পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মামলায় হাজিরাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আদালতে এসে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন অসুস্থ এবং বয়স্ক মানুষ। নিয়মিত আদালত খোলার পর সশরীরে উপস্থিতির কোনো বিকল্প রাখা হয়নি। এ কারণে ভয়াবহ করোনাঝুঁকির মধ্যেই আদালত প্রাঙ্গনে আসতে বাধ্য হচ্ছেন অতি ঝুঁকিতে থাকা রোগাক্রান্ত, ষাটোর্ধ্ব নাগরিকরা। এর ফলে আদালত অঙ্গন হয়ে উঠেছে ‘করোনা ফাঁদ’। এ ফাঁদে পড়ে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।এর মধ্যে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন আদালতমুখি বয়স্ক নাগরিকরা।
স্বাস্থ্য সেক্টরের নৈরাজ্য, আদালত প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা এবং আদালতে আসা মানুষদের অসচেতনতাই আদালত পাড়া থেকে দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়ার কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মামলার ধরণ, আইনজীবীর বয়স, বাদী-বিবাদীর বয়স, স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় নিয়মিত আদালতে সশরীরে উপস্থিতির বিকল্প রাখা প্রয়োজন। নিয়মিত আদালতের আওতায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কিছু ‘ভার্চুয়াল কোর্ট’ও থাকা দরকার। যেমনটি রাখা হয়েছে উচ্চ আদালতে।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, অন্তত: ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ সংক্রমণের ঘটনা খুবই সামান্য। মারাত্মক আক্রান্ত ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং মাত্র ৪ দশমিক ৭ শতাংশের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া মৃতের হার সবচেয়ে বেশি ৮০ বছর বা তার চেয়েও বেশি বয়সীদের। এই বয়সীদের মৃত্যুর হার ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৯ বছর পর্যন্ত বয়সীদের মধ্যে মৃতের ঘটনা নেই। আর ৩৯ বছর পর্যন্ত বয়সীদের মধ্যে মৃতের হার মাত্র দশমিক ২ শতাংশ। এরপরের বয়সীদের মধ্যে এই হার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ৪০ এর কোঠায় বয়সীদের মৃতের হার দশমিক ৪ শতাংশ, ৫০ এর কোঠায় বয়সীদের ১ দশমিক ৩ শতাংশ, ৬০ এর কোঠায় বয়সীদের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৭০ এর কোঠায় বয়সীদের মৃতের হার ৮ শতাংশ।
এদিকে চীনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর অসুখে ভোগা ব্যক্তিরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন। ঝুঁকিতে রয়েছেন ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট ও হাইপারটেনশনে ভোগা মানুষেরা। বয়স্ক, অসুস্থ এবং দুর্বল মানুষদের এহেন ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করেই গত ১১ মে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জেলা আদালতগুলোতে ভার্চুয়াল বেঞ্চ পদ্ধতি চালু করে। ২১ দফা নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত হয় ভার্চুয়াল বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, চেম্বার কোর্ট এবং হাইকোর্ট বিভাগেও একক ভার্চুয়াল বেঞ্চ চলে। করোনা পরিস্থিতির ক্রম:অবণতির প্রেক্ষাপটে বর্তমানে উচ্চ আদালতে ভার্চুয়াল এবং অংশত: নিয়মিত আদালত চালু রয়েছে।
করোনা-বাস্তবতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল কার্যক্রমে অভ্যস্থ হয়ে উঠছিল। বিচারাঙ্গনেও তরুণ প্রজন্মের বিচারক, আদালত সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনজীবীগণ ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার পরিচালনাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু বিপত্তি বাধে এক শ্রেণির আইনজীবীর ভার্চুয়াল-ভীতি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় আইনজীবীরা ভার্চুয়াল পদ্ধতির আওতায় আসতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এক পর্যায়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে ভার্চুয়াল আদালতের বিপক্ষে নেমে পড়েন। পেশাগত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাতে থাকেন নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার। ফলে আদালতমুখি মানুষের স্বাস্থ্যগত এবং জীবনের নিরাপত্তার চেয়ে আইন পেশা টিকিয়ে রাখার দাবি মুখ্য হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সরাসরি খুলে দেয়া হয় নিয়মিত আদালত। আদালতগুলো বিচারপ্রার্থী, বিচারক, আইনজীবী এবং আদালত সংশ্লিষ্ট শ্রেণি পেশার মানুষে সরগরম হয়ে ওঠে। রীতিমতো মানব-জট সৃষ্টি হয় আদালত ভবন সংলগ্ন ফুটপাথ, প্রাঙ্গন, নকলখানা, জিআরও, ডেসপাস, এফিডেভিট শাখা। বার ভবনগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ায় টানা ৭ মাস বন্ধ থাকা মামলার চাপ পড়ে নিয়মিত আদালতের ওপর। ফলাফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।
আদালতের ৪৪ জন বিচারক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ১৬৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট আক্রান্ত ২১১ জন। এদের মধ্যে একজন বিচারক ইন্তেকালও করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবী ইন্তেকাল করেছেন ৪৩ জনের বেশি। সুপ্রিম কোর্ট বারে ইন্তেকাল করেছেন ৫৩ জন আইনজীবী।
কতজন বিচারপ্রার্থী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন- সেই হিসাব অবশ্য কেউ রাখেনি। আদালতে এসে করোনা আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছেন পরিবারের সদস্য ও স্বজন। তার সংস্পর্শে এসে অনেকেই সংক্রমিত হচ্ছেন।
ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী বলেন, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) প্রতিটি নাগরিকের মেনে চলা উচিত। আইনের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন বা সংক্রমণের ঝুঁকি আছে জানা থাকা সত্তে¡ও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে যান এবং তা গোপন করেন তা অপরাধ। এ ক্ষেত্রে আদালত ৬ মাসের কারাদন্ড বা ১ লাখ টাকা জারিমানা করতে পারেন অথবা উভয় দন্ড দিতে পারেন।
আইনের এই বিধান সত্তে¡ও আইনাঙ্গনের মানুষই অন্যের দ্বারা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্যকেও আক্রান্ত করছেন। নিয়মিত আদালতে বাধ্যতামূলক শারীরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গিয়েই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসেন আলী খান হাসান বলেন, সব মামলায় বাদী-বিবাদী আদালতে হাজির হওয়া বাধ্যবাধকতা নেই। মামলার ধরণ, গুরুত্ব, আইনজীবী, বাদী-বিবাদীর বয়স এবং অসুস্থতা বিবেচনায় নিয়মিত আদালতের আওতায় ভার্চুয়াল উপস্থিতির অপশনও রাখা প্রয়োজন। এতে বিশেষত: বয়স্ক বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী করোনা সংক্রমণ থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেতেন। তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালতে দু’টি অপশনই রাখা হয়েছে। সেখানে সম্ভব হলে বিচারিক আদালতে ভার্চুয়াল-অ্যাকচুয়াল দু’টি অপশনই রাখা সম্ভব হবে না কেন?
এদিকে বিচারিক করোনা সংক্রমণ থেকে আদালতগামী মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়ে কি উদ্যোগ রয়েছে-জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কতিপয় নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রতিটি আদালতের বিচারককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষার নির্দেশনা ভঙ্গ হলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার। স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা সংক্রমণের চারটি কারণ থাকে। চারটি জায়গায়ই আমাদের ঘাটতি রয়েছে। দূরত্ব রক্ষা করা, মাস্ক, হাত ধোয়া আর হাঁচি-কাশি নিয়ন্ত্রণ করা। এখানে তিনটি রক্ষা করা সম্ভব হলেও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করাটা কঠিন। আদালত হচ্ছে একটি পাবলিক প্লেস। এখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করাটা অত্যন্ত জটিল। তাই কম মানব উপস্থিতিই এখানে করোনা বিস্তার হ্রাস করতে পারে। ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হার্টের রোগী এবং বয়স্ক মানুষদের আদালত অঙ্গন এড়িয়ে চলাটাই শ্রেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।