Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টাকা যায় শিলংয়ে

অনলাইন জুয়ার ফাঁদ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

অনলাইন জুয়া বা ‘তীর খেলা’র ফাঁদে পড়ে ৭০ গুণ লাভের আশায় প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। আর এই জুয়ার লাভের টাকা ভাগ বাটোয়ারার পর একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে ভারতের শিলংয়ে। কারণ অনলাইন এই জুয়া সেখান থেকেই পরিচালিত হয়। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এর প্রভাব বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও সিলেট থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনে জুয়া খেলার টাকা সিলেটসহ চারটি সীমান্তবর্তী জেলা দিয়ে চলে যায় ভারতের শিলংয়ে। যেহেতু শিলং থেকে এই জুয়ার নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাই জড়িত মূলহোতাদের আইনের আওতায় আনা বেশ জটিল।

ডিবির অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের এসি নাজমুল হক বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া খেলার মূলহোতাদের চারজনকে ঢাকা ও নেত্রকোনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো- শামীম মিয়া (৩০), আবদুল আলী (৩১), এরশাদ মিয়া (২৯) ও সোহাগ মিয়া (২৭)। অনলাইন জুয়ার ফাঁদে ফেলে একটি চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ চক্রের সদস্যরা গত দুই বছর ধরে সারাদেশে সক্রিয়। জুয়াড়ি, সেলসম্যান ও এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এই জুয়া।

যেভাবে হাতিয়ে নেয় টাকা : ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, শিলংয়ের জুয়াড়িরা বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এজেন্টরা আবার বিভিন্ন এলাকায় তাদের সেলসম্যান নিয়োগ করে। এই সেলসম্যানদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের লোভ দেখিয়ে শিলং তীর জুয়ায় আসক্ত করা হয়। ভারতের শিলংভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘তীর টুডে ডটকম’ ব্যবহার করে ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বরগুলো বিক্রি করা হয়। ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত নম্বরগুলো যারা কেনে তাদের সঙ্গে সেলসম্যানরা যোগাযোগ করে। তখন জুয়াড়িরা সেলসম্যানের কাছে নম্বর ও বিভিন্ন অংকের টাকা দেয়। সেলসম্যানরা বিক্রিত এ নম্বরের বিপরীতে টাকা দেয় এজেন্টের কাছে।

শিলংয়ে রোববার ব্যতীত সপ্তাহে দুবার জুয়ার ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ড্রতে ১ হতে ৯৯ এর মধ্যে একটি নম্বর বিজয়ী হয়। যে ওই নম্বরটি কিনেছিল তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীরা নম্বরের ক্রয়মূল্যের ৮০ গুণ টাকা এজেন্টের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় একজন বাদে সবাই পুঁজি হারিয়ে ফেলে। জুয়াড়ি, সেলসম্যান ও এজেন্টের মধ্যে সব লেনদেন সম্পন্ন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মাধ্যমে। সেলসম্যানরা জুয়াড়িদের কাছ থেকে সংগৃহীত টাকা থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন রেখে বাকিটা ঢাকার এজেন্ট শামীম ও আবদুল আলীর কাছে পাঠায়। এরপর শামীম ও আলী তাদের কমিশন রেখে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেত্রকোনার এজেন্ট এরশাদ ও সোহাগের কাছে পাঠায়। পরে টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতের শিলংয়ে চলে যায়।
অনলাইন জুয়া ‘তীর টুডে ডটকম’ : ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশেই ‘তীর টুডে ডটকম’র এজেন্ট ও সেলসম্যান রয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে চলছে এই জুয়া খেলা। দিনমজুর, ট্রলি ড্রাইভার, কয়লা শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ীসহ কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে জুয়ার এজেন্টরা। বিজয়ীরা লাভবান হলেও অসংখ্য মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। গত দুই বছরে চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

যেভাবে বিস্তার : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের শিলং ও গোহাটি এলাকা থেকে চালু হয় এই অনলাইন জুয়া তীর খেলা। এরপর ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে। সিলেটের অনেককে সর্বশান্ত করে জুয়াটি বিস্তার লাভ করে নেত্রকোনায়। এরপর নেত্রকোনা হয়ে শিলং তীরের থাবা পড়েছে রাজধানীতে।

গত ২৪ আগস্ট বিকেলে গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনলাইনে শিলং তীর জুয়ার এজেন্ট শামীম ও আবদুল আলীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদে দেয়া তথ্যমতে পরদিন সকালে নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার বরুয়াকোনা বাজার থেকে এজেন্ট এরশাদ ও সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা থেকে এজেন্টরা বিকাশের মাধ্যমে এরশাদ ও সোহাগের কাছে টাকা পাঠাত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনলাইন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ