Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমলগঞ্জে দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষের মামলা

ইউপি চেয়ারম্যান, শ্রমিক নেতাসহ ১৩ শ্রমিকের নাম উল্লেখ

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২০, ৭:১৮ পিএম

টানা ২৭ দিন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সীমান্তবর্তী দলই চা বাগান বন্ধ থাকাবস্থায় গত শনিবার (২২ আগস্ট) রাতে এক ইউপি চেয়ারম্যান, চা শ্রমিক নেতাসহ ১৩ জন চা শ্রমিকের নাম উল্লেখ করে মারপিট, গাড়ি ভাঙ্গচুর ও টাকা ছিনাইয়ের অভিযোগে থানায় মামলা করা হয়। দলই চা বাগান কোম্পানীর এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান বাদি হয়ে কমলগঞ্জ থানায় এ মামলা করেছেন। মামলার আসামীরা হচ্ছেন- মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, শমশেরনগর চা বাগানের চা যুবনেতা মোহন রবিদাস, মাসিক চা মজদুর সম্পাদক ও শমশেরনগর ইউপি সদস্য চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন, শিব নারায়ণ শীল (৫৫), তুলশী দাস মাদ্রাজী (৫০), পিংকা কালোয়ার (৫৫), অমৃত কুমার পাশী (৪৬), মো. ফরিদ আলী (৪৫), মো. ইরাজ আলী (২৭), লছমী ভর (৬০), সুদীপ্ত ভর (২৬),ভর (৬০),অজিৎ পাশী (২৫), দিপেন ভর (২৫) প্রমুখ। ইউপি চেয়ারম্যানসহ চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নামে থানায় মামলা হওয়ায় দলই চা বাগানসহ বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মনে করেন, এখন যাতে অনাহারে থাকা চা শ্রমিকদের অর্থ ও খাদ্য সহায়তা না দেওয়া হয় সেজন্য বাগান কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে মামলা সাজিয়েছেন। অথচ ঘটনার পর লাঞ্চিত নারী চা শ্রমিরা কমলগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলেও থানা কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ গ্রহন করেনি।
দলই চা বাগানের সহকারি-মহাব্যবস্থাপক খালেদ মঞ্জুর খান মামলায় উল্লেখ করেন, মামলার ১ নং আসামী মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, ২নং আসামী শমশেরনগর চা বাগানের চা যুবনেতা মোহন রবিদাস ও ১১ নং আসামী মাসিক চা মজদুর সম্পাদক ও শমশেরনগর ইউপি সদস্য চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীনের উস্কানীতে দলই চা বাগানের বাকী আসামীগন চা বাগান ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে নির্ধারিত মজুরীর চেয়ে অধিক মজুরি বে-আইনীভাবে আদায়ের স্বার্থে বেশ কিছুদিন যাবৎ পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। এর পরিপেক্ষিতে গত ২৯ জুন সকল আসামীগণসহ উশৃঙ্খল শ্রমিকগণ বাগানে অবৈধ বে-আইনী ধর্মঘট করে ব্যবস্থাপককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে জোরপূর্বক বের করে দেয়। এ প্রক্ষিতে দলই চা বাগানের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রশাসনও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মধ্যস্থতায় ধলই চা বাগানে স্বাভাবিক কার্যক্রম ১৯ আগস্ট থেকে চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
দীর্ঘদিন পর দলই চা বাগানের উৎপাদন কার্যক্রম পূণরায় সচল হওয়ায় তিনি (এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান) কোম্পানীর সহকারী- মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ১৯ আগস্ট সকাল ১১টায় তদারকি কাজে দলই চা বাগানে গিয়েছিলেন। এসময় চা বাগানের ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপকসহ বাগানের সকল কর্মচারীর জুলাই মাসের বেতন ও মজুরি পরিশোধের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা নিয়ে যান। এসময় সকল আসামীরা লাঠি, লোহার রড নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে কোম্পানীর জীপ গাড়ির (ঢাকা মেট্রো- ড-০৫-০০১৫) গতিরোধ করে। এ সময় ১ নং আসামীর হুকুমে বাকি আসামীরা গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গচুর করে। আসামীরা তাকে জোরপূর্বক টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারপিট করে জখম করে। আসামীরা গাড়িতে ব্যাগের ভিতর রাখা ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আসামীরা একটি নোহা মাইক্রোবাসে করে পালিয়ে যায়। পরে তিনিসহ আহতরা মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেন। ফলে ঘটনার ২ দিন পর শনিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার ১ নম্বর আসামী মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ১৯ আগস্ট ধলই চা বাগানে ব্যবস্থাপক ও সহকারি মহা-ব্যবস্থাপক অবরুদ্ধ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির নির্দেশে তিনি দলই চা বাগানে গিয়ে বিক্ষোব্দ চা শ্রমিকদের বুঝিয়ে কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশসহ সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তাদের উদ্ধার করেছিলেন। এখন তাকে চা বাগান কোম্পানী মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে ১নম্বর আসামী করেছে। মামলার ২ নম্বর আসামী চা যুব নেতা মোহন রবিদাস ও ১১ নম্বর আসামী চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন বলেন, ঘটনার দিন সকালে দলই চা বাগান কোম্পানীর সহকারি মহা ব্যবস্থাপক এ মামলার বাদি খালেদ মঞ্জুর খান এ চা বাগানের দুই নারী চা শ্রমিককে লাঞ্চিত করায় বিক্ষোব্দ শ্রমিকরা ইট পাটকেল মেরে জিপ গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গেছে। এর চেয়ে বেশী কোন ঘটনা ঘটেনি। এখন যাতে অনাহারে থাকা চা শ্রমিকদের অর্থ ও খাদ্য সহায়তা না দেওয়া হয় সেজন্য ঘটনার ২ দিন পর পরিকল্পিতভাবে মামলা সাজিয়েছেন। অথচ ঘটনার পর লাঞ্চিত নারী চা শ্রমিরা কমলগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলেও থানা কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ গ্রহন করেনি।
এ সম্পর্কে জানতে চেয়ে মামলার বাদি ও দলই চা বাগামন কোম্পানীর এজিএম খালেদ মঞ্জুর খানের সাথে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তবে কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে কমলগঞ্জ থানার এসআই সিরাজুল ইসলামকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ