Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাজে যোগ দিচ্ছে শ্রমিক সচল অর্থনীতির চাকা

মধ্যপাড়া পাথর খনিতে উত্তোলন শুরু

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতির চাকা সচল হতে চলেছে। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে দেশের একমাত্র পাথর খনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানীতে (পাথর খনি) পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে। কাজে যোগ দিয়েছে বেকার হয়ে পড়া ৭’শ শ্রমিকের মধ্যে ৪’শ শ্রমিক। ২য় ও ৩য় শিফটে কাজ শুরু হলে বাকি ৩’শ শ্রমিক আগামি কয়েকদিনের মধ্যে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। পাথর বিক্রি আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। স্বস্তি ফিরে এসেছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানীর লিমিটেড সূত্রে জানান যায়, বাণিজ্যিকভাবে ২০০৭ সালে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে সে সময়ে গড়ে এক হাজার ৫’শ থেকে ৮’শ টন কয়লা উত্তোলন করা হলেও কিছুদিনের তা কমে আসে। পরে ১৭১.৮৬ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয় পাথর বেলারুশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) গত ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ৬ বছরের চুক্তিতে তারা পাথর উত্তোলন শুরু করে। যদিও চুক্তির ৬ বছরের মধ্যে প্রায় ৩ বছরই বিভিন্ন কারণে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকে। চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও আদালতের নির্দেশনা নিয়ে তারা পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখে। চলতি বছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত তারা ৩৯ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে। করোনার কারণে জিটিসি কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ায় প্রায় ৭’শ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে।

খনি’র একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মধ্যপাড়া পাথর খনির পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মাটির নিচ থেকে উত্তোলিত এই পাথর দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সড়ক ও জনপদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। সূত্রটির মতে, নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহবান করে। এর মধ্যে খনি ইয়ার্ডে থাকা পাথরের মজুদও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বেকার হয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে থাকে প্রায় ৭’শ শ্রমিকের পরিবার। শুধু ৭’শ নয় কয়লা উত্তোলন চালু থাকলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরো কয়েকশ পরিবার নির্ভরশীল হয়ে থাকে। সবকিছু বিবেচনায় রেখে সরকার তথা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন জিটিসি’র সাথে এক বছরের জন্য একটি সম্পুরক চুক্তি করে। এই এক বছরে জিটিসি মোট ৩ শিফটে ১১ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৩ শিফট চালুর তারিখ থেকে এই মেয়াদ কার্যকর হবে।

পাথর খনি এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, আগের চুক্তিকালীন সময়ের চেয়ে এবার জিটিসি পাথর উত্তোলনে অনেক সক্রিয়। ইতিমধ্যেই চুক্তির আওতায় গত ১৮ আগস্ট থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করে দিয়েছে। এর আগে বেকার হয়ে থাকা ৭’শ শ্রমিককে বিশেষ ব্যবস্থায় খনি কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় করোনা টেস্ট করায়। মোট ৭২৬ জন শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। করোনা শনাক্ত হওয়া শ্রমিকদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে করোনামুক্ত ৭০২ জন শ্রমিকের মধ্যে ৪’শ শ্রমিককে কাজে যোগ দেয়ায় জিটিসি। ২য় ও ৩য় শিফট চালু হলেই পর্যায়ক্রমে সকল শ্রমিক কাজে যোগদানের সুযোগ পাবে। ১ম শিফটে প্রতিদিন ২ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরদিকে প্রতিদিন বিক্রির গড় চাহিদা হচ্ছে ৫ হাজার মেট্রিক টন।

তবে ১ সেপ্টেম্বর এ রিপোর্ট লেখার সময় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ২য় শিফট চালুর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হবে। অল্প কিছুদিনের মধেই ৩য় শিফট চালু করবে বলে খনি কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছে। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং লিমিটেড তথা মধ্যপাড়া পাথর উত্তোলন শুরুর মাধ্যমে খেটে খাওয়া হাজারো শ্রমিকের পরিবারে অর্থনীতির সঙ্কট দূর হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ