দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
৩. হযরত ইবন উমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (স.) ইরশাদ করেন, তোমরা কাদরের রাত রামাদানের ২৭ তারিখে অন্বেষণ কর। (শারহু মা‘আনিল আছার, খ. ৩, পৃ. ৯১, হা নং ৪৬৩৯; মুসনাদু ’আহমদ, খ. ৮,পৃ. ৩২৬, হা নং ৪৮০৮।)
৪. হযরত উবাই ইবন কা‘ব (র.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (স.) -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, লাইলাতুল কাদর হলো, ২৭ তারিখের রাত। (শারহু মা‘আনিল আছার, খ. ৩, পৃ. ৯২, হা নং ৪৬৪৩)।
৫. হযরত উবাই ইবন কা‘ব (র.) বলেন, আমি শপথ করে বলছি, লাইলাতুল কাদর হলো, ২৭ তারিখের রাত্রে (আল-আছার লিআবী ইউসুফ, পৃ. ১৮১)।
৬. হযরত মু‘আবিয়া ইবন আবী সুফিয়ান লাইলাতুল কাদর সম্পর্কে নবী কারীম (স.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, লাইলাতুল কাদর হলো, ২৭ তারিখের রাত। (আবূ দাউদ, খ. ৩, পৃ. ৫৩৪, হা নং ১৩৮৬; সাহীহু ইবন হাব্বান, খ. ৮, পৃ. ৪৩৬, হা নং ৩৬৮০ ; আল-মু‘জামুল কাবীর, খ. ১৯, পৃ. ৩৪৯, হা নং ৮১৪)।
৭. হযরত আবূ হুরাইরা (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.) ইরশাদ করেন, লাইলাতুল কাদর হলো, ২৭ তারিখ রাত্রে এবং ফিশিতারা সেই রাত্রিতে কংকরের চেয়েও অধিক পৃথিবীতে আগমন করে। (মুসনাদুল বায্যার, খ. ১৬, পৃ. ২৬১; সাহীহু ইবন খুযাইমা, খ .৩, পৃ. ৩৩২, হা নং ২১৯৪; আল-মু‘জামুল আওসাত, খ. ৩, পৃ. ৭৩, হা নং ২৫২২)।
৮. হযরত উবাই ইবন কা‘ব (র.) লাইলাতুল কাদর সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমার সিংহভাগ জ্ঞান অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ্ (স.) যেই রাত্রির ইবাদতের কথা বলছেন, সেটি হলো, ২৭ তারিখের রাত্র। (মুসলিম, খ. ১,পৃ. ৫২৫ ,হা নং ৭৬২)।
৯. হযরত আবূ বকর আল-ওয়াররাক (র.) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা এই মাসের রাতসমূহে এই সূরার বাক্যের সাথে সমন্বয় করেছেন। যখনই ২৭ তম বাক্যের নিকট পৌঁছল তখনই বললেন, “হিয়া”অর্থাৎ এটিই কাদরের রাত যা ২৭ তম শব্দ।
১০. “লাইলাতুল কাদর” শব্দটি এই সূরাই ৩ বার পড়া হয়েছে। আর “লাইলাতুল কাদর”-শব্দে ৯টি অক্ষর রয়েছে। সুতরাং ৯-কে ৩-দিয়ে গুণ দিলে ২৭ হয়ে যায়। (তাফ্সীরুল কুরতুবী, খ. ২০, পৃ. ১৩৬)।
১১. হযরত ইবন ‘আব্বাস (র.) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট প্রিয় সংখ্যা হলো, বিজোড়। আর প্রিয় বিজোড় হলো ৭; যেহেতু আসমান, যমীন, সপ্তাহ, জাহান্নামের স্তর, হজ্জে তাওয়াফের সংখ্যা, শরীরে অংগের স্যাখ্যা ৭টি। তাহলে বুঝা গেল যে, লাইলাতুল কদর ২৭ তম রাত। (মাফাতীহুল গায়ব, খ. ৩২, পৃ. ২৩০।)
দুই. কেউ কেউ বলেন, এটি কেবল রামাদান মাসে রয়েছে। এটি আবূ হুরাইরা প্রমুখ সাহাবীদের মত।
তিন. কেউ কেউ বলেন, এটি সারা বছরের কোন এক রাত্রে হবে। ইমাম আবূ হানিফার মত হলো এটি।
চার. আবূ যর আল-উকাইলী বলেন, রামাদানের প্রথম রাত।
পাঁচ. হাসান, ইবন ইসহাক, আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবাইর বলেন. এটি রমাাদানের ১৭ তারিখ তথা বদরের ঘটনার ফজর বেলা।
ছয়. এটি হলো, ১৯ তারিখ।
প্রসিদ্ধ মত হলে, এটি রামাদানের শেষ দশকে। যা ইমাম মালিক, শাফী, আওযা‘ঈ, আবূ ছাওর, আহমদ (রা.)-এর মত।
সাত. এটি হলো, ২১ তারিখ।
আট. এটি হলো, ২৩ তারিখ।
হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবন উনাইস (স.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (স.) ইরশাদ করেন, আমাকে লাইলাতুল কাদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে যে, আমি যেন কাদা ও পানির মধ্যে সিজদা করছি। বর্ণনাকারী বলেন, ২৩ তারিখে আমাদের মধ্যে বৃষ্টি হয়েছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (স.) আমাদের সংগে নামায আদায় করে চলে গেলেন। তাঁর চেহেরায় ও নাকে পানি ও মাটির চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। ‘আব্দুল্লাহ ইবন উনাইস (স.) বলেন, সেই দিন ছিল ২৩ তারিখ। (মুসলিম, খ. ২, পৃ. ৮২৭, হা নং ১১৬৮)।
নয়. এটি হলো, ২৪ তারিখ।
হযরত ওয়াছিলা ইবন আসকা‘ থেকে বর্ণিত, নাবী কারীম (স.) ইরশাদ করেন, “ইবরাহীম (আ.)-এর সহীফাসমূহ রামাদানের ১ম রাত্রিতে, তাওরাত ৬ই রামাদানে, ইনজীল ১৩ রামাদানে এবং পবিত্র কুরআন ২৪ই রামাদানে অবতীর্ণ হয়েছে।” (তাফসীরুল কুরতুবী, খ. ২, পৃ. ২৯৮)। হযরত বেলাল (র.) থেকে বর্ণিত, নাবী কারীম (স.) ইরশাদ করেছেন, লাইলাতুল কাদর ২৪ই রামাদান। (মাসনাদু ’আহমদ, খ. ২৯, পৃ. ৩২৩)। ইবন ‘আব্বাস (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, তা শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কাদর। ইবন আব্বাস (র.) থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে, তোমরা ২৪ হম রাতে তালাশ কর। (আল-বুখারী, খ. ২, পৃ. ৭১১, হা নং ১৯১৮।)
দশ. এটি হলো, ২৫ তারিখ।
হযরত ইবন ‘আব্বাস (র.) হতে বর্ণিত, নাবী কারীম (স.) ইরশাদ করেন, তোমরা লাইলাতু কাদর রামাদানের শেষ দশকে অন্বেষণ কর। লাইলাতুর কাদর (শেষ দিক হতে গণনায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে। (আল-বুখারী, খ. ২, পৃ. ৭১১, হা নং ১৯১৭।) মালিক বলেন, এখানে ৯ বলতে ২১ তারিখ, ৭ বলতে ২৩ তারিখ এবং ৫ বলতে ২৫ তারিখ উদ্দেশ্য। (তাফসীরুল কুরতুবী, খ. ২০, পৃ. ১৩৬।)
এগার. এটি হলো, ২৯ তারিখ।
হযরত আবূ হুরাইরা (র.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (স.) লাইলাতু কাদর সম্পর্কে ইরশাদ করেন, লাইলাতুল কদর হলো, ২৭ অথবা ২৯ তারিখ। আর নিশ্চয় ফিরিশতারা সেই রাত্রে কংকরের চেয়ে অধিক পরিমাণে অবস্থান করে। (তাফসীরে ইবন কাছীর, খ. ৪, পৃ. ৫৩৭)।
হযরত আয়িশা (র.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, তোমরা রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কাদরের সন্ধান কর। (আল-বুখারী, খ. ২, পৃ. ৭১০, হা নং ১৯১৩।) হযরত ইবন উমর (র.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (স.)-এর কতিপয় সাহবীকে স্বপ্নযোগে রামাদানের শেষের সাত রাতে লাইলাতুর কাদর দেখানো হয়। (এ শুনে) রাসূলুল্লাহ্ (স.) বললেন, আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে। (আল-বুখারী, খ. ২, পৃ. ৭০৯, হা নং ১৯১১।) হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (র.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (স.) ইরশাদ করেন, আমাকে কাদরের রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। (রাসূলুল্লাহ্ (স.) বললেন,) শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ঐ রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মসজিদে রাসূলুল্লাহ্ (স.)-এর সালাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সালাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমন্ডল কাদা-পানি মাখা। (আল-বুখারী, খ. ২, পৃ. ৭১০, হা নং ১৯১৪।) হযরত উবাদা ইবনুস সামিত (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী কারীম (স.) আমাদেরকে লাইলাতুল কাদরের (নির্দিষ্ট তারিখের) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিল। তখন দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কাদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর। (আল-বুখারী, খ. ২, পৃ. ৭১১, হা নং ১৯১৯।)
মোট কথা পবিত্র কুরআনের সুষ্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, লাইলাতুল কাদর রামাদান মাসে। কিন্তু সঠিক তারিখ সম্পর্কে আলিমগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। তবে সাহীহ হাদীছদৃষ্টে শেষ দশ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল কাদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। যদি লাইলাতুল কাদর রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে ঘুর্ণায়মান এবং প্রতি রামাদানে পরিবর্তনশীল মেনে নেওয়া যায়, তবে লাইলাতুল কাদরের দিন তারিখ সম্পর্কিত হাদীছসমূহের মধ্যে কোন বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না। তাই অধিকাংশ ইমাম এ মতই পোষণ করেন। তবে ১ম মতটিকে জামহুরে উলামায়ে কিরাম প্রাধান্য দিয়েছেন।
লাইলাতুল কাদর গোপন রাখার রাহস্য: ‘আল্লামা কুরতুবী বলেন, সমগ্র রামাদান মাসে লাইলাতুল কাদর গোপন রাখার রহস্য হলো, যাতে করে আল্লাহর বান্দারা কাদর পাওয়ার আসায় আমল-ইবাদতের মাধ্যমে রামাদান মাসের রাতসমূহে চেষ্টা-মেহনত করে। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা গোপন রেখেছেন সালাতুল উসতাকে সমস্ত ফরয নামাযের মধ্যে, আল্লাহ্র নামসমূহের মধ্যে ইসমে আজমকে, জুমু‘আর দিন এবং রাত্রে দু‘আ কবূল হওয়ার সময়কে, গোনাসমূহে তাঁর অসন্তুষ্টিকে, ইবাদতের মধ্যে তাঁর সন্তুষ্টিকে, কোন সময়ে কিয়ামত সংঘটিত হবে, বান্দাসমূহের মধ্যে সৎব্যক্তির পরিচয় ইত্যাদি গোপন রাখা হয়েছে,। এটি আল্লাহর তা‘আলা পক্ষ থেকে রাহমত স্বরূপ এবং বিশেষ হিকমতের কারণে। (তাফ্সীরুল কুরতুবী, খ. ২০, পৃ. ১৩৭)।
ইমাম ফাখরুদ্দীন রাযী (রা.) লাইলাতুল কাদর গোপন রাখার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
এক. আল্লাহ্ তা‘আলা লাইলাতুল কাদরকে গোপন রাখছেন যেভাবে আরো অসংখ্য বিষয়কে গোপন রাখছেন। তিনি তাঁর সন্তুষ্টিকে গোপন রাখছেন তাঁর অনুগত্যের মধ্যে। যাতে তারা সমস্ত আনুগত্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ে। তিনি গযবকে গোপন রাখছেন তাঁর অবাধ্যতার মধ্যে যাতে মানুষ সমস্ত অন্যায় থেকে বিরত থাকে। তিনি তার ওয়ালীকে গোপন রাখছেন যাতে মানুষ সকল বান্দাদেরকে সম্মান প্রদর্শন করে। দু‘আ কবূল হওয়াকে গোপন রাখছেন, যাতে তারা দু‘আর মধ্যে বেশি সময় কাটায়। ইসমে আ‘জমকে গোপন রাখছেন, যাতে তাঁরই সমস্ত নামকে সম্মান করে। সালাতুল ওসতাকে গোপন রাখছেন, যাতে সমস্ত নামাযকে যথাযথভাবে আদায় করে। তাওবা কবূল হওয়াকে গোপন রাখছেন, যাতে বান্দারা সমস্ত প্রকারের তাওবার প্রতি যত্নবান হয়। মৃত্যুর সময়কে গোপন রাখছেন, যাতে বান্দারা মৃত্যুকে ভয় করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এভাবে লাইলাতুল কাদরকে গোপন রাখছেন, যাতে রামাদানের সমস্ত রাতকে সম্মান করে ইবাদাতকে জাগিয়ে রাখে।
দুই. যেন আল্লাহ্ তা‘আলা বলছেন, যদি আমি লাইলাতুল কাদরকে নির্দিষ্ট করে দিই, অথচ আমি জানি তোমরা গোনাহ্ করতে কত দুঃসাহস কর!, হতে পারে তোমরা নির্দিষ্ট কাদরের রাতেও গোনাহর কাজে লিপ্ত হয়ে যাবে। অথচ তুমি জেনে শুনে গোনাহ করা না জেনে গোনাহ করার চেয়ে জঘন্য অপরাধ। এই কারণে আমি এই রাত্রিকে গোপন রাখছি।
তিন. যখন বান্দা নিশ্চিত জানতে পারছে না যে, কাদরের রাত কোনটি তখন সে রামাদানের প্রত্যেক রাত্রে বেশি বেশি ইবাদত করবে, এই আশায় যে, হতে পারে এই রাত্রিটিই হবে লাইলাতুল কাদর। ফলে আল্লাহ্ ফিরিশতাদের সাথে তাদের সম্বন্ধে গর্ব করে বলে, তোমরা বলেছিলে, আদম সন্তান পৃথিবীতে ফিৎনা ছড়াবে এবং খুন-খারাবী করবে। অথচ তোমরা লক্ষ্য করো, তারা কদরের রাত ধারণায় প্রতি রাতে কষ্ট করছে। যদি তারা নিশ্চিত জানতে পারতো যে, কাদরের রাত কোনটি তাহলে তারা কতইনা কষ্ট করতো। সেই সময় আল্লাহ্ তা‘আলা বাণীর রহস্য প্রকাশ পাবে। “নিশ্চয় আমি যা জানি তোমরা তা জান না। সূরাতুল বাকারা, ২:৩০)। ”(মাফাতীহুল গায়ব, খ. ৩২, পৃ. ২২৯)।
সুতরাং আমরা লাইলাতুল কাদরে বেশি বেশি নফল নামায, ইবাদাত, যিক্র, কুরআন তিলাওয়াত, দরুদ ও সালাম, ওয়াজ-নাসীহত শ্রবণ, তাওবা-ইস্তিগফার, দু‘আ, গারীব-অসহায়কে দান করা ইত্যাদি ইবাদতে মগ্ন থাকার চেষ্টা করবো। হযরত আবূ হুরাইরা (র.) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কাদরের কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত থাকে, যে সম্পূর্ণই বঞ্চিত ও হতভাগা। (মুসনাদু ’আহমদ, খ. ৭, পৃ. ৭, হা নং ৭১৪৯)। তবে এমন কোন ইবাদত করবো না যার প্রমাণ কুরআন ও হাদীছে নেই। সওয়াবের নিয়তে যে কোন ইবাদত করা হবে তাঁর প্রমাণ আল-কুরআন ও আস-সুন্নাহ্ বিশ্বদ্ধভাবে থাকতে হবে। বহু কালধরে চলে আসতেছে এরকম দোহাই দিয়ে কোন বিদ‘আত করা যাবে না। বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ। অন্ধভক্তের কোন পথ নেই। যা করবেন তার বিশুদ্ধ প্রমাণ থাকতে হবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর।”(সূরাতুল বাকারাহ্, ২:১১১)। আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের সকলকে হিদায়াত দান করুন এবং তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশুদ্ধ তরিকায় আমাল করার তাওফীক দান করুন আমীন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।