Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

হাত বাড়ালেই মাদক

বিরলে মাদকের ভয়াবহতা

এম, এ কুদ্দুস, বিরল (দিনাজপুর) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

সীঁমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে বানের পানির মত অবৈধ ভাবে আসছে আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক। এমন অবস্থায় মাদকে ভাসছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন আদিবাসী পল্লীতে গড়ে উঠেছে চোলাই মদের শতাধিক কারখানা। অভিযোগের আঙ্গুল উঠছে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিসহ কতিপয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতাতেই চলছে এখানকার মাদকের কারবার।
করোনাকালীন সময়েও সীমান্তবর্তী হাট-বাজার, বিভিন্ন মোড় ও পাড়ায় পাড়ায় দিন-রাত বহিরাগতদের আনাগোনাসহ চলছে মাদকের অবাধ কেনাবেচা। এর সাথে জড়িত রয়েছে পুলিশের তথাকথিত সোর্সরাও। পুলিশ সোর্স মানি না দিয়ে মাদক কমিশন দেয়ার কথিত সোর্সরা কমিশনে পাওয়া মাদকদ্রব্য অবাধে বিক্রি করছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র হতে জানা গেছে। বিজিবি’র প্রতি রয়েছে একটু আলাদা অভিযোগ। সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ী অনেকের সাথে বিজিবি’র সখ্যতা রয়েছে। বিজিবি’র উপরে মাদক ও চোরাচালান বিষয়ে চাপ আসলে মাদক ব্যবসায়ীরা বিজিবিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ দেখানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য দিয়ে থাকে। তবে পুলিশ ও বিজিবি পৃথক পৃথক ভাবে এ অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে আগস্টের ২৩ তারিখ পর্যন্ত বিরল থানায় মাদক সংক্রান্ত ১৬৩ জনকে আসামি করে ৬৭টি মামলা রুজু করা হয়েছে। এসব মামলায় ২৫৩৫ বোতল ফেন্সিডিল, ১১২০ গ্রাম গাঁজা, ৪০ লিটার চোলাইমদ. ৭৭১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৭ পুরিয়া হেরোইন দেখানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মাদক সংক্রান্ত ১০৭ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১০৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাসহ ৮৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গোটা উপজেলায় প্রায় দেড় শতাধিক মাদক কারবারি রয়েছে। তালিকার বাইরে রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক আরোও মাদক কারবারি। অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
এখানকার তালিকাভ‚ক্ত মাদক কারবারিরা হলো, উপজেলার রাজুরিয়া বিহারীপাড়া গ্রামের বিনয় চন্দ্র রায়, ভাবকী গ্রামের আব্দুল আজিজ, ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের দুলাল, তেঘরা নারায়ণপুর গ্রামের ৫ মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম, একই গ্রামের অপর ৫ মামলার আসামি জুয়েল রানা , আনারুল আলী, মোসলেম উদ্দীন, কাঞ্চন নতুন পাড়া গ্রামের ৯ মামলার আসামি হামিদুল ইসলাম, তেঘরা নারায়নপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের ৫ মামলার আসামি আফসার আলী, তেঘরা মহেশপুর গ্রামের শহিদ, একই গ্রামের পায়েল, কাশিডাঙ্গা কান্দরপাড়া গ্রামের তাইফুর রহমান, নেহাল গ্রামের শংকর ঋষি , বটতলীর সন্তোষ, দারইল হাজিপাড়া গ্রামের রমজান আলী, রতনৈর নাড়াবাড়ী গ্রামের খালেদুর রহমান, আকটি গ্রামের মসলেম, গগনপুর গ্রামের মোক্তার হোসেন, একই গ্রামের তসলিমের পুত্র রব্বানী, রতনৈর গ্রামের মোজাহার আলী, নোনাগ্রামের ২ মামলার আসামি মহচেন, মমিনুল, একই গ্রামের নুর ইসলাম ও আব্দুস সালাম, আকর গ্রামের মমিনুল ইসলাম, চকবালা গ্রামের আজাহার আলী, ওকড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার, বিরল বাজার সুইপার পট্টির পান্না, মৃত: কৃষ্ণার স্ত্রী ১১ মামলার আসামি ফুলমতি বালা এবং একই এলাকার সাবুর স্ত্রী তারা মনি বালা বাসফোড়, পাইকপাড়া রেলস্টেশন এলাকার তছলিম উদ্দীন, বিরল ধজিরপাড়া এলাকার আল্লাম ওরফে আলম, শংকরপুর গ্রামের ফারুক, একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম, টেংরা হাজারী দুলোহরী গ্রামের ফারুক, রামপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সামেদ আলীর পুত্র নুর জামান, বৈরাগীপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম একই গ্রামের নয়ন আলম, ঠনঠনিয়া গ্রামের নাজমুল ইসলাম, দক্ষিণ রঘুনাথপুর বুড়ীর হাট গ্রামের ৫ মামলার আসামি শিমুল মিয়া, মৌচুষা ঠাকুরপাড়া গ্রামের তপন কুমার রায়, খোপড়া গ্রামের মহিদুল ইসলাম, পশ্চিম রামচন্দ্রপুর গ্রামের ৫ মামলার আসামি আইজুল ইসলাম, বালান্দোর শাহাপাড়া গ্রামের ৫ মামলার আসামি পলাশ, বালান্দোর ক্যাম্পপাড়া গ্রামের ২ মাদক মামলার আসামি নুরে আলম ওরফে হুরে আলম, ৫ মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম এবং ১ টি মাদক মামলার আসামি রায়হান, বালান্দোর মৌচুষা গ্রামের হেলাল চৌধুরী, বান্দইল গ্রামের ঘেরুর পুত্র ৬ মামলার আসামি মোজাম্মেল, একই গ্রামের ৪ মামলার আসামি সাদ্দাম, বেতুড়া বাচ্চাপাড়া গ্রামের জামিল হোসেন, দৈকতবাড়ী গ্রামের মোশারফ হোসেন মোশা, দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ আলাল , একই গ্রামের আসিফ ইকবাল, ভারাডাঙ্গী ভাটপাড়া গ্রামের ৭ মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন সাগর, আমুলিয়া গ্রামের আরমান আলী, লক্ষীজল গ্রামের জহিরুল ইসলাম, একই গ্রামের রেজাউল ইসলাম, উত্তর বহলা সাতাহার গ্রামের আইয়ুব আলী, বিস্তইড় দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ১টি মামলার আসামি মামুনুর রশিদ ওরফে সাদ্দাম ।
বজোড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের ফয়জার হোসেন, কাওছার আলী, একই গ্রামের ৩ মামলার আসামি মোকারম হোসেন লাউ, আফছার আলী ও আনছার আলী, বিজোড়া মোল্লাপাড়া গ্রামের মোরসেদুল ইসলাম সেল্টু, বনগাঁও গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূর ইসলাম ও আলমগীর হোসেন, কেতাব আলী এবং স্ত্রী মেহেনুর বেগম, জুম্মা পাড়ার হাবিবুর রহমান হব্বু, ধর্মপুর টিকরি পাড়া গ্রামের মাদকসহ বিভিন্ন ১৫টি মামলার আসামি আলম ওরফে বৈরাগী আলম ওরফে ছাদ আলম, কৈকুড়ি গ্রামের ফারুক, ধর্মজইন গ্রামের ৭টি চোরাচালান ও মাদক মামলার আসামি মোকারম হোসেন, একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম, ধর্মজইন কাড়োলিয়া পাড়ার মাদক চোরাচালানসহ ৪টি মামলার আসামি সালা উদ্দীন, একই গ্রামের আইয়ুব আলী, কাঠালিয়া পাড়ার ৫টি মাদক মামলার আসামি দুলাল হোসেন ওরফে দাতুয়া দুলাল, হাজ্বীপাড়ার পুত্র কবির হোসেন, আফজাল হোসেন, ধর্মজইন ভুটিয়াবন গ্রামের আব্দুর রহমান, ধর্মপুর জামকুড়ি গ্রামের কাউয়া দুলাল, ডাউয়া কুড়ির মাদক চোরাচালানসহ ৬টি মামলার আসামি শামিম, ইসলামপুর গ্রামের ২টি মাদক মামলার আসামি মমিনুল ইসলাম, কমলপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম, কামদেপুর গ্রামের জহিরুল হক, একই গ্রামের এসহাক আলীর পুত্র বাবুল, বামনগাঁও গ্রামের সাহেদ আলীর পুত্র ১টি মাদক মামলার আসামী আব্দুল আলিম, বিল্লা গ্রামের ২টি মাদক মামলার আসামী আলীম আলী, একই গ্রামের ৫টি মাদক ও চোরাচালান মামলার আসামি মিজান, দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের ইয়াকুব আলী ও হাচেন আলী, একই গ্রামের গনেশ চৌহান, মঙ্গলপুর বাজার এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান রয়েল, শিকারপুর রঘুনাথপুর গ্রামের মামুন, শিজগ্রামের কৃষ্ণ চন্দ্র, উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের এনামুল হক, একই গ্রামের আবেদ আলী, শিকারপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, আহসান আলী, অশনি ওরফে ঈশানী, বোর্ডহাট মোড় এলাকার বাবু , খোদ শীবপুর গ্রামের আনিছুর রহমান, ২টি মাদক মামলার আসামি রঘুদেবপুর কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের হুমায়ুন কবীর বাবু, একই গ্রামের মোজাফফর হোসেন, রাঙ্গণ গ্রামের বাংলা চন্দ্র, একই গ্রামের ১টি মাদক মামলার আসামি ফুর্তি রায়, বহবলদিঘী গ্রামের রঞ্জিত, জগতপুর গ্রামের নাসিম, রশিদ, শিবপুর গ্রামের টংক চন্দ্র, পশ্চিম কাজিপাড়া গ্রামের বেলাল হোসেন, বিলাইমারী গ্রামের রফিুকুল ইসলাম, একই গ্রামের আজিমুদ্দিনের জামাই সাগর, বরাহ নগর জয়নাল, মির্জাপুর গ্রামের এমাজ উদ্দীন, একই গ্রামের জিয়াউর রহমান, দক্ষিণ জগতপুর গ্রামের মাদক চোরাচালানসহ ৪টি মামলার আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন, সারাঙ্গাই ক্যাম্পপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলাম, একই গ্রামের গোলাপ, ৩টি মাদক মামলার আসামি শাহাজালাল, সারাঙ্গাই গ্রামের মাদকসহ ৫টি মামলার আসামি মিজান ওরফে নাড়িয়া মিজা , সাদেকুর রহমান, রবিউল ইসলাম, সারাঙ্গাই পলাশবাড়ী গ্রামের ২টি মাদক মামলার আসামি দুলাল হোসেন, পলাশবাড়ী গ্রামের ৫টি মাদক মামলার আসামি শফিকুল ইসলাম, সারাঙ্গাই নুনিয়াপাড়া গ্রামের সোরওয়ার হোসেন, দক্ষিণবাড়ী গ্রামের মিজানুর রহমান, ধুলাতৈড় গ্রামের মাদক চোরাচালানসহ ৮ মামলার আসামি আবু তাহের এবং একই গ্রামের আব্দুর রউফ মুরগী ।
এ ব্যাপারে বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ নাসিম হাবিব জানান, আমরা কোন সোর্সকে সোর্স মানি হিসাবে মাদকদ্রব্য দেই না। পুলিশের সোর্স দাবি করে কেউ মাদক কারবার করলে খবর পাওয়া মাত্র তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদকের ব্যপারে আমাদের কোন ছাড় নেই। বিরল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দ্রæত প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হবে এবং কোন জনপ্রতিনিধি বা অসাধুব্যাক্তি মাদকের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
বিরল উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিনাত রহমান জানান, বিরলে যোগদানের পর থেকেই দেখছি এখানে মাদকের প্রবণতা একটু বেশি। শিগগিরই টাক্সফোর্স গঠন করে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ