Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিতাসের মনগড়া তদন্ত মানতে নারাজ মসজিদ কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:১৭ পিএম

নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে গঠিত তিতাসের তদন্ত কমিটি মনগড়া তদন্ত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তাকে তিতাসের নারায়ণগঞ্জ কাঞ্চলিক অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়। তিনি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা (তিতাসের তদন্ত কমিটি) তাদের মনগড়া কথা লিখে নেন। বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে এ অভিযোগ করেন বাইতুস সালাত জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর।
আবদুল গফুর বলেন, তিতাসের তদন্ত দল তার কাছ থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। এরমধ্যে ছিল, মসজিদের ভেতরে গ্যাস নির্গত হওয়ার বিষয়ে তিনি নিজে তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বা যোগাযোগ করেছেন কিনা? তিনি না সূঁচক উত্তর দিয়ে বলেন, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক যোগাযোগ করেছিলেন। তদন্ত দল বলেন, সাধারণ সম্পাদকের কথা বাদ, আপনি যোগাযোগ করেছিলেন কিনা? পরের প্রশ্ন ছিল লাইন মেরামতের জন্য কি আপনার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। তিনি না সূঁচক উত্তর দিয়ে বলেন, সাধারণ সম্পাদকের কাছে চাওয়া হয়েছিল। তদন্ত দল এবারও তাকে বলেন, সাধারণ সম্পাদকের কথা বাদ, আপনার কাছে চাওয়া হয়েছিল কিনা? এভাবে নিজেদের মনগড়া প্রশ্ন এবং এর উত্তর লিখে নেয় তিতাসে তদন্ত দল।
আবদুল গফুর বলেন, আমরা আগেই বলেছি মসজিদের নিচে তিতাসের কোন লাইন নেই। মসজিদে গ্যাসের কোন সংযোগও নেই। মসজিদের ভেতরে কোন সেপটিক ট্যাঙ্কও নেই। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, আমরা তিতাসের লাইনের উপর মসজিদ নির্মাণ করেছি। কিন্তু তিতাসের কর্মকর্তারা মাটি খুঁড়ে এখনও পর্যন্ত কোন গ্যাস লাইন মসজিদের নিচে পায়নি।
এদিকে গতকাল বুধবার তৃতীয় দিনের মতো ঘটনাস্থলের আশপাশে তিতাস কর্তৃপক্ষ তাদের খনন কাজ অব্যাহত রেখেছিল। তবে গতকাল উল্লেখ করার মতো কোন কিছু তারা পায়নি। গ্যাসের যেসব সংযোগের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে সেগুলো আরও ভালভাবে দেখতে খনন কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু দুপুরে বৃষ্টির পর খনন করা জায়গাগুলো পানিতে ভরে গেলে খনন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে উচ্চ পর্যায়ে
এদিকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন বুধবার গণমাধ্যমের কাছে বলেন, জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে স্থানীয়দের বক্তব্য গুলো গুরুত্বসহকারে লিপিবদ্ধ হবে। তদন্ত প্রতিবেদন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। প্রতিবেদনের যে অংশের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের উপর থাকবে সেগুলোর ব্যাপারে কঠোর অ্যাকশনে যাওয়া হবে। আর অন্য দপ্তরের কাজ গুলো তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে অন্য দপ্তরের কাজ গুলো সর্ম্পকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনি করিয়ে দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ওই ঘটনায় নিহত ও আহতদের তালিকা প্রধানমন্ত্রী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। নিহত ও আহতদের বেশির ভাগই ছিল তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত সহায়তা ওইসব পরিবারগুলোকে পৌঁছে দেওয়া হবে।
মসজিদের বিস্ফোরণ ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি ওলামা পরিষদের
এদিকে পশ্চিম তল্লায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে ওলামা পরিষদ। ৪ দফা দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ওলামা পরিষদ। বুধবার সকালে নগরের ডিআইটি জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ডিআইটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর কাদির, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কাসেমী, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মোলনে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, ঘটনার পর আমরা লক্ষ করেছি ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদটিতে দর্শনার্থী নারী পুরুষ নির্বিশেষে বিভিন্ন দল ও সংস্থা মসজিদের পবিত্রতার প্রতি লক্ষ্য না রেখেই প্রবেশ করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে মসজিদের পবিত্রতার প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অর্থাৎ দ্রুত নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের পরিবেশ তৈরির জন্য জোর দাবি জানান তিনি।
বিস্ফোরণের ঘটনায় মসজিদের নির্মাণ কাঠামো নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মসজিদ অবৈধ। আমরা দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, যে সময় ২৮ জন মুসুল্লি শহীদ হয়েছে, অসংখ্য পরিবার শোকাহত, তখন এ ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতির তীব্র নিন্দা জানাই। সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে যথাযথ বিধির অনুসরণ না করা এক বিষয়, আর মসজিদ অবৈধ এ ধরণের কথা আরেক বিষয়। মসজিদের জায়গা ওয়াকফকৃত ছিল বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি করা হয়। তাই এ ধরণের অগ্রহণযোগ্য বিবৃতি আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
ওলামা পরিষদের এই নেতা আরও বলেন, কিছু মহল এই মর্মান্তিক বেদনাদায়ক ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আগে এ ধরণের কথাবার্তা গ্রহণযোগ্য নয়। ওলামা পরিষদ একজন বিচারপতির নেতৃত্বে এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানায়। একই সঙ্গে হতাহত পরিবার গুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ