Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফিরেছেন লক্ষাধিক কর্মী

করোনার ৫ মাসের চালচিত্র অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলতে হবে : ড. তাসনিম সিদ্দিকী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বৈশ্বিক মহামারি করোনা বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বিপর্যয়কর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। যারা দেশে এসেছেন তাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী ফিরে যেতে পারছেন না। আবার যারা নতুন করে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তারাও যেতে পারছেন না। গত শনিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, যে সব শ্রমিক মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন তারা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সে দেশে ফিরে যেতে পারবেন না। শুধু মালয়েশিয়া নয়, করোনায় দেশে ফিরেছেন প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক; তাদের বেশিরভাগই বিদেশে ফিরে যেতে পারছেন না।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ইতালিসহ বিশ্বের ২৭টি দেশ থেকে গত পাঁচ মাসে (১ এপ্রিল থেকে ১ সেপ্টেম্বর) এক লাখ দুই হাজার ২২৬ জন প্রবাসী ফেরত এসেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৯৪ হাজার ২১০ জন ও নারী ৮ হাজার ১৬ জন।
বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসা শ্রমিকদের কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস, কেউ করোনার কারণে কাজ না বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া আবার কেউ ভিসার মেয়াদ না থাকায়, কেউ সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরত এসেছেন।

জানতে চাইলে প্রবাসীদের বেসরকারি সংস্থা রামুরুর চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা নিয়ে ২০১৬ সালের আন্তর্জাতিক বিধিমালায় বলা হয়েছে, যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে অভিবাসী শ্রমিকরা যে দেশে অবস্থান করবেন, তাদের দায়িত্ব সে দেশের ওপরই বর্তায়। অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলো সেটা তোয়াক্কা করছে না। বিশ্বব্যাপী তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় সব কিছু স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। এখানে সরকারকে অভিবাসীদের পেছনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ফোরামের সামনে উপস্থাপন করে সমাধান করতে হবে।

বাংলাদেশি শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত বিশ্বের ২৭টি দেশের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফেরত এসেছেন ৩১ হাজার ৩৯৪ জন (পুরুষ ২৯ হাজার ৭৩২ জন ও নারী এক হাজার ৬৬২ জন)। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ না থাকায় তারা কর্মীদের পাঠিয়ে দিয়েছে। বিদেশ ফেরত এই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের আবার নেয়ার কথা বলে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। কেউ জানান তারা ছুটিতে এসেছেন।
সউদী আরব থেকে ফেরত এসেছেন ২২ হাজার ৪২৭ জন (পুরুষ ১৯ হাজার ৮২৯ জন ও নারী দুই হাজার ৫৯৮ জন)। এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে তারা দেশে আসেন। মালদ্বীপ থেকে ৮ হাজার ৮২৩ জন (পুরুষ ৮ হাজার ৭৬৬ ও নারী ৫৭ জন) ফেরত এসেছেন। করোনার কারণে কাজ নেই তাই মালিক/কোম্পানি তাদের ফেরত পাঠিয়েছে।

করোনাকালে কুয়েত থেকে ফেরত এসেছেন ৮ হাজার ২৩৭ জন (পুরুষ ৮ হাজার ১৩৪ জন ও নারী ১০৩ জন)। কেউ আকামা বা ভিসার মেয়াদ না থাকায়, কেউ অবৈধ হওয়ায় সাধারণ ক্ষমার আওতায় আবার কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে দেশে ফিরে এসেছেন। কাতার থেকে ফেরত এসেছেন ৮ হাজার ২২১ জন (পুরুষ ৭ হাজার ৬১৫ জন ও নারী ৬০৬ জন)। কাজ না থাকায় দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ওমান থেকে ফেরত এসেছেন ৬ হাজার ৭১৫ জন (পুরুষ ছয় হাজার ১৫৩ জন ও নারী ৫৬২ জন)। এদের অনেকেই সে দেশে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে ফিরে আসেন।
এই সময়ে কাজ না থাকায় মালয়েশিয়া থেকে ফেরত এসেছেন তিন হাজার ৪৩৫ জন (পুরুষ ৩ হাজার ২৩৩ জন ও নারী ২০২ জন)। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফেরত এসেছেন ১০০ জন পুরুষ শ্রমিক। ইরাক থেকে ফেরত এসেছেন ৩ হাজার ১০১ জন (পুরুষ ৩ হাজার ৯৬ জন ও নারী ৫ জন)। শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরত এসেছেন ১৩৫ জন। কাজের মেয়াদ শেষে তারা ফেরত আসেন। তুরস্ক থেকে ফেরত এসেছেন ২ হাজার ৯৯৮ জন। (পুরুষ ২ হাজার ৭৩৯ জন ও নারী ২৬০ জন)। লেবানন থেকে ফেরত এসেছেন ২ হাজার ১৮৫ জন (পুরুষ এক হাজার ৪০১ জন ও নারী ৭৮৪ জন)। কী কারণে ফেরত আসেন তার উল্লেখ নেই।

জর্দান থেকে ফেরত এসেছেন এক হাজার ৩৯২ জন (পুরুষ ২৭২ জন ও নারী এক হাজার ১২০ জন)। তাদের সবাই গার্মেন্টস শ্রমিক। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফিরে এসেছেন তারা। সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত এসেছেন এক হাজার ৬০৪ জন (পুরুষ এক হাজার ৬০০ জন ও নারী ৪ জন)। কাজের বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা দেশে ফেরত আসেন। ৭৪৬ জন পুরুষ শ্রমিক বাহরাইন থেকে ফেরতে এসেছেন। তারা বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে দেশে আসেন।

গত ৫ মাসে ইতালি থেকে ফেরত এসেছেন ১৫১ জন পুরুষ। ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ১৫১ জন বাংলাদেশ কর্মীকে করোনা সন্দেহে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভিয়েতনাম থেকে ফেরত এসেছেন ১২২ জন পুরুষ শ্রমিক। রাশিয়া থেকে ১০০ জন ফেরত আসেন। তাদের সকলেই পুরুষ। কী কারণে ফেরত আসেন তা উল্লেখ করা হয়নি। কাজ না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৭১ জন পুরুষ ফেরত আসেন। নেপাল থেকে ফেরত আসেন ৫৫ জন (তাদের মধ্যে পুরুষ ৪০ জন ও নারী ১৫ জন)। কী কারণে ফেরত আসেন তার উল্লেখ নেই।

করোনাকালে কাজ না থাকায় কম্বোডিয়া থেকে ৪০ জন পুরুষ ফেরত আসেন। মিয়ানমার থেকে ৩৯ জন, মরিশাস থেকে ৩৬ জন, থাইল্যান্ড থেকে ৩২ জন (পুরুষ ৩০ জন ও নারী দুইজন), হংকং থেকে ১৬ জন, জাপান থেকে ৮ জন, ইংল্যান্ড থেকে ৪৩ জন (পুরুষ ৩০ জন ও নারী ১৩ জন) দেশে ফেরত এসেছেন।



 

Show all comments
  • নাজিম ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৩৩ এএম says : 0
    সম্ভবত দেশটা দীর্ঘমেয়াদে চরম বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে!মহান আল্লাহ এই দুঃসময় থেকে সবাইকে রক্ষা করুক।পুরো জাতিকে আল্লাহ হেফাজত করো।
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৩৪ এএম says : 0
    এটা খুবই উদ্বেগ ও চিন্তার বিষয়
    Total Reply(0) Reply
  • সঞ্জয় ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৩৫ এএম says : 0
    এজন্য সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৩৬ এএম says : 0
    এখই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে পরে আর কোন কিছু করা যাবে না
    Total Reply(0) Reply
  • রুহান ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৩৬ এএম says : 0
    নিউজটি করায় দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ