Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকান্ড : ১২ সুপারিশে ৮০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী কাল

খুনিদের রক্ষায় ঘাপটি মেরে থাকা ওরা কারা?

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:২৬ পিএম | আপডেট : ৯:২১ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ১২ দফা সুপারিশ সম্বলিত ৮০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আগামীকাল (৭ সেপ্টেম্বর) জমা দেয়া হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে। মেজর (অব.) সিনহা হত্যার বিষয় তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় কক্সবাজার হীলডাউন সার্কিট হাউজে সংবাদ মাধ্যমকে ব্রীফিংকালে একথা বলেন।

এসময় তিন দফা সময় বাড়িয়ে ৩৫ দিনের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা জানালেন কমিটি এই প্রধান। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে গেছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে সম্মলিত এই প্রতিবেদনটি প্রায় ৮০ পৃষ্টা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের সাথে ভবিষ্যতে যাতে এই্ ধরণের ঘটনা আর নাঘটে সে জন্য করণীয় সম্পর্কে একটি সুপারিশমালাও প্রণয় করা হয়েছে। দুটিই স্বরাষ্টমন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়া হবে।

গত ৩১ আগস্ট টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাজাহান আলিকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে সদস্য করা হয়েছিলো, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি। কিন্তু এর পরদিনই (৩ আগস্ট) তদন্ত কমিটি ৪ সদস্য বিশিষ্ট করে পুনর্গঠন করা হয়। এতে কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। সদস্য করা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. জাকির হোসেন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদকে।

গত ৩ আগষ্ট তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেছিলো। এসময় কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সরকার ৭ কর্মদিবস সময় নির্ধারণ করে দিলেও এনিয়ে তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রথম দফায় ২৪ আগস্ট পর্যন্ত, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু এর মধ্যে বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে আরো ৭ দিনের সময় নেয় এবং তা বাড়ানো হয় ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। গত ৩ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞবাদ করে তদন্ত দল।

৩১ জুলাই মেজর (অব.) সিনহা হত্যার পর ৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি মাসব্যাপী ঘটনার তদন্ত করে তিন দফায় সময় বাড়িয়ে ৬৮ জনের সাথে কথা বলে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও ইনস্পেকটর লিয়াকতের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সর্বত্র। ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী রিমান্ডে তাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমাদেয়া ঠিক আগমুহূর্তে এই ভিডিও বার্তা পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।

অভিজ্ঞ জনদের মতে, কক্সবাজার আদালত থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তুলে দুই আসামিকে জেলা কারাগারে নেওয়ার পথেই পরিকল্পিতভাবে এই ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে তা জোড়া লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ওই ভিডিও ক্লিপে প্রদীপ ও লিয়াকত তাঁদের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।

প্রিজন ভ্যানে থাকা কারাবন্দীর হাতে কীভাবে মুঠোফোন দিয়ে কথা বলার সুযোগ দিল, কারা একটি জঘন্য হত্যাকান্ডের রিমান্ডে থাকা আত্মস্বীকৃত আসামীদের ভিডিও ক্লিপ এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধমে ছড়িয়ে মামলার তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কাজটা কৌশলে করল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। অভিজ্ঞ মহলের মতে পুলিশের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা একটি প্রভাবশালী চক্র কী এখনো মেজর সিনহা হত্যার জঘনয় খুনিদের রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে? তারাই বা কার? এমন প্রশ্ন এখন দেশের সচেতন মানুষের।

৪ দফায় টানা ১৫ দিন রিমান্ড শেষে প্রদীপ কুমার দাশকে তদন্ত সংস্থা র‍্যাবের গাড়িতে কক্সবাজার আদালতে আনা হয় ১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রিজন ভ্যানে তুলে প্রদীপকে আদালত থেকে পাঠানো হয় জেলা কারাগারে। এর দুই দিন আগে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে একই প্রিজন ভ্যানে লিয়াকতকে কারাগারে পাঠানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, প্রিজন ভ্যানে প্রদীপ ও লিয়াকতের ভিডিও ধারণ করা হয়।

লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ, র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক
এ বিষয়ে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘ডিভিওতে যেসব নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে, রিমান্ডে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কারণ, আমরা রিমান্ড শেষে মেডিকেল পরীক্ষা করিয়েছি। ওই ভিডিও তদন্তে কোনো প্রভাব পড়বে না, বলেও তিনি জানান।

এদিকে প্রিজন ভ্যানে ভিডিও চিত্র ধারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মোকাম্মেল হোসেন বলেন, প্রিজন ভ্যানে কিছু ঘটলে তাঁর কিছু করার নেই। কারণ, প্রিজন ভ্যানটি পুলিশের। পুলিশই আসামীদের কারাগার থেকে আদালতে আনা নেয়া করে থাকে।



 

Show all comments
  • ইমরান ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:১৫ পিএম says : 0
    ঐ দিন জেলে নেওয়ার সময় যে পুলিশ গাড়িতে ছিল তাদের জিজ্ঞেস করলে তো সত্য বেরিয়ে আসত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ