Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিস্তা-মেঘনায় তীব্র ভাঙন

বানের পানি নামার সাথে সাথেই নতুন বিপদ

লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা ও উলিপুর (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

তিস্তা ও মেঘনার তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মানুষের আবাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার এবং ফসলি জমি। নদীর করাল গ্রাসে সর্বস্ব হারিয়ে পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ থেকে অনেক সম্ভ্রান্ত গৃহস্থ পর্যন্ত। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই চিত্র।

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। টানা কয়েকদিনে তিস্তুা নদীর ভাঙনে বসত-বাড়িসহ কয়েকশ’ একর আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও চরম হুমকির মুখে রয়েছে স্কুল, মাদরাসা ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। স্থানীয় লোকজন বাঁশ, গাছের গুড়ি ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভিটে-মাটি হারিয়ে এসব মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সরেজমিনে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মুহূর্তেই ভেঙে যাচ্ছে রোপা আমন ক্ষেত। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে পার্শ্ববর্তী উঁচু স্থানে। দীর্ঘ বন্যার ধকল কাটতে না কাটতেই ভাঙনের শিকার মানুষজন দিশেহারা।

কথা হয় ওই গ্রামের নুরুল হকের সাথে। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘হাল গিরস্ত সইগ আছিল বাহে, আইজক্যা মুই নিঃস্ব হয়া গেনু। এহন হামাক বাঁন্ধের আস্তাত যায়া থাকা নাগবে’। একই কথা বলেন গ্রামের আজিজার রহমান, আব্দুল মালেক, জয়নাল আলী, মোস্তা মিয়াসহ অনেকে।

তারা জানান, তিস্তার ভাঙনে এ গ্রামের মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নদের তীব্র ভাঙনে গোড়াইপিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিয়ারী দাখিল মাদরাসা, গোড়াইপিয়ার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ঝাঁকুয়াপাড়া, মন্ডলপাড়া, কুমারপাড়া, মুলাধোয়ারপাড়সহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি, সহস্রাধিক একর ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকার নীলকণ্ঠ, কুমারপাড়া, দাঁগার কুঠি, মাঝিপাড়া, পালেরঘাটসহ কয়েকটি এলাকায় অব্যাহত ভাঙন রয়েছে।

এদিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, তিস্তা নদী রক্ষা জেলা কমিটির সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সরদার, থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার ভাঙনকবলিত গোড়াইপিয়ার এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙনরোধ ও সহায় সম্বলহীন পরিবারগুলোকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
কুড়িগাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে।

ল²ীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে লক্ষীপুরে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙনের কবলে পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। সম্প্রতি দফায় দফায় উজানের পানির চাপে মেঘনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামগতি উপজেলার বড়খেরী, চরআলগী ও কমলনগর উপজেলার ফলকন, চরলরেন্স, পাটোয়ারীরহাট, সাহেবেরহাট এলাকায় মেঘনার ভাঙনে অনেকটাই বিলীন হওয়ার পথে। নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ, নবীগঞ্জ, লুধুয়া ও রামগতি উপজেলার জনতাবাজার। এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। এ পর্যন্ত নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সড়ক ও জনপথের আঞ্চলিক অফিসসহ অসংখ্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনকবলিত রহিম মাঝি জানান, তার নিজের বাড়ি ভেঙেছে চারবার। গত বছরও তিনি তাদের নিজের বাড়িতে ছিলেন। এ বাড়িটাই তার একমাত্র শেষ সম্বল ছিল। এখন তার কিছুই নেই। সব কিছু হারিয়ে এখন অন্যের জমিতে ঘর বানিয়ে কোনো মতো জীবন বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। আর এ জায়গাটাও যদি ভেঙে যায় তাহলে সে পরিবার পরিজন নিয়ে কী করবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

ল²ীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, অস্বাভাবিক ডুবোচরের কারণে নদীর গভীরতা তীরের কাছাকাছি এসে পড়ে। যে কারণে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়ায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। তবে আপদকালীন প্রকল্পের আওতায় ভাঙন প্রতিরোধে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

 



 

Show all comments
  • ash ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২২ এএম says : 0
    BANGLADESHER MATI NOROM, AI BALU MATIR WPORE BLOCK BOSHIE BAD DILE KAJ HOBE NA, SHETA PROTI BOSOR E PROMAN HOCHE ! PANI WNNON PROTIMONTRIR WCHITH MALDIVES VROMON KORA, PARSHOBORTI DESH INDIAR FARAKKAR DU SIDER PAR KE KI VABE BAD DEWA HOYSE SHETA DEKHE ASHA. FARAKKAR DU SIDER TIRE TO SHEI 71-72 R E TIR SHONGROKHON KORE SILO, SHETA AKHONO TIKE ASE !! KINTU BANGLADESHER AI BLOCK SHONGSKRITI KE ANLO BUJLAM NA
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিস্তা-মেঘনা

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ