনের জায়গা দখল করে দোকানঘর তৈরি হয়েছে সুবিধাবাদিরা। সেখানে শুধু মাত্র চলাচলের জায়গা রয়েছে। এগুলোও দেখার যেন লোক নেই। সরকার সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার ভিশন নির্ধারণ করলেও অদক্ষ ও স্বেচ্ছাচারী কিছু কর্মকর্তার অবহেলার কারণে মুখ থুবরে বসেছে কাক্সিক্ষত সেবা।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ইউনিয়ন অফিসের কার্যক্রম করা প্রসঙ্গে বল্লভেরখাস ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেন জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তাররা আসেন না। বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। ইউনিয়ন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দোতলা ভবনে তারা পরিষদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। শিলখুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাঈল হোসেন ইউসুফ জানান, বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেন না। এলাকার দরিদ্র মানুষ সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যসেবা থেকে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম দু’বিভাগের দায়িত্বে থাকায় অনিয়মের দায় এককভাবে নিতে রাজি নন তিনি। জনবল সঙ্কট এবং কোভিড-১৯ এর জন্য চিকিৎসা সেবা দানে কিছুটা ব্যহত হবার কথা স্বীকার করেন তিনি। দ্রুত এসব সমস্যা কেটে যাবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। এই বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান কোন মন্তব্য করতে রাজি না হলেও ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ