পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নদ-নদীর তীব্র ভাঙনের কারণে ছোট হয়ে আসছে দেশের বৃহত্তম নদ-নদীময় জেলা কুড়িগ্রাম। নদ-নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে হাজার-হাজার পরিবার ইতোমধ্যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। ভাঙনের শিকার এসব মানুষ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন পার করছে।
জেলার বুকচিরে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র-ধরলা-তিস্তা-দুধকুমারসহ ১৬টি নদনদী। ১৬টি নদনদীর প্রতিটিই স্রোতস্বিনী। ফলে প্রতিবছর ভাঙনে নদী গর্ভে চলে যায় হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি, বসত ভিটাসহ গাছপালা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় ৩টি পৌরসভা এবং ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১টি পৌরসভা এবং ৫৫টি ইউনিয়নের সিংহভাগ ভূ-খন্ড নদীগর্ভে। শতভাগ ভাঙনের খাতায় রয়েছে চিলমারী এবং রাজিবপুর উপজেলা। জেলার এসব নদ-নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৩১৬ কিলোমিটার। এবারে বন্যায় নদী তীরবর্তী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ১৩৮ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ২১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১১৬ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর চরপার্বতীপুরের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য সাদের আলী জানান এক সময়ের শতবিঘা জমির মালিক তিনি ছিলেন। নদীর ভাঙনে সব জমিজমা বিলীন হয়ে এখন নিঃস্ব। কোন রকমে নদীর তীর এলাকায় পরিবার নিয়ে মাত্র ১২শতক জমিতে টিনের চালা করে কাটছে দিন। তার মতো জব্বার আলীরও একই অবস্থা। বাপ-দাদার ভিটে মাটি শত বিঘার উপর সম্পত্তি প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে চলে গেছে মাত্র কয়েক বছর আগে। অথচ এক সময়ের স্বচ্ছল আর সম্পদশালী থাকলেও এখন অভাব অটনে দিন কাটছে তার। এরকম হাজারো পরিবারের ভিটেমাটি চলে গেছে নদীগর্ভে।
নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে বহু ঘরবাড়ি আর সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে প্রতিবছরই। অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ায় অভাবের সংসারে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের কাছে। বৃদ্ধ বয়সেও অনেকে কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে চলছেন। প্রতিবছর ত্রাণ নয় নদী শাসন এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে বন্যা এবং ভাঙন থেকে দরিদ্র পীড়িত জেলার মানুষকে রক্ষা করার দাবি স্থানীয়দের।
অন্যদিকে, কুড়িগ্রামের উলিপুরে বজরা ইউনিয়নে তিস্তার তীব্র ভাঙনে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১টি মসজিদ, ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজার ফুট পাকা রাস্তা ও অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা নামে মাত্র বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং করলেও তা কোন কাজে আসছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য পাউবো’র প্রকৌশলীরা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, সর্বস্ব হারিয়ে ভাঙন কবলিত পরিবারের মানুষজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছে। ঘর-বাড়ি হারা সর্বশান্ত মানুষের আহাজারীতে এলাকার বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠছে। এছাড়াও গত চার দিনের ব্যবধানে ওই এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক বসত-বাড়ী, আবাদী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে চলে গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন যথাক্রমে পৌরসভা, কাঁঠালবাড়ী, হলোখানা, পাঁচগাছি, যাত্রাপুর, মোগলবাসা, ঘোগাদহ, ভোগডাঙ্গা ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে। নাগেশ্বরী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে ভাঙন কবলিত ১১টি ইউনিয়ন। উপজেলার রায়গঞ্জ, বামনডাঙ্গা, কেদার, বল্লভেরখাষ, কচাকাটা, নারায়ণপুর, কালিগঞ্জ, বেরুবাড়ি, নুনখাওয়া ইউনিয়নগুলো দুধকুমার, গংগাধর ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে। ভ‚রুঙ্গামারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে শিলখুড়ি, তিলাই, চরভূরুঙ্গামারী,পাইকার ছড়া, বঙ্গসোনাহাট,বলদিয়া,আন্ধারীঝাড় এই ৭টি ইউনিয়ন দুধকুমার নদের ভাঙনের কবলে।
উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে হাতিয়া, বুড়াবুড়ি, তবকপুর, বজরা, থেতরাই, গুনাইগাছ, বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা এই ৮টি ইউনিয়ন তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের কবলে। ফুলবাড়ি উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন ভাঙন কবলিত। ধরলার করাল গ্রাসে ভাঙন কবলিত রয়েছে নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, ফুলবাড়ী সদর, বড়ভিটা, ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন। রৌমারী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও সোনাভরী নদীর ভাঙনে বন্দবের, রৌমারী সদর, যাদুরচর, চর শৌলমারী এই ৪টি ইউনিয়ন ভাঙন কবলিত। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে রাজিবপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের মধ্যে সবকটি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত। এসব ইউনিয়ন হলো কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ এবং রাজিবপুর সদর। রাজারহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪ টি ইউনিয়ন ভাঙন কবলিত। ধরলা ও তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলো হলো ঘড়িয়ালডাঙা, ছিনাই, বিদ্যানন্দ ও নাজিম খাঁ। চিলমারী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সবকটি ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত।
সরেজমিনে গতকাল দুপুরে উপজেলার চর বজরা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কাশিম বাজার-উলিপুর সড়কের চর বজরা এলাকার পাকা সড়কের প্রায় ১ হাজার ফুট রাস্তার বেশিরভাগ অংশ নদীতে দেবে গেছে। এর আগে রাস্তার পশ্চিমাংশে টেপরির মোড় এলাকায় তিস্তা নদীতে আকস্মিক ভাঙন শুরু হলে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে প্রায় দেড় শতাধিক ঘর-বাড়ি, আবাদী জমিসহ চর বজরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কদমতলা নকিয়ার পাড়া জামে মসজিদ, সাদুয়া পাড়া জামে মসজিদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উলিপুর-কাশিম বাজার পাকা সড়কের হাজার ফুট নদীতে চলে গেছে। বর্তমানে উলিপুরের সাথে কাশিমবাজার এলাকার সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টেপরির মোড় এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, শিক্ষক মজিবর রহমান, বকুল মিয়া, বন্দে আলীর পাকা বাড়ি নদীর কিনারায় ভাঙনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়াও চর বজরা লাগোয়া পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাশিম বাজার এলাকার নাজিমাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়,নাজিমাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ আলিম মাদরাসা, কাশিম বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ২টি মসজিদসহ সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি পাকা অবকাঠামো ও বিশাল জনবসতি পূর্ণ এলাকা ও আবাদি জমি নদীর তীব্র ভাঙনে চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, নদী ভিত্তিক পরিকল্পনা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জেলাকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। জেলার ১শ’ টি এলাকায় ভাঙনরোধে জরুরী কার্যক্রম চলছে, শুধু চর বজরা-কাশিম বাজার নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। ভাঙন রোধে ১০ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং চলছে, প্রয়োজনে আরো ডাম্পিং করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে তিস্তা নদীর ১৬০ কিলোমিটার সংস্কার ও বাঁধ নির্মাণে ৮হাজার ২শ’ কোটি টাকা এবং দুধকুমার নদীর ২৫ কিলোমিটার সংস্কার ও বাঁধ নির্মাণে ৭১৪ কোটি টাকার প্রকল্প পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ।
জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, চলতি বছরের বন্যা আর নদী ভাঙনে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এ বছরেই ভাঙন কবলিত ৩২টি পয়েন্ট চিহ্নিত করে মেরামত করা হচ্ছে।
এছাড়া, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তিলকপুর, কাউনেরচর, গুচ্ছগ্রাম, বেপারীপাড়া, সরকারপাড়া, শেখপাড়ার ব্রহ্মপুত্রের ভয়াবহ ভাঙ্গনের ফলে বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও শতশত বসতভিটা । আবাদি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ও ৬ নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ ৭ নং ওয়ার্ডের পুরোটাই বিলীন হয়েছে। এ অঞ্চলের কাউনের চর, গুচ্ছগ্রাম, বেপারীপাড়া, সরকারপাড়ার গায়েনপাড়ার অধিকাংশসহ চরখড়মা, নান্দেকুড়া গ্রামের হাজার পরিবারের বসতভিটা, আবাদি জমি,শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়েছে।
এসব মানুষ পার্শ্ববর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলার কলকিহারা, মাইছানিরচর, দুর্গাপুর এবং ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর, ফকিরপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। নদী ভাঙনের শিকার হাজার হাজার মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে দিগি¦দিক ছুটছেন। অনেকেই অভাবের তাড়নায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউপি সদস্য আশরাফুল আলম, নুর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, মো. হারুনুর রশিদ ও মহিলা ইউপি সদস্য ইয়াসমিন আক্তার বলেন, প্রতিবছরই ব্রহ্মপুত্র বসতবাড়ি, ফসলি জমি ভেঙ্গে নিচ্ছে। এ বছর বর্ষার শুরু থেকে অধ্যবদি ৩ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও শতশত একর ফসলি জমি ভেঙ্গে নিয়েছে। বর্তমান সরকারে কাছে আমাদের একটাই চাওয়া ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন থেকে এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে যেন রক্ষা করেন।
এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ছামিউল হক বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে এই নদী ভাঙ্গন বছরের পর বছর চলছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের বসতভিটা আবাদী জমি হারিয়ে অভাব অনটনে মানবেতর দিনাতিপাত করছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।