Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

না’গঞ্জে নৌকার মাঝি খলিলের মুখে এস আই শামীমের নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:১০ পিএম

নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে স্কুল ছাত্রী জিসা মনিকে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা ও লাশ গুমের কথিত গল্পে ফাঁসিয়ে দেয়া তিনজনের একজন নৌকার মাঝি খলিলুর রহমান (৩৬) মুখ খুলেছে। তবে অজানা ভয়ে তিনি আতঙ্কিত। কারণ রিমান্ডে অমানষিক নির্যাতনের কথা মনে হলেই আঁতকে উঠেন তিনি। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে জামিনে মুক্ত হয়েছেন খলিলুর রহমান। গত ৯ আগস্ট থেকে তিনি কারাবন্দি ছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথমে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চললেও পরবর্তীতে কথা বলেন।
খলিল বলেন, একাধিক বার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে অনবরত মুখে পানি ঢেলে নির্যাতন করেছে সদর থানা পুলিশের এসআই শামীম আল মামুন (বরখাস্ত)। নির্যাতনের মুখে প্রাণে বাঁচতে স্কুল ছাত্রী জিসা মনিকে ধর্ষণ ও হত্যার জবানবন্দি দিয়েছি।
তিনি বলেন, গত ৮ আগস্ট তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের কোনো কারণ বলা হয়নি। এসআই শামীম এসে তাকে ধরে নিয়ে যান। সদর থানায় তার সামনে দুই ছেলেকে (জিসা মনির কথিত প্রেমিক আব্দুল্লাহ ও অটোচালক রকিব) দেখিয়ে বলে, ‘তুই ওদের চিনিস’? তখন তিনি বলেন তাদের চিনি না।
খলিল বলেন, আমার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে মুখে গামছা বেঁধে অনবরত মুখে পানি ঢালত। পানি ঢালার কারণে দম বন্ধ হয়ে যেত। মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য বারবার মুখে গামছা বেঁধে পানি ঢেলে নির্যাতন করেছে। যদি স্বীকারোক্তি না দেই তাহলে আমাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
আমি ওই দুই ছেলে ও কিশোরীকে চিনি না। জীবনে তাদের দেখি নাই। তবু শামীম স্যার আমাকে মারধর করেন আর বলেন, ‘তুই মিথ্যা কস।’ এভাবে আমাকে থানার লকআপে তিন দিন আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
খলিলের স্ত্রী শারমিন বেগম বলেন, গ্রেপ্তারের পর দুই দিন থানায় ভাত দিয়েছি। পরের দিন ভাত নিয়ে গেলে রাখেনি পুলিশ। পুলিশ আমাগো দেখা করতেও দেয় নাই। এসআই শামীম উল্টা আমার কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়েছিল।
গত ৪ জুলাই শহরের দেওভোগ এলাকার পোশারক শ্রমিক জাহাঙ্গীরের মেয়ে স্কুল ছাত্রী জিসা মনি (১৫) নিখোঁজ হয়। ১৭ জুলাই তার পরিবার থানায় জিডি করেন। পরে এক মাস পর ৬ আগস্ট একই থানায় স্কুলছাত্রীর বাবা অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২২) ও তার বন্ধু বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে রকিবকে (১৯) ও ৭ আগস্ট বন্দরের একরামপুর ইস্পাহানি এলাকার বাসিন্দা নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে।
গত ৯ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শামীম আল মামুন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয় আসামিরা। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় এ ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। অথচ ২৩ আগস্ট দুপুরে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে নিখোঁজ স্কুল ছাত্রী। ফেরার পর ইকবাল পন্ডিত নামে এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে সংসার করছিল বলে জানায় জিসা মনি। পুলিশ অপহরন মামলায় ইকবালকেও গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় চারদিকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পুলিশের তদন্ত ও আদালতে দেওয়া তিন আসামির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
এরপরই পুলিশের রিমান্ড ও তদন্ত নিয়ে মিথ্যাচার সামনে আসে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ