Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অর্ধ-শতাধিক অনুমোদনের আবেদন

শিক্ষার্থী সঙ্কটে বিদ্যমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ক্ষমতাসীন দলের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাসের কারণে পিছিয়ে গেছে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা। ফলে নতুন কোন শিক্ষার্থী পাচ্ছে না প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষার্থী সঙ্কট ও করোনাকালে অর্থ সঙ্কটের কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ভবন ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে না অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছুটা সামলে নিতে পারলেও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে নতুন অনুমোদন পাওয়া বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে ঋণ সহযোগিতা চেয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশন। পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলাই যখন টিকে থাকতে এবং শিক্ষার্থী টানতে হিমশিম খাচ্ছে তখন নতুন করে আরও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। আবেদন জমা পড়েছে অর্ধ-শতাধিক।

যে সব জায়গায় ইতোমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সে সব জায়গাতেও নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছেন অনেকে। আবার আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেয়েছেন, এমন উদ্যোক্তারাও নতুন করে ভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণে অর্ধ-শতাধিক আবেদনের মধ্যে ২৫টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) দৌড়ঝাপ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও পরিচালনায় যুক্ত সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় জুলাই সেমিস্টারেই শিক্ষার্থী সঙ্কটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বড় ও নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই শিক্ষার্থী পেয়েছে ৬০-৭০ শতাংশ। মাধ্যম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে পেয়েছে ৩০-৫০ শতাংশ। আর নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকেই শিক্ষার্থীই পায়নি। এই অবস্থায় ভবন ভাড়া, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষার্থী সঙ্কটের কারণে সেপ্টেম্বরের সেমিস্টার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ভর্তিতে নতুন (গত ১০-১২ বছরে যেগুলো অনুমোদন পেয়েছে) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব একটা সাড়া পাচ্ছে না। পুরাতন ও বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছুটা ভালো আছে। তবে সামনের এইচএসসি পরীক্ষা ও রেজাল্ট না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে না। ফলে আর্থিক সমস্যা এখনই চলছে ভবিষ্যতে আরও প্রকট হবে। বিশেষ করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এদের অবস্থা খুবই খারাপ। আর্থিক সমস্যা সমাধানে সরকারের কাছে ঋণের আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে কবির হোসেন বলেন, আমরা বলছি স্বল্প সুদে কিংবা বিনা সুদে ঋণ প্রদানের জন্য দাবি জানিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো কোন সাড়া পায়নি।

এই অবস্থায় আরও নতুন নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৭টি। যার সর্বশেষটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে গত বুধবার। আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি নামে সিলেট সদরের টুলটিকর ইউনিয়নের টিবি গেইটে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা আহমদ আল কবির। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সীমান্তিকের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘রিচার্স ট্রেনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ এর প্রতিষ্ঠাতা আহমদ আল কবির এর আগে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত জুন মাসে ‘মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামে ঢাকার উত্তরায় স্থাপনের জন্য একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় সরকার।

মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন পড়েছে ১০৯টি। এর মধ্যে অন্তত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা অনুমোদনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।
এর মধ্যে- ঢাকায় অবস্থিত রয়েল ইউনিভার্সিটির মালিক সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবাল কিশোরগঞ্জে শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের স্ত্রী ফৌজিয়া আলম আবেদন করেছে ‘লালন বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।

জাতীয় পার্টির নেতা ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ময়মনসিংহে রওশন এরশাদ বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে চান। আওয়ামী লীগের এমপি আ স ম ফিরোজ পটুয়াখালিতে ‘সাউথ রিজন ইউনিভার্সিটি’ স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন। সাবেক এমপি এবং জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম গোলাম রেজা আবেদন রয়েছে ‘সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’ স্থাপনের জন্য। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামসুল আলম ভুঁইয়া অ্যাপোলো ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামে চাঁদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে আবেদন করেছেন। উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি প্রফেসর ইয়াসমিন আরা লেখা ‘ইউনিভার্সিটি অব বগুড়া ট্রাস্ট’ নামে বগুড়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আবেদন করেছেন।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি ‘ইউনিভার্সিটি অব অতীশ দীপঙ্কর’ মুন্সীগঞ্জে স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন। ব্যবসায়ী মোস্তফা আজাদ চৌধুরী রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে রংপুরে, আবু নোমান হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি ইউনিভার্সিটি অব মডার্ন টেকনোলজি নামে ঢাকায়, রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম আল আমিন নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি নামে রংপুরে, আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাহমুদ চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল ওমেন ইউনিভার্সিটি নামে চট্টগ্রামে, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সংঘ আন্তর্জাতিক পন্ডিত বিশ্ববিদ্যালয় নামে চট্টগ্রামে, অ্যাডভোকেট আরমান আলী সোনার বাংলা ইউনিভার্সিটি নামে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আবেদন করেছে ‘চিটাগাং মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি’ স্থাপনের জন্য।

জয়পুরহাটে ‹মডার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি› প্রতিষ্ঠা করতে চান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. রোস্তম আলী। রংপুরের তাজহাট রোডে শ্যামলী আইডিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করতে ুভন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার। একইভাবে ঢাকায় ‹ইউনিভার্সিটি অব এগ্রি বিজনেস›, জয়দেবপুরের চান্দগাঁও এলাকায় ‹বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব এগ্রি বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি›, চট্টগ্রামে ‹আন্তর্জাতিক পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়› চান বৌদ্ধ সংঘ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ