Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রামগতি-কমলনগরে আশ্রয়কেন্দ্র নেই, দুর্যোগ ঝুঁকিতে উপকূলের ৩ লাখ মানুষের বসবাস

রামগতি/কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২০, ১১:৫৬ এএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর-রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীতীরবর্তী ১২টি ইউনিয়নের তিন লাখ মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যাসহ যে কোনো দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর মেঘনানদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে উপকূলীয় এলাকা রামগতি- কমলনগরের তিন লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকেই খাদ্য সংকট ও অনাহারে দিনাতিপাত করছে।নদীর তীরবর্তী এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় দুই উপজেলার নদী পাড়ের প্রায় ৩ লাখ মানুষ চরম আতংকের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে বেড়ীবাঁধ না থাকায় নদীর জোয়ারে প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে এ সব এলাকা।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) সূত্রে জানা যায়, কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, চরমার্টিন, চরলরেন্স, চরফলকন ও পাটারীরহাট এবং রামগতি উপজেলার চরআলেকজান্ডার, চরআব্দুল্যাহ, চরআলগী, চররমিজ, বড়খেরী, চরগাজীসহ ১২টি ইউনিয়ন এবং রামগতি পৌরসভা মেঘনার তীরে অবস্থিত। যার মধ্যে কমলনগর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী এলাকায় এক লাখ এবং রামগতি উপজেলার একটি পৌরসভার ও ছয়টি ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী এলাকায় প্রায় দুই লাখ মানুষ বসবাস করছে। এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষের জন্য মাত্র ৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এসব দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষগুলো।

কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছায়েফ উল্যাহ জানান, বিচ্ছিন্ন 'দ্বীপচর' চর শামচ্ছুদ্দিন, তালতলী, মতিরহাট ও নাছিরগঞ্জ গ্রাম নিয়ে গঠিত তার ইউনিয়নে প্রায় ২৭ হাজার মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এ মানুষগুলোর নিরাপত্তায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ নেই।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির কমলনগর উপজেলা টিম লিডার সামছুদ্দোহা খোকন জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে অতি ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলার চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, চরফলকন ও পাটারীরহাট ইউনিয়নের মেঘনা তীরের ৮০ হাজার মানুষের দুর্যোগকালীন আশ্রয়ের জন্য দেড়শ' আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন। কিন্তু এখানে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে মাত্র চারটি। রামগতি উপজেলার চরআব্দুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের চরগজারিয়া ও তেলিরচরে ২০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চরগুলোর চারপাশে কোনো বেড়িবাঁধ এবং আশ্রয়কেন্দ্র নেই।

রামগতি পৌরসভার মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু বলেন,মেঘনার ভাঙন রোধে তীর রক্ষা প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বাকি এলাকা উন্মুক্ত থাকায় জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি থেকেই গেল।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) রামগতি উপজেলার টিম লিডার মাইন উদ্দিন খোকন জানান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব এলাকায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এসব দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় যে পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র থাকার কথা,তা এখনও হয়নি। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এখানকার মানুষ।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান,কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মেঘনার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের নতুন ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে দুই উপজেলার মেঘনার তীরে ব্লকবাঁধ দেওয়ার পাশাপাশি ৩১ কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধও নির্মাণ করা হবে।

এব্যাপারে স্হানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান জানান, মেঘনার তীর রক্ষা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের অনুমোদনের ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ