Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রসঙ্গ : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ

মোস্তফা আনোয়ার খান | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। যার স্মারক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ডাকগ্রহণ ও বিতরণ শাখা নং-৭৩৮৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের পাশাপাশি জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশের আলেম-ওলামাদের দ্বারা এই মুহূর্তে মোটিভেশন প্রোগ্রাম শুরু করা উচিত। এজন্য দেশের ৪৮৯টি উপজেলার প্রত্যেক উপজেলায় কমপক্ষে ১০ জন আলেমকে নিয়ে মোটিভেশন কমিটি গঠন। তারা মসজিদ, মাদ্রাসা ও গ্রামসহ দেশের প্রত্যেক স্থানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করবে। কমিটি যে সমস্ত গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব পায়, তা সরকারের নিকট উপস্থাপন করবে। যাতে সরকার প্রয়োজনীয়গুলি বাস্তবায়নের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে মোটিভেশনের জন্য একটি আইন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যাতে কোন দিন জঙ্গিবাদ এদেশে না আসতে পারে। যার যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা বিবরণের সাথে গাথা ছিল। বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা ও কার্যকর করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর নিকট পৌঁছেছে কিনা জানা যায়নি। যেহেতু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের সকল শ্রেণির নাগরিককে সম্পৃক্ত করে কোন মোটিভেশন প্রোগ্রাম গ্রহণের প্রস্তাবের খবর আমার কাছে নেই, সেহেতু আশা ছিল প্রস্তাবটি জনসম্মুখে পেশ করা হবে বা সংসদে তোলা হবে। এমন তো হতে পারে যে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সংসদে বা গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-মাঠে-ঘাঁটে আলোচিত হলে এর চেয়ে আরো সুন্দর ও কার্যকর প্রস্তাব আসতে পারে। এ দাবি ও আশা সরকার ও বিরোধী দলসহ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠনের প্রতি সকল শ্রেণি ও পেশার বিবেকবান মানুষের প্রতি। দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইমামদের প্রতি।
এ ধরনের প্রস্তাব মাননীয় ধর্মমন্ত্রীর সমীপে ৩ এপ্রিল ১৩ দেয়া হয়েছিল। তারই বা কি হলো জানি না। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি ’১৪ ধর্মমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে মোটিভেশন প্রোগ্রাম গ্রহণের জন্য কিছু কথা ও কাগজ পেশ করা হয়েছিল।
এই প্রস্তাবের একটি করে ফটোকপি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বর্তমানে সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদকেও দেয়া হয়েছিল এই আশায় যে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উপর তাদের মুখ থেকে কোন কথা সংসদে বা সংসদের বাইরে শোনা যাবে। “সে আশায়ও গুড়ে বালি”। ২০১০ সাল থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লিখে যাচ্ছি, কাজ করে যাচ্ছি আরও আগে থেকেÑফলতো শূন্য।
বাংলাদেশে ধর্মের নামে যে ধরনের উগ্রতা, জীবনহানি, সন্ত্রাস ইত্যাদি হয়েছে এবং পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আরো হবে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা দেশের সকল মানুষের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সমস্ত কার্যকলাপ মোকাবিলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তার সাথে দেশের সকল নাগরিককে সম্পৃক্ত করে একটি মোটিভেশন প্রোগ্রাম শুরু করা খুবই জরুরি।
ইসলাম ধর্মের মূল গ্রন্থ হচ্ছে আল-কুরআন। আল-কুরআনের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কাজ। আল-কুরআনের শিক্ষা সন্ত্রাস প্রতিরোধের শিক্ষা, একথা যারা আল-কুরআনের অর্থ একবার পড়েছেন তারা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। দেশের প্রায় ৯০% নাগরিক মুসলিম। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাদের মধ্যে যারা লেখাপড়া জানে না তাদের কথা বাদ দিলে, যারা লেখাপড়া জানেন তাদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের ৯৮% জন শিক্ষিত লোক সমগ্র কুরআনের অর্থ একটিবারও পড়েননি এবং জানেন না, ৯০% নাগরিক আবেগ ও বিশ্বাস যে কিতাবের সাথে জড়িত, যে কিতাবের জন্য সে যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে জীবন দিতে প্রস্তুত, তাতে কী লেখা আছে। ফলে ইসলাম ও আল-কুরআরে নামে পরকালের ভয় দেখিয়ে নিজের বা গোষ্ঠীর স্বার্থে বশীকরণ অপপ্রলাপের মাধ্যমে মানুষকে গোলক ধাঁধাঁয় ফেলে দেয়া কঠিন কাজ নয়। আর এটাই ইদানীং হচ্ছে। আর একবারও যদি কারো সমগ্র আল-কুরআনের অর্থ পড়া থাকে, তবে অন্ততঃ কোন অবস্থাতেই তার সামনে ইসলাম, আল-কুরআন, পরকাল ইত্যাদির দোহাই দিয়ে উগ্রতা, জীবনহানি, সন্ত্রাস প্রভৃতি করে কেউ পার পাবে না।
এ জন্য ইসলামের নামে উগ্রতা, জীবনহানি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশের প্রত্যেক শিক্ষিত মানুষ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাই যেন মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে পারে, এজন্য সমগ্র আল-কুরআনের অর্থ পড়া থাকার জন্য দেশের সাধারণ মুসলিম নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষক-ছাত্র, সরকারি আধা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্য করা সবচেয়ে জরুরি। আরেকটি বিষয়, দেশের ৯০% মানুষের প্রাণের চেয়েও প্রিয় সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়টি জানা না থাকা একজন মানুষ, যে কোন ধারায় শিক্ষিতই হোক আর যে কোন অবস্থানে যে কোন পদমর্যাদায়ই থাকুক, এটা তার জন্য কোন অবস্থাতেই শোভনীয় নয়। প্রত্যেক মুসলিম শিক্ষিত নাগরিকের যাতে কুরআনের অর্থটুকু পড়া থাকে এ জন্য আইন হওয়া উচিৎ।
আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, আল্লাহর নাজিল করা কিতাব আল-কুরআনে কী লেখা আছে তা ব্যক্তিগতভাবে দেশের প্রত্যেক মুসলমানকে ও অন্যান্যদের জানানোর জন্য বাংলা তরজমাসহ কুরআন মজিদ পড়ার জন্য উৎসাহিত করা, বিনা মূল্যে তরজমাসহ কুরআন মজিদ (তরজমাটুকু পড়ার শর্তে) বিতরণ করা এবং বিতরণ করতে অন্যদেরকে উৎসাহিত করা। ইসলামের নামে উগ্রতা, জীবনহানি ও সন্ত্রাস ইত্যাদিকে নিরুৎসাহিত ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। এ উদ্দেশ্যে সভা-সম্মেলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করা ও অন্যান্যদেরকে করতে উৎসাহিত করা। এ ব্যাপারে কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, কে জাতীয় পার্টি, কে খেলাফত মজলিশ, কে কমিউনিস্ট পার্টি বা জামায়াতে ইসলামী বা কে কোন মতাদর্শের তা কোন অবস্থাতেই আলোচ্য ও বিবেচ্য বিষয় হতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে দু’একটি কথা বলা উচিৎ। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বর্তমানে সবচেয়ে সোচ্চার মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো। পৃথিবী জুড়ে তারা আজ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় যুদ্ধ চালাচ্ছে। এ জন্য তাদের উচিত-যুদ্ধে এই এত খরচ ও প্রাণহানির সাথে একটি মোটিভেশন প্রোগ্রামও চালু করা। এজন্য তাদের উচিৎ প্রথম তাদের দেশের সকল মুসলিম নাগরিকের জন্য ইসলামের মূল গ্রন্থ আল-কোরআনের অর্থটুকু কমপক্ষে একবার হলেও পড়া থাকা বাধ্যতামূলক করে আইন করা এবং যে সব মুসলিম নাগরিক তাদের দেশ যাবে তাদের কোরআনের অর্থটুকু পড়া আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার ব্যবস্থা করা। যারা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও কোরআনের অর্থটুকু একবারও পড়েন নাই তাদের ভিসা না দেয়া এবং ঢুকতে না দেয়া।
এই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কারণ কি? তা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় বা বর্তমান দুনিয়ার মানুষের মাঝে প্রচলিত ব্যবস্থাপনা জনিত না অন্য কিছুর জন্য, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সারাবিশ্বের সমাজবিজ্ঞানী দার্শনিকদের মতামত গ্রহণের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অসুখের কারণ জানতে পারলে পূর্ণ নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থা দেয়া সহজ।
লেখক : সমাজ বিশ্লেষক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রসঙ্গ : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ