পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হতে আবেদন করেছেন আছমা বিবি নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেত্রী। মুক্তিযুদ্ধের সময় যার বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর ৩ মাস। জাতীয় পরিচয় পত্রেও সে অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেকে ২০ বছরের যুবতী দাবি করে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার আবেদন করেছেন তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে। তার দাপটের ভয়ে সরকারিভাবে উপজেলার নারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটিও বীরাঙ্গনা হিসেবে গেজেটভ‚ক্তির সুপারিশ করে তার পক্ষেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থাসহ সঠিক তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার আবেদন করা আছমা বিবি জয়পুরহাট সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় মহিলা সংস্থা জয়পুরহাট জেলা শাখার চেয়ারম্যান এবং সদর উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। তার বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের উত্তর জয়পুর গ্রামে। পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর সে অনুযায়ী যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৮ বছর ৩ মাস ৬ দিন। কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ১২ বছর বয়স বাড়িয়ে তিনি তার জন্ম নিবন্ধনে জন্মতারিখ করে নিয়েছেন ১৯৫০ সালের ২০ ডিসেম্বর। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সময় ২০ বছরের যুবতী থাকায় তিনি পাক সেনাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন বলে দাবি করেন। আসমা তার কাগজপত্রে ৭ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করা, জন্ম তারিখ, মুক্তিযোদ্ধার সনদ সব কিছুই ভুয়া ও মিথ্যা দাখিল করে জাতীয় পর্যায়ে বীরাঙ্গনা খেতাব নেয়ার জন্য দাখিল করেছেন।
এ অবস্থায় নিজেকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করার জন্য আছমা বিবি ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে জামুকা’র সহকারী পরিচালক আব্দুল খালেক চলতি বছরের ২ জানুয়ারী বিশেষ কমিটি কর্তৃক যাচাই বাছাইয়ের জন্য জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে চিঠি ইস্যু করেন। চিঠির প্রেক্ষিতে সদর উপজেলায় কর্মরত ৫ সদস্যের সরকারি নারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহনাজ সিগমা তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে গত ২৪ জুন প্রতিবেদন জমা দেন। যেখানে তিনি আছমা বিবিকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভ‚ক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন।
জানা গেছে, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য আছমা বিবি স্থানীয় দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদ হতে পিতার পরিবর্তে স্বামীর নাম দিয়ে জন্ম তারিখ ১৯৫০ সালের ২০ ডিসেম্বর উল্লেখ করে জন্ম নিবন্ধনও করে নিয়েছেন। ১৯৬৩ সালে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেছেন মর্মে স্থানীয় একটি দাখিল মাদরাসা হতে প্রত্যয়নও জমা দিয়েছেন। পরে জন্ম নিবন্ধনের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয় পত্রে বয়স সংশোধনের আবেদন করলেও তথ্যে গড়মিল থাকায় নির্বাচন কমিশন তা বাতিল করে আগের জন্ম তারিখই বহাল রাখেন। এ পর্যন্ত তিনি তিনবার জন্ম তারিখ সংশোধনের চেষ্টা করলেও তা বাতিল হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বে ভারতীয় মালামাল আনা-নেয়ার কাজ করলেও ২০০৮ সালে জয়পুরহাট সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আছমা বিবি। পরে সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার দাপট আরও বেড়ে যায়। এলাকায় সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করাসহ এমন কোন কাজ নেই যেটা করেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আছমা বিবি শিশু ছিলেন। তার বয়স ৫ থেকে ৭ বছর ছিল। অথচ সে নিজেকে যুবতী হিসাবে দেখিয়ে তার সকল কাগজপত্র ভুয়া ও জাল তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত হয়েছেন দাবি করে বীরাঙ্গনা উপাধি পাওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট কাগজপত্র জমা দেন।
এ ব্যাপারে উত্তর জয়পুর দাখিল মাদরাসায় খোঁজ নিলে মাদরাসা সুপার আফাজ উদ্দিন বলেন, আমার এখানে সে পড়েছে এমন তথ্য জানা নেই তবুও চাপের মুখে আমাকে লিখিত প্রত্যয়ন দিতে হয়েছে। সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমজাদ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আসমা বিবির জন্ম হয়েছে কিনা তাতে সন্দেহ আছে। হলেও সে সময় তার বয়স ৪/৫ বছর হতে পারে। আমার কাছে আছমা বিবি এসে একটি সনদপত্র চায়, আমি তার চাপে বাধ্য হয়ে সনদ প্রদান করি।
এত কিছুর পরও আছমা বিবি নিজেকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, ওইসময় জাতীয় পরিচয়পত্রে আমার জন্ম তারিখ ভুল করে লেখা হয়েছে। তাই আমি সংশোধন করার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আমি একজন প্রকৃত বীরাঙ্গনা হিসেবে যাবতীয় কাগজপত্র সহ গেজেটভূক্তির জন্য আবেদন করেছি। জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন, আছমা বিবি নামের একজনের ফাইল আমার নিকট এসেছে। তার এসব কাগজপত্র সঠিক নয় এরুপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি গুরত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই শেষে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।