পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিআর মামলায় ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন মো. আলমগীর হোসেন। পরদিনই জ্বর। সন্দেহবশত করালেন করোনা টেস্ট। কোভিড-১৯ পজেটিভ রিপোর্ট আসে নিজের। একই রিপোর্ট আসে স্ত্রী, এক মেয়ে এবং ড্রাইভারেরও। আরেক মেয়ের টেস্ট করানো হয়নি বিধায় জানা যায়নি। আদালতে হাজিরা দেয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি জানান, পৌঁছেই আদালত ভবনের সিঁড়িতে পড়ে যান ঘন মানব জটের মধ্যে। পেছনের মানব স্রোত ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাকে নিয়ে যায় চার তলায়। ভাদ্রের গরমে ত্রাহি দশা। আইনজীবী-মানুষ-পুলিশে একাকার। করোনা মহামারিতে কোথায় এখানে ‘সামাজিক দূরত্ব’!
সরকার নির্দেশিত ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার আকুতিকেই যেন কটাক্ষ করছে আদালত ভবনের এ মানব জট। অধিকাংশের মুখেই মাস্কের বালাই নেই। যাদের মুখেই মাস্ক রয়েছে সেটিও নেমে এসেছে থুঁতুনিতে। মাস্ক একটা মুখে রাখতে হয় তাই রাখা! সামাজিক দূরত্ব, করোনা, মহামারি, সংক্রমণ, কোভিড-১৯ পজেটিভ, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কোয়ারেন্টিন, মৃত্যু এসব বিষয় যেন আদালতপাড়ায় অবান্তর। আতঙ্ক নিয়ে ধুরু ধুরু বক্ষে ‘হাজিরা’ দিয়ে বাসায় ফেরেন আলমগীর হোসেন। পরদিনই সত্যে পরিণত হলো তার আশঙ্কা। তিনি এখন সপরিবারে আক্রান্ত। একজন আলমগীর হোসেন শুধুই নন- আদালত অঙ্গনে এসে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন শত শত মানুষ। সশরীরে আদালতে আসায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামও। আক্রান্ত হয়েছেন তার মহুরী এবং তার স্ত্রী। এখন দু’জন দুইরুমে কোয়ারেন্টিনে আছেন। বিচারিক আদালত থেকে ‘ভার্চুয়াল’ তুলে দেয়ার পর করোনা আক্রান্তের হার এখন আর হিসাবের মধ্যে নেই। আদালত অঙ্গনে আসা বিচারপ্রার্থী, বিচারক, আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী, আদালত সহায়ক কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরাও এখন পড়েছে করোনা ঝুঁকিতে। নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার পর এ ঝুঁকি এখন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।
নিয়মিত আদালতের পাশাপাশি ভার্চুয়াল আদালতের কোনো অপশন নেই। ফলে প্রবল স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আদালতে আসতে হচ্ছে ভুক্তভোগী শ্রেণি পেশার মানুষকে। যে মানুষটি টানা ৭ মাস বাসায় এক প্রকার কোয়ারেন্টিনে ছিলেন- মামলার প্রয়োজনে তাকে হাজির হতে হচ্ছে আদালতে। দেশের প্রায় সব অফিস-আদালত-দফতরে ভার্চুয়াল সুবিধা সম্প্রসারিত হচ্ছে। অথচ আদালত ভার্চুয়াল সুবিধা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কতিপয় পেশাজীবীর দাবির প্রেক্ষিতে খুলে দেয়া হয়েছে নিয়মিত আদালত। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবন-মরণ প্রশ্ন যেন এখানে তুচ্ছ। আইন পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত পেশাজীবীদের জীবিকাই যেন বেশি গুরুত্ব পেল। করোনা সংক্রমণ রোধে যা ‘আত্মঘাতী’ বলে মনে করেন অনেকে।
ঢাকা বারের অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে ভার্চুয়াল-রেগুলার দুটোর অপশনই থাকতে পারত। যেমনটি আছে উচ্চ আদালতে। সেটি না থাকায় মামলা সংশ্লিষ্টদের সশরীরে আদালতে আসতে হচ্ছে। মানুষ করোনা ঝুঁকিতে নিপতিত হচ্ছেন। তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ একটি সার্কুলার জারি করেই যেন দায় সেরেছে। কিন্তু কেউ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করলে কি হবে, কে এটি প্রতিপালনে বাধ্য করবে- সেটি স্পষ্ট নয়। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, সেটিও দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর ইনকিলাবকে টেলিফোনে বলেন, আমার হাতে এ মুহূর্তে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই যে, আপনাকে কিছু বলতে পারব। এটুকু বলতে পারি, আমরা আদালতগুলোতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার জন্য সার্কুলার জারি করেছি। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকরা স্বাস্থ্য নির্দেশিকা নিশ্চিত করবেন। নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার পর আমরা এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকার আদালতপাড়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়মিত আদালত চালুর পর সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। অনেকেই করোনা আক্রান্তের খবর গোপন করে আদালতে আসছেন। তাদের কাছ থেকে বিচারপ্রার্থী এবং অন্যরা দ্রুতই সংক্রমিত হচ্ছেন। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসেন আলী খান হাসান বলেন, বারের পক্ষ থেকে আমরা কিছু বিধি-বিধান করেছি। মাস্ক ছাড়া কেউ আদালত অঙ্গনে প্রবেশ করতে পারবেন না। অবাঞ্ছিত ভিড় এড়াতে আইনজীবীদের আইডি কার্ড ঝোলানো বাধ্যতামূলক করেছি। টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। সাবানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা আছে। এর বেশি আমাদের কিই বা করার আছে? সরকারই তো সব ‘স্বাভাবিক’ করে দিয়েছে।
তিনি জানান, ঢাকা বারে ২৭ হাজার আইনজীবী। এরই মধ্যে ২৫ জনের বেশি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কত শত আক্রান্ত হয়েছেন তার হিসাব নেই। ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় বিচার কার্যক্রমে আইনজীবীরা অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এ ব্যবস্থাকে আরও ব্যাপকভিত্তিক এবং স্থায়ী রূপ না নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। ভার্চুয়াল পদ্ধতির বিপক্ষে আইনজীবীরাই আন্দোলনে নামেন। তাদের যুক্তি- না খেয়ে মরার চেয়ে, খেয়ে মরা ভালো। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। শুধু আইনজীবী কেন, বিচারক, বিচারপ্রার্থী,সব শ্রেণির মানুষই এখন গণহারে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। অসহায়ের মতো চেয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কিই বা করার আছে! এখানে জীবনের চেয়ে জীবিকা গুরুত্ব বেশি!
এদিকে আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন আদালতের ৪৪ জন বিচারক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ১৬৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট আক্রান্ত ২১১ জন। এদের মধ্যে একজন বিচারক ইন্তেকালও করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবী ইন্তেকাল করেছেন ৪৩ জনের বেশি।
সুপ্রিম কোর্ট বার সূত্র জানায়, সারাদেশের আদালত পরিচালিত সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অধীনে। করোনা সংক্রমণ ক্রমঃবিস্তারের প্রেক্ষাপটে বিধি সংশোধন করে সারা দেশে ভার্চুয়াল আদালত চালু করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে ভার্চুয়াল আদালতে সানন্দে গ্রহণ করেন তরুণ প্রজন্মের আইনজীবীরা। ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি করতে পারেন- এমন আইনজীবীদের কাছে মামলা নিয়ে ভিড় জমান বিচারপ্রার্থীরা। পক্ষান্তরে প্রযুক্তিনির্ভর এ বিচার পদ্ধতির প্রতি অনীহা দেখান সিনিয়র আইনজীবীরা। বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশই ওয়েব ক্যাম চালানো দূরে থাক- টাচ মোবাইলও চালাতে জানে না।
অনেক বিচারপ্রার্থী সিনিয়র আইনজীবীদের কাছ থেকে মামলার নথি ফেরত নিয়ে তরুণ আইনজীবীদের শরণাপন্ন হন। সরাসরি জীবিকায় টান পড়াতে দেশের আইনজীবী সমিতিগুলোকে ভার্চুয়াল আদালতের বিরুদ্ধে মাঠে নামান। সমিতিগুলো বক্তৃতা-বিবৃতি দেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের প্রতি আবেদন-নিবেদন জানান নিয়মিত আদালত খুলে দিতে। এক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সারা দেশে নিয়মিত আদালত খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগও অংশত নিয়মিত করা হয়। ফলে উচ্চ আদালতে ভার্চুয়াল বেঞ্চ এবং নিয়মিত আদালত দুটোর অপশনই রয়েছে।
এদিকে আদালত নিয়মিতকরণসহ সব কিছু খুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। ইনকিলাবকে তিনি বলেন, আদালতে মানব জট করোনা সংক্রমণের বড় কারণ হতে পারে। এটি আমাদের বাস্তব সমস্যা। এসব দেখভাল করার দায়িত্বে নিয়োজিত ভলান্টিয়ারদের সক্রিয় হতে হবে। আদালতে যারা উপস্থিত হচ্ছেন- সেই জনসাধারণ যেন স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বাধ্য হন- সরকারকে সেই মেকানিজম করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।